পিচ্ছিল রাস্তায় আছাড় খেয়ে পড়ার সবচেয়ে দার্শনিক দিকটিই হচ্ছে আশেপাশে কে দেখল এটা ভেবে সাময়িক উদাসী হয়ে যাওয়া। এমতাবস্থায় প্রথমত দুটি বিষয় না চাইতেও বিবেচনায় এসে পড়ে। এক, কে দেখেছে- ইশ কি শরম! দুই, ব্যথা পেয়েছি দারুণ কিন্তু প্রতক্ষ্যদর্শীর জন্য সব ঠিকাছে টাইপের মুখায়ব ও লাজুক হাসি হাসি ভাব।
স্মরনীয় এমন দুটি ঘটনার বৃত্তান্ত দেয়া যেতে পারে। তখন কোয়ার্টারে থাকি। স্কুলে পড়ি। খুব বৃষ্টি হচ্ছে। স্কুল থেকে বাসায় ফিরছি। মূল রাস্তা ছেড়ে ইটের রাস্তা ধরে এগোতে হচ্ছে। একটু দূরেই দেখি রেশমা আপা আসছে। উনি আমাদের পাশের দালানেই থাকতেন, উনাকে দেখে সালাম বিনিময় করতে হবে এজন্য মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছি। আরেকটু কাছে এসে যেইমাত্র রেশমা আপা জিঙ্গেস করলেন, কেমন আছো, বাবু? আমি উত্তর ফেরত দিতে পারলাম না তার আগেই পিছলে উনার সামনেই আছড়ে পড়লাম। হাসি চেপে রাখতে পেট ফেটে যাচ্ছে এমন একটা মুখের ছবিযুক্ত রেশমা আপা টেনে তুললেন। স্পষ্ট মনে আছে, পড়ে যাওয়ার পরপরই মনে হচ্ছিল, ইয়া আল্লাহ, রেশমা আপার সাথে চোখাচোখি হওয়ার আগেই একটা কিছু করো, ইজ্জতের অবশিষ্ট আর কি আছে!
পিচ্ছিল রাস্তায় আছাড় খেয়ে পড়ার বেশ কয়েকটি অভিঞ্জতা আমাকে ভীষণ নাড়া দেয় ( মনে পড়লে নিজে থেকেই হাসতে হাসতে শেষ হয়ে যাই)। আরেকবার বন্ধুদের সাথে বিকালে ঘুরতে বেড়িয়েছি। সেদিনও দিনভর বৃষ্টি হয়েছিল। এমন একটা জায়গা দিয়ে যেতে হবে, যে রাস্তাটা সরু এবং একপাশে কাঁদা অন্যপাশে ডোবা। ডোবা বৃষ্টির পানিতে থৈ থৈ। কে সামনে হাটবে? বন্ধুরা ছোটখাট আলোচনা সেরে আমাকেই নির্বাচিত করল। অন্যপাশের কাঁদা বাঁচিয়ে আমি রাস্তা পার হচ্ছি আর বলছি, যে সামনে থাকে সে পথ দেখায়। বাক্য শেষ করা মাত্রই পা পিছলে ডোবাতে ধপাস করে পড়লাম। আমাকে টেনে তুলবে কে, সবাই হাসতে হাসতে জান কয়লা করে ফেলছে। আমি ডোবা থেকে করুণাভরা দৃষ্টিতে বন্ধুদের দেখছি তারা বলাবলি করছে, দোস্ত, যে সামনে থাকে সে পথ দেখায় নারে, ডোবায় পড়ে! সেবার লজ্জা যতটা পেয়েছি তারচেয়ে বেশি পেয়েছি শিক্ষা।
তবে বৃষ্টিতে আছাড় খেয়ে ব্যথা পেয়েও লজ্জার চোটে হাসিমুখ প্রদর্শনীর ইতিহাসও আছে। আমার এক দূর সম্পর্কের কাজিন বাসায় বেড়াতে এসেছে। কাজিন সুন্দরী। ঘরে সুন্দরীর সামনে ব্যাপক ভাব নিয়ে চলাফেরা করছি। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে খুব। একটা সময় ঘরে কথা ভেসে আসতে লাগল আজ বৃষ্টিতে ভেজা হবে, কে কে গোসল করবে, চল বাইরে যাই! আমি আন্দাজ করলাম পোলাপাইনের দলবলও নিঃসন্দেহে এতে সম্পৃক্ত হবে। আমি অতিরিক্ত উত্তেজিত হয়ে, বেশি স্মার্টনেস দেখাতে গিয়ে সবার আগে দে ছুট। সুন্দরী কাজিন আর আমার বোন বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে। কি কপাল! আমি বাড়ির বাইরে যেইমাত্র রাস্তায় উঠে দৌড়ের গতি বাড়ালাম অমনি পিছলে ধড়াম করে পড়লাম। একে তো হাতে কোমড়ে ভালোই ব্যথা পেয়েছি তারচেয়ে বড় ভাবনা সুন্দরী কাজিন বারান্দায় দাড়িয়ে লাইভ ফানি ভিডিও দেখছে।(আমার বোনের কাছ থেকে পরবর্তীতে জানতে পেরেছিলাম, জীবনে এমন হাস্যকর দৃশ্য সে দেখে নি!) কোমড়ে হাতে তীব্র ব্যথা নিয়েও সেদিন উঠে দাড়িয়েছিলাম। তারপর বেশ একটা ভাব নিলাম কিচ্ছু হয়নি খুব শান্ত, স্বাভাবিক ছন্দে হেটে গেলাম। বারান্দা থেকে দেখা যায় না রাস্তার মোড় পেড়িয়ে এমন একটা জায়গায় এসে ব্যথার স্থানগুলো পর্যবেক্ষণ করতে লাগলাম।
এভাবে আলগা ইজ্জতের ফালুদা তৈরির ঘটনা আরো বেশ কয়েকটা বলা যেতে পারে। তবে এত স্মরণ করে কী হবে, বৃষ্টির দিনগুলোতে আর ফুরিয়ে যায়নি। আরেকদিন বলা যাবে, আরো কয়েকটা ঘটনা জমুক।
লেখা: তানভীর আহমেদ
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ১২:০৭