
প্রেমিকার মত রোমাঞ্চকর আর ত্যক্ত উৎপন্নকারী জলজ্যান্ত কিছু দ্বিতীয়টি জীবনে এসেছে কি না বলা মুশকিল। ছেলেরা যতই তাফালিং করুক বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অসুন্দরী মেয়ের খপ্পড়ে স্বেচ্ছায় গিয়ে ধরা দেয়। কেউ কেউ ধরা খাওয়ার জন্য জান কয়লাও করে ফেলে। অতি সুন্দরী মেয়েরা প্রেমিকা হিসেবে ঘোলা জলের উপরিতলের মাছের মত কয়েকদিন ঘুরে ফিরে কথিত প্রেমিকের মনে নাড়াচাড়া দিয়ে দেয় ডুব।
সাহিত্য রেখে সহজ করে বলি, কোন জায়গায় সুবিধা করতে না পেরে, অনেক চেষ্টা তদবির করে একজন অসুন্দরী মেয়ের প্রেমে পড়েছিলাম। মানুষ মাত্রই সুন্দর তবে অসুন্দরী বলার কারণ হচ্ছে প্রেমিকার কাছে ‘বাও’ না পাওয়া বা সুবিধা করতে না পারা। যখন প্রেমিক হিসেবে নিজের জায়গাটা নড়বড়ে ঠেকে এবং প্রেমিকার কাছে বিশেষ অগুরুত্বপূর্ণ, ঝামেলা হিসেবে নিজেকে আবিষ্কার করা যায় তখন মাথা আউলিয়ে এমন কিছু আওড়ানোই স্বাভাবিক।
ঘটনা হচ্ছে, প্রেমিকা যথারীতি জীবনটার দফারফা করে তুলেছিল। ব্রেকআপ করার কলিজাও ছিল না (আহারে, তাহার জন্য মন পুড়তাছে)। কলিজা না থাকলে প্রেমিকের বৈধ আচরণ হচ্ছে মিউমিউ করা আর প্রেমিকার যাবতীয় হাউকাউ হজম করা। এটা করবা না, ওটা করবা না, এটা করলে আমিও এইটা করমু, ওইটা করলে আমিও ওইটা করমু। এতটা সময় ঘুম থেকে উঠবা, অতটা সময়ের পর বাইরে থাকবা না। ওর সাথে মিশবা না, ওরে ফোন নম্বর দিবা না। এখন ডেটিংয়ে মালপানি ঢালতে হবে, তখন মালপানি ফেলা নিষেধ। নেটে এই করবা না, ওই করবা না। এই জামা পড়বা না, ওই জামা পড়বা। এই দিন এইটা করবা, ওইদিন ওইটা করবা না। আরে সব্বনাশ! (সংক্ষেপিত ও পরিমার্জিত।)
প্রেমিকা নিজে থেকেই চলে গেছে। আমি রোবট হিসেবে খারাপ আছিলাম না। বরং রোবটের অপারেটর হিসেবে সে ব্যর্থ বলা যায়। আমাকে অপারেট করতে করতে সে ক্লান্ত। আর কত!
এখন নতুন যন্ত্রণা বাসা বেঁধেছে। আমাদের নিকট একে অপরের গচ্ছিত স্মৃতি স্মারক যা কিছু আছে সেগুলো হাতবদল করতে হবে। হাতঘড়ি, সেভিং ক্রিম, নেইলকাটার, পাউডার (কি আর কইতাম- তাহার মন পাইবার জন্য একজন আদর্শ রোবট হিসেবে পাউডার ব্যবহার করাও শুরু করেছিলাম। থাক, যা জেনেছেন পেটে রাইখেন।) লিস্টি অনেক লম্বা। এগুলো হাতড়ে, খুঁজে জড়ো করতে হচ্ছে। মোটামুটি কাজ গুছিয়ে এনেছিলাম। আরেকবার রোবট হিসেবে আমার পারফর্মেন্স আশা করি তাকে সন্তুষ্ট করতে চলেছি এমনটা ভাবতে ভাবতে নির্ধারিত সময়ে কলেজের দীঘির পাড়ে গিয়ে দাড়িয়েছিলাম। একটু পর সে এল, দেখল এবং ঝাড়ি দিল। কেন তাঁহার কথামত ব্রেকআপ করলাম, কেন তাঁহার জন্য আমার মন পোড়ে নাই, কেন তাঁহার স্মৃতি স্মারকও ফিরিয়ে দিতে একটুই বুক কাঁপল না? ঝাড়ির শেষ পর্যায়ে সে কাঁদতে লাগল। মৃদুমন্দ বাতাস বইছে। তাঁহার চিবুক বেয়ে নেমে আসা কয়েক ফোঁটা কান্নাজল দীঘির পাড়ের অর্ধমৃত ঘাসে টপটপ করে ঝরে পড়তে দেখলাম। আমি আর কী বলি, এখন আরেক যন্ত্রণার কথা ভাবছি, পকেটে টিস্যুপেপার নেই, আনতে ভুলে গেছি। আমার ওপর পকেটে সদা-সর্বদা টিস্যু পেপার রাখার হুকুমত নাজেল করা আছে তাঁহার। এখন টিস্যু পেপার চেয়ে বসলে আরো কিছু ঝাড়ি শুনতে হতে পারে। তাই তাঁহার চাপা কান্নার বিচিত্রসব সুরগুলোতে দীঘির পরিবেশ যে অনুপাতে মন্ত্রমুগ্ধ হচ্ছে আমি সেই অনুপাতেই ঘামছি।