somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হুমায়ূন আহমেদ হওয়া কঠিন, আর হুমায়ুন আজাদ হওয়া ঝুঁকিপূর্ণও

২৭ শে জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ- এ কথা অস্বীকারের সুযোগ নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে একসময় পুরোপুরি সাহিত্যে ডুবে গেলেন। গল্প-উপন্যাস লিখে গগনচুম্বী জনপ্রিয়তা পেলেন। নাটক-সিনেমাও বানাতে লাগলেন। যার যা পছন্দ আর কী। আমারও ইচ্ছে একসময় শুধু সাহিত্য, ভ্রমণ- এসব নিয়ে পড়ে থাকব। বাকিটা পরে দেখা যাবে।

যাহোক, হুমায়ূন আহমেদ কিন্তু সব শ্রেণির মানুষের কাছেই গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাপা, জামায়াতসহ আরও যত রাজনৈতিক দল আছে, তাদের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বিরাট অংশ তাকে দারুণ পছন্দ করে। এমনকি তার ইতিহাস আশ্রয়ী গল্প-উপন্যাসকে সত্য ইতিহাস বলে বিশ্বাসও করে। অথচ তার সহোদর জাফর ইকবাল আওয়ামী লীগ ঘেঁষা হওয়ায় একটা শ্রেণির কাছে নিন্দনীয়। তিনি কেন যুদ্ধে যাননি, এ নিয়েও চর্চা আছে অনেক। যারা দেশের স্বাধীনতাই চায়নি, তারাও জাফর ইকবালের পরিণত বয়সে যুদ্ধে না যাওয়ায় নাখোশ।

এই যে হুমায়ুন আহমেদ এত পছন্দের মানুষ রইলেন। এর নেপথ্যে কারণ কী? পাঠকদের অন্তরে ঢুকে গেছেন; এটাই কি একমাত্র কারণ? মনে হয় না। আমার ধারণা এর কারণ উনার রাজনীতি বিমুখতা। উনি আওয়ামী ঘেঁষা হলে বিএনপি-জামায়াতিরা অপছন্দ করত আর বিএনপি-জামায়াত ঘেঁষা হলে আওয়ামী লীগ অপছন্দ করত। মধ্যপন্থি হওয়ায় দুকূলই আছে উনার। এই প্রবণতা আমার মধ্যেও ঢুকে গেছে ভালোভাবে।

আমি মোটামুটি নিশ্চিত এ দেশে কোনো ভদ্রলোক রাজনীতি করে না, পুলিশে চাকরি করে না। করলেও একসময় খারাপ হয়ে যায়। মধ্যপন্থি থেকে গা বাঁচিয়ে চলতে হবে। এসব কাদায় নিজেকে মাখাতে চাননি বলেই হয়তো হুমায়ূন আহমেদ রাজনীতি এড়িয়ে চলতেন। আবার এমনও হতে পারে কোনো একটা পক্ষ নিলে এত পাঠক পেতেন না। যদিও পক্ষ নিলে ওই পক্ষ ক্ষমতায় গেলে বড় পদ বাগিয়ে নিতে পারতেন।

এ দিকে হুমায়ুন আজাদ কিন্তু হুমায়ূন আহমেদের থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করে শেষ পর্যন্ত এ পেশায়ই ছিলেন এবং সাহিত্য চর্চা করে গেছেন।

তিনি চাঁছাছোলা স্বভাবের ছিলেন। যা বিশ্বাস করতেন, তাই বলতেন; তাই লিখতেন। এ জন্য দেখা গেছে মৌলবাদীদের রোষের শিকার হয়েছেন। মৃত্যুও হয়েছে মৌলবাদীদের হামলায় আহত হয়ে। উনার নিন্দুকের সংখ্যাই বেশি।

যা বিশ্বাস করা, তাই মুখের ওপর বলা- এমন স্বভাবের মানুষ এখন পাওয়া দুষ্কর। স্রোতের বিপরীতে হাঁটা মানুষ নেই বললেই চলে। আমরা এমন লোক দেখি নিজে সরকারি প্লট বাগিয়ে নিয়েছেন, অথচ অন্য কেউ নিতে চাইলে সমালোচনা করেন। তোষামোদির সমালোচনা করেন সবসময় কিন্তু নিজে উপদেষ্টা পদ পাওয়ার জন্য চিঠি লেখেন। একজন বিদেশ থেকে দেশে এসে তরুণ উপদেষ্টাদের সাথে এমন করে ছবি তুলে, মনে হয় পা ছুঁয়ে কদমবুসি করবে।

নিজে অন্যের তোষামোদি করবে, দালালি করবে কোনো সমস্যা নেই, অথচ অন্য কেউ সামান্য ভালোমন্দ বললে তাকে দালাল ট্যাগ দেয়। নিজে কোনোদিন ধর্মের আগেপিছে নেই, অথচ অন্যকে জাহান্নামি ঘোষণা করে।

হুমায়ূন আহমেদ আর হুমায়ুন আজাদ- এই দুইজনের আদর্শ নিয়ে ভাবি মাঝেমধ্যে। স্পষ্টত দেখতে পাই হুমায়ূন আহমেদ হওয়া অনেক কঠিন। আর হুমায়ুন আজাদ হওয়া কঠিন তো বটেই, ঝুঁকিপূর্ণ বটে। ঘনিষ্ঠ বন্ধু ভুলভাল কিছু বললেও আমরা সামনাসামনি সমালোচনা করতে পারি না (যদিও গণতন্ত্র-বাকস্বাধীনতা নিয়ে বেজায়গায় উপদেশবর্ষণ করি)। আর যদি করিও, নিজের বাড়া ভাতে ছাই দিলে তখন করি। আমাদের পয়সা দিয়ে কিনে নেওয়া খুব সহজ।

ছবি: সংগৃহীত
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১২:১২
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সামনে বিপুল, বিশাল চ্যালেঞ্জঃ মোকাবেলায় কতটুকু সক্ষম বিএনপি?

লিখেছেন শেহজাদ আমান, ১৩ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:৪৯



১. ভুল রাজনৈতিক বিশ্লেষণ, দূরদর্শিতার অভাব

বিএনপি বাংলাদেরশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। লোকবল ও জনপ্রিয়তায় তাঁর ধারেকাছেও নেই অন্যকোনো রাজনৈতিক দল। মধ্যপন্থী গণতান্ত্রিক ধারায় আছে বলেই বাংলাদেশের মধপন্থী ও উদারপন্থী... ...বাকিটুকু পড়ুন

চিঠি।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৩ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ৯:৩০



চিঠি: এক হারিয়ে যাওয়া অনুভূতির নাম

চিঠি—শুধু একটুকরো কাগজ নয়, এটি আবেগের স্পর্শ, অপেক্ষার মধুরতা, ভালোবাসার নিঃশব্দ উচ্চারণ। এক সময় মানুষের ভাব বিনিময়ের প্রধান মাধ্যম ছিল এই চিঠি। স্বামী লিখতেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ডিফেন্স গ্যালারী Defence gallery

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৩ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ১০:০১

মাগুরায় নির্যাতিত শিশুটির মরদেহ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে হেলিকপ্টার যোগে নিয়ে যাওয়া হলো নিজ বাড়িতে
ঢাকা ১৩ মার্চ ২০২৫ (বৃহস্পতিবার): মাগুরায় নির্যাতিত শিশুটি আজ ১৩ মার্চ ২০২৫ তারিখ দুপুর ০১:০০ টায় সম্মিলিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমা করবেন আরেফিন সিদ্দিক স্যার..

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৪ ই মার্চ, ২০২৫ ভোর ৪:৩৭


আরেফিন সিদ্দিক স্যারের লাশটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে দিচ্ছে না। ক্যাম্পাসের সাথেই সংযুক্ত হাসপাতালের সামনে অ্যাম্বুলেন্সে লাশ রাখা। শহীদ মিনারেও শেষ শ্রদ্ধা জানাতে দেবে না, ঢাবির কেন্দ্রীয় মসজিদে হবে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাথর চোখের কান্না- ৩

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৪ ই মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:৪১

অন্ধকারের ভাবনা.....

চোখের সমস্যার জন্য নানাবিধ টেস্ট করিয়েছি। যার মধ্যে অন্যতম Ophthalmoscopy, Funduscopy, Optic fundus, OCT (Optical Coherence Tomography এছাড়াও যেহেতু মাথায় যন্ত্রণা থাকে সেজন্য CT Scan এবং MRI করতে হয়েছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×