সুমাইয়া,
কেমন আছো তুমি? নিশ্চয়ই খুব ভালো? আমি মোটেই ভালো নেই। তোমার কথাই মনে পড়ে অহর্নিশ। যে কথা মুখে বলতে পারি না, সে কথাই লিখে যাই সঙ্গোপনে।
কাওসারকে কি তুমি চিনতে? মরচী গ্রামে বাড়ি? তোমার বড়ো বোনের বন্ধু শারফিনের সাথে তোমাদের বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিল। ওর সাথে কি তোমার কোনো সম্পর্ক ছিল? খুব জানতে ইচ্ছে করে! ও কিছু খুদেবার্তা দেখিয়েছিল আমাকে, যেগুলো নাকি তোমার লেখা ছিল! ওগুলো দেখে আমার মনে হয়েছিল কাওসার সত্যিই বলেছে। কিন্তু সেদিন মজনু যখন বলল, ওগুলো সর্বৈব মিথ্যে, আমি বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। এ কী করে সম্ভব? মজনুকে তুমি চেনো। আমাদের সাথেই পড়ত। মজনু বলল, তুমি আমাকেই পছন্দ করতে। সবাই যখন তোমাকে নিয়ে জল্পনা-কল্পনা করত, তোমার পিছে ঘুরত; তুমি কাউকেই পাত্তা দিতে না। মজনুর কথা আমার বিশ্বাস হয় না। তুমি যদি আমাকে পছন্দই করতে, তাহলে কেন বলোনি? তুমি তো জানতেই আমি অন্তর্মুখী স্বভাবের ছিলাম।
তুমি কাওসারের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছো ভেবে মনের কষ্টগুলোকে চাপা দিয়ে রেখেছিলাম। তোমাকে ভালো লাগার কথা মুখ ফুটে বলতে পারিনি কখনোই। তুমি যদি একবার আমাকে মনের কথাটা বলতে আমি দ্বিধা না করেই রাজি হয়ে যেতাম। তুমি জানো না কলেজ জীবনের দুটো বছর আমি কীভাবে কাটিয়েছি। আমার কত যে সময় কেটেছে বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে তোমার অপেক্ষায়! বৃহস্পতিবার এলেই বুকটা কেমন যেন চিনচিন ব্যথায় কঁকিয়ে উঠত শুক্রবার দিন তোমাকে দেখতে পাব না ভেবে। তুমি কোন টেম্পো দিয়ে আসবে, সে টেম্পোর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতাম। টেম্পোতে তোমার সাথে কখনও কথা হতো না; অন্তত একসাথে বসে যেতে তো পারতাম। এই বা কম কীসে! কলেজ শেষে তুমি কখন টেম্পোস্ট্যান্ডে আসবে, সেজন্য অপেক্ষা করতাম। একদিন চার ঘণ্টা অপেক্ষা করেছিলাম। তুমি যে কখন চলে গিয়েছিলে, টেরই পাইনি।
কলেজে টেস্ট পরীক্ষা দিয়ে ভালুকায় চলে এলাম প্রস্তুতি কোচিং করতে। মনির স্যার তোমাকে গন্তব্য আর আমাকে উত্তরণে ভর্তি করালেন স্যারের সুবিধার্থে। কারণ, তিনি দুটোতেই ক্লাস নিতেন। আমার খুব কষ্ট লেগেছিল। তোমাকে দেখা ছাড়া থাকা সত্যিই খুব কঠিন ছিল আমার জন্য। কিন্তু কিছু করারও ছিল না। একদিন শুনলাম রানা নামের এক বখাটের সাথে তুমি প্রেম করছো। আমি বিশ্বাসই করিনি। বিশ্বাস করেছিলাম সেদিন, যেদিন স্বচক্ষে ভালুকা ডিগ্রি কলেজের সামনে তোমাদের দেখেছিলাম। রিকশায় করে যাচ্ছিলে তোমরা। আমাকে দেখে রিকশার হুড তুলে দিয়েছিলে তুমি। রানা নাকি একদিন তোমাকে জোর করে...! যার কারণে তোমার পড়ালেখা একবছর পিছিয়ে যায়। মজনু বলল, আমার অবহেলার কারণেই তুমি..! মজনু আবার এও বলল, রানা তোমাকে বাধ্য করেছিল ওর সাথে সম্পর্কে জড়াতে।
বেশ কয়েকমাস হলো তুমি আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড। কলেজ জীবনের দু’বছরে যে পরিমাণ কথা বলা হয়নি, এই কয়েক মাসে তারচেয়েও অনেক বেশি কথা হয়েছে তোমার সঙ্গে (চ্যাট এ)। কিন্তু তোমার প্রতি আমার অনুরাগের কথা এখনও বলা হয়নি। হয়তো বলাও হবে না কোনোদিন।
ছবিঃ ফেসবুক
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০২৪ দুপুর ১:০০