একাত্তরে বাংলাদেশে সংঘটিত পাকিস্তানিদের জেনোসাইডের প্রধান সহযোগী ছিল জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র সংঘ। ইসলামী ছাত্র সংঘ ছিল জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন, এবং এই সংগঠনটির বর্তমান নাম ইসলামী ছাত্রশিবির। একাত্তরে বাংলাদেশে চালিত জেনোসাইডের প্রতিটি রক্তবিন্দুতে জড়িত এই জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র সংঘ। এই সংগঠনগুলোর নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা ছিল রাজাকার, আল বদর, আল শামস, শান্তিবাহিনীর নানা স্তরের সদস্য।
জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি ভুলের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এই দলটি পাকিস্তান সৃষ্টির বিরোধিতা করেছিল যেমন, তেমনিভাবে বিরোধিতা করেছিল বাংলাদেশ সৃষ্টিরও। পাকিস্তান সৃষ্টিরন বিরোধিতায় জেনোসাইডের মতো ঘটনার সংঘটন না হলেও বাংলাদেশ সৃষ্টির বিরোধিতায় তারা জেনোসাইডের ছিল প্রত্যক্ষ অংশীদার, এবং দায়ী।
বাংলাদেশে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের যে বিচার সম্পন্ন হয়েছিল, তার প্রতিটি বিচারে ওঠে এসেছে জামায়াতের দলীয় সম্পর্ক। জামায়াত ও ইসলামী ছাত্র সংঘ দলীয় সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের মানুষদের হত্যায় পাকিস্তানিদের সহায়তা করেছিল। এই হিসেবে বাংলাদেশে তাদের রাজনীতি করার অধিকার থাকার কথা নয়। এবং তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার গণদাবি দীর্ঘদিন উপেক্ষা করেছিল সবগুলো সরকার।
এ বছরের আগস্টের ৫ তারিখে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে তড়িগড়ি করে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করা হলেও এটা আরও আগেই করা উচিত ছিল। সময়ের গান সময়ে না গাওয়ার ফল ভোগ করছি আমরা।
আগস্টে বাংলাদেশের ক্ষমতা দখল করে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস জামায়াতে ইসলামীর নিষিদ্ধ করার সরকারি আদেশ প্রত্যাহার করে দেন। ফলে দেশবিরোধী এই রাজনৈতিক দলটি ফের বাংলাদেশে প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছে। মুহাম্মদ ইউনূস একাত্তরের ত্রিশ লাখ শহিদের সঙ্গে বেইমানি করে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাতে এই দেশ তাকে কোনোদিনও ক্ষমা করবে না।
বর্তমানে বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের রেজিম চলছে। ইউনূস রেজিমে জামায়াতে ইসলামী এখন বিএনপির চাইতেও বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। মুহাম্মদ ইউনূস নিজেই দেশবিরোধী শক্তির এজেন্ট হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে আশকারা দিচ্ছেন। তবে বাংলাদেশের মানুষের কাছে জামায়াতের বিশ্বাসযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা একেবারে নেই, মানুষ জামায়াতের দলীয় আদর্শকে মোটেও পছন্দ করে না বলে জামায়াতকে ক্ষমতায় বসানোর চক্রান্ত সফল হবে বলে মনে হয় না।
ইউনূস রেজিমে জামায়াতকে অত্যধিক গুরুত্ব দেওয়া হলেও এর ফল ভালো না হওয়ার কারণ মূলত জামায়াত ইসলামী ভাবাদর্শের রাজনীতি করে বলে দাবি করলেও দেশের অন্যান্য ধর্মীয় রাজনৈতিক দল ও সংগঠন এটা বিশ্বাস করে না। জামায়াতের সাথে অপরাপর সকল দলের আক্বিদাগত দূরত্ব এখানে প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে।
বাংলাদেশের ধর্মীয় দলগুলো নানা নামে বিভক্ত। ইউনূস রেজিমে নারী কেলেঙ্কারিতে বিতর্কিত মাওলানা মামুনুল হককে দিয়ে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা চলছে। তবে এখন পর্যন্ত খবর হচ্ছে ধর্মীয় নেতারা সকলের সঙ্গে হলেও জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।