সম্প্রতি বিখ্যাত মুষ্ঠিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী প্রয়াত হয়েছেন । তাঁর মৃত্যুতে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মত আমাদের দেশের মানুষও শোকাহত হয়েছেন । পথে-ঘাটে, ফেসবুক-ব্লগে সর্বত্রই তাঁকে নিয়ে বিস্তর অালাপ-আলোচনা হলো । এত এত আলোচনার রহস্য কী? তিনি মুষ্ঠিযোদ্ধা ছিলেন এ কারণ শুধু? নাকি অন্য কোন কারণ আছে? সম্প্রতি মনোহর আইচ নামের একজন বিখ্যাত বডি বিল্ডারও তো মারা গেছেন, কই তাঁকে নিয়ে তো এত শোকগাথা রচিত হয়নি! মোহাম্মদ আলী খৃষ্ট ধর্ম ছেড়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন । এজন্য আমেরিকা তাঁকে ফেলে দেয়নি (অবশ্য ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে অস্বীকার করায় তাঁর পদক কেড়ে নেওয়া হয়েছিলো) । তিনি যদি বাংলাদেশে জন্মাতেন, ইসলাম ধর্ম ছেড়ে খৃষ্ট ধর্ম গ্রহণ করতেন; তাহলে কী হতো? এত এত আলাপ-অালোচনা হতো? লোকজন এত শ্রদ্ধা জানাতো (জনৈক মুক্তিযোদ্ধা ইসলামধর্ম ত্যাগ করে খৃষ্ট ধর্ম গ্রহণ করায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়; এই ইতিহাস কিন্তু বিস্মৃত হয়ে যায়নি ।)? কেবলমাত্র ধর্মীয় পরিচয়ের কারণেই কি আলীর প্রশস্তি গাওয়া হচ্ছে? এতে করে কি তাঁর যোগ্যতাকে অবমূল্যায়ন করা হচ্ছেনা?
সারাজীবনই অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন কবি নজরুল । ধর্মীয় গোঁড়ামির উর্ধ্বে উঠে গিয়েছিলেন তিনি । স্বাধীনতার পর তাঁকে এদেশে নিয়ে আসা হলো, জাতীয় কবি ঘোষণা করা হলো । আজন্ম দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত কবির অভাব দূর হলো বটে, কিন্তু সাথে জুটলো ইসলামী কবির তকমা । পরবর্তী সরকারগুলোর সময় নজরুল পুুরোপুরি ইসলামি কবি । মজার ব্যাপার হচ্ছে নজরুলের শ্যামা সঙ্গীতই ইসলামিক গজলের চেয়ে অনেক বেশি, অন্যান্য লেখা তো আছেই । যারা তাকে একসময় কাফের আখ্যা দিয়েছিলো, তাঁর বিরুদ্ধে ফতুয়া দিয়েছিলো; ইসলামী কবি হিসেবে তারাই জোর প্রচারণা চালালো ।
একজন মানুষকে মূল্যায়ন করতে হয় তার কাজ দিয়ে, ব্যক্তিজীবন নিয়ে নয় । মোহাম্মদ আলী কোন ধর্মের ছিলেন, নজরুল কোন ধর্মের ছিলেন; এসব বিষয় বিবেচনা করা মানে তাঁদের প্রতি অবিচার করা, তাঁদের হেয় করা ।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৫:১৬