যশোরে চিনি মজুদের অভিযোগে ১৫ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলা
আমিনুর রহমান মামুন
সিন্ডিকেট গঠন এবং চিনি মজুদ করে কৃত্রিম সঙ্কট ও মূল্য বৃদ্ধির অভিযোগে যশোরের প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র নওয়াপাড়ার শীর্ষ ২ আমদানীকারক জয়েন্ট ট্রেডিংকর্পোরেশন এবং শেখ ব্রাদার্সসহ ১৫ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভয়নগর থানায় বিশেষ মতা আইনে মামলা হওয়ার পর আসামীরা আত্মগোপন করেছে। যশোর, খুলনা এবং ঢাকায় রাতভর অভিযান চালিয়েও র্যাব-পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি। বৃহস্পতিবার রাতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে যশোরের বাণিজ্য কর্মকর্তা সুজাত হোসেন খান এ মামলা করেন। তবে তার আগেই আসামীরা খবর পেয়ে যাওয়ায় তারা আত্মগোপনে চলে যান।
চিনি মজুদ করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করার অভিযোগে ২৬ সেপ্টেম্বর যশোর জেলা প্রশাসনের সহায়তায় জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই র্যাব-পুলিশ নিয়ে অভিযান চালায় শিল্প শহর নওয়াপাড়ায়। এসময় তারা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান জয়েন্ট ট্রেডিং ও শেখ ব্রাদার্সের ৪ টি গোডাউনে ৭৪ হাজার ৩৮০ বস্তা চিনি পায়। যার বাজার মূল্য ১৬ কোটি টাকা। ব্যবসায়ীরা ঐ চিনির সিংহ ভাগ বিক্রিত বলে দাবি করে। তবে তাদের বক্তব্য কতটুকু সঠিখ তা যাচাই করার জন্য যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সেফিনা বেগমকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। তদন্তকালে কমিটি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে চিনি মজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির প্রমান পায়। এরপর গতবুধবার বিকালে কমিটি জেলা প্রশাসক বরাবর তাদের রিপোর্ট পেশ করে। রিপোর্টে নওয়াপাড়ার প্রধান ২ চিনি আমদানীকারক মেসার্স জয়েন্ট ট্রেডিং এবং শেখ ব্রাদার্সের আমদানী লাইসেন্স স্থগিতসহ তাদের ১০ জন সহযোগী ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন ছাড়াও মোট ১৪ দফা সুপারিশ পেশ করা হয়। জেলা প্রশাসক মহিবুল হক রাতেই তদন্ত রিপোর্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেন। এরপর বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ৫ আমাদনী কারক এবং তাদের সহযোগী ১৯ ডিও ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দেয়া হয়। নির্দেশ পাওয়ার পর যশোরের বাজার কর্মকর্তা সুজাত হোসেন খান বৃহস্পতিবার রাতে অভয়নগর থানায় ২ আমদানীকারকের বিরুদ্ধে বিশেষ মতা আইনে পৃথক ২ টি মামলা দায়ের করেন। আসামীরা হচ্ছেন, জয়েন্ট ট্রেডিং কর্পোরেশনের ৩ মালিক আনিসুর রহমান বড়, আনিসুর রহমান ছোট ও আব্দুল ওহাব এবং শেখ ব্রাদার্সের ৩ মালিক হাফিজুর রহমান বাবু, রফিুকল ইসলাম ও শফিয়ার রহমান। ডিও ব্যবসায়ীদের মধ্যে যাদের আসামী করা হয়েছে তারা হলেন, খুলনার কালিবাড়ির বৈশাখী এন্টার প্রাইজের মধুসূদন সাহা, আশা এন্টারপ্রাইজের অলোক কুন্ডু, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের শাহীন ট্রেডার্সের সরোয়ার হোসেন, যশোরের শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়ার আব্দুল ওয়াদুদ, খুলনার দৌলতপুরের মধুসূদন সাহা, নওয়াপাড়ার সাজিদ ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনালের রাজু আহমেদ, খুলনার বাগদাদ ট্রোডিংয়ের আমিনুদ্দিন ও খুলনার বাগদাদ ট্রেডিংয়ের চিত্তরঞ্জন কুণ্ডু। মামলা দায়েরের পর আসামীরা গা ঢাকা দিয়েছে। অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, র্যাব-পুলিশ আসামীদের ধরার জন্য যশোর, খুলনা এবং ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে কাউকে আটক করতে পারেনি। তবে চেষ্টা চলছে।
মামলার এজাহারে বলাহয়েছে, আমদানী কারকরা ডিও এব্যবসায়ীদের যোগ সাজসে ৬ আগস্ট থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মূল্যবৃদ্ধি ঘটিয়ে অধিক মুনাফা অর্জন করেছেন।
এদিকে গতকাল অভয়নগর উপজেলার নির্বাহি কর্মকর্তা শাহনেওয়াজ তালুকদারকে বদলী করা হয়েছে। চিনি মজুদের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটিকে সহায়তা না করার কারণে তাকে বদলী করা হয়েছে বলে যশোরে প্রচার রয়েছে। তবে যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, তার বদলী হয়েছে রুটিন মাফিক। এর সাথে চিনি মজুদ সংক্রান্ত বিষয় জড়িত নয়। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রশাসনের একটি সুত্র জানায়, অভয়নগরের নির্বাহি কর্মকর্তা শাহনেওয়াজ তালুকদার তদন্ত কমিটিকে ভাল ভাবে সহযোগিতা করেননি। এ জন্য তদন্ত কমিটি তার উপর অসন্তুষ্ঠ ছিল। তার হাব-ভাব দেখে তদন্তকালে এক কর্মকর্তা তাকে কান্ত দেখাচ্ছে বলে কৌশলে তাকে বাসায় চলে যেতে বলেন। এদিকে গতকাল বিকালে শাহনেওয়াজ খানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বদলীর কথা স্বীকার করে বলেন, তাকে রুটিন বদলী করা হচ্ছে। তবে অর্ডার এখনো পাননি। তাকে জয়পুর হাটে বদলী করা হয়েছে। জয়পুরহাট তার নিজের জেলা। এ জন্য ঐ বদলী আদেশও বাতিল হবে। সর্বশেষ তাকে কোথায় বদলী করা হবে তা তিনি নিশ্চিত নন। শাহনেওয়াজ তালুকদারের স্থানে যশোরের এনডিসি জাহিদ হোসেনকে বদলী করা হয়েছে । #
আমিনুর রহমান মামুন
যশোর।
তাং-০২.১০.০৯