somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৪টি অনুগল্প

২০ শে আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১২:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ঝিলনদি গ্রামের শাজাহান ওঝা খুব বিখ্যাত লোক। মানুষ বলে- শংখচূড় থেকে শুরু করে এমন কোনো সাপ নেই, যার বিষ লোকটা নামাতে পারে না। এমনও কিংবদন্তী আছে- সাপে কাটা বালকের দিকে ওঝা একনজর তাকানো মাত্র রোগি অর্ধেক ভালো হয়ে গেছিলো ইত্যাদি।

আজকাল যেখানে কবিরাজ, ঝাড়ফুঁক এদের দাপট কমতির দিকে, সেখানে শাজাহান ওঝা বেশ ভালো আছে। ওঝাগিরি করেই ঝিলনদি গ্রামে টিনের ঘর তুলেছে সে। বড় মেয়েটার বিয়ে দিয়েছে বেশ উঁচু সমাজে। এভাবে চললে ছোট মেয়েটাকেও ভালোয় ভালোয় পার করে দিতে পারবে। এই মেয়েটা ওঝার বড় আদরের......

তবে ভাদ্র মাসের এক দুপুরেই সব কেমন ওলট-পালট হয়ে গেলো। ওঝার ছোট মেয়েটার নাম ছিলো পারুল। বান্ধবীদের সাথে মিলে মেয়েটা লুকোচুরি খেলছিলো একদিন। ভগ্ন জমিদার বাড়িটাতে গিয়ে লুকালো। তখনই পারুলকে সাপে কাটলো আঁতকা। ভয়ানক গোখরো। ঠিক সময় বিষ না নামালে নিশ্চিত মৃত্যু।

গ্রামবাসীর বিস্ফোরিত চোখের সামনে দোর্দন্ড প্রতাপশালী শাজাহান ওঝা তার মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালের দিকে ছুটলো সেদিন......
***

বাঘের জন্য মেয়ে খোঁজা হচ্ছে। পাত্রের শুধু একটাই ডিমান্ড- মেয়ে স্লিম ফিগারের হতে হবে......

কিন্তু সমস্যা হলো স্লিম ফিগারের মেয়ে পাওয়া নিয়ে। বাঘ আজ এই ঘটকের কাছে যায়, কাল ঐ ঘটক ধরে, কিন্তু মেয়ে পছন্দ করতে পারে না। যার ছবিই দেখানো হয়, বাঘ তাছিল্য ভরে ঠোঁট উল্টে বলে- "আরো স্লিম ফিগার নাই?"

শেষমেষ বাঘ গাধার কাছে গেলো। ঘটক হিসেবে গাধার তেমন সুনাম ছিলো না, কিন্তু কেউই যখন তার স্বপ্নকন্যার সন্ধান দিতে পারছে না, তখন কি আর করবে ! গাধা সব শুনে টুনে বললো- "এটা কোনো ব্যাপারই না !"

এর কয়দিন পর গাধা একটা মেয়ে বাইম মাছ ধরে আনলো। আনন্দিত গলায় বাঘকে বললো- "এই ফিগারে চলবে? স্লিম আছে !"
***

সূর্যের খুব অহংকার ছিলো তার রূপ নিয়ে। নিজের গুণকীর্তন করতে করতেই জীবন কাটতো তার। প্রতিদিন সকালে পূর্ব দিক থেকে ওঠার পর সে গর্বভরে বলতো- "আমার আলো ছাড়া পৃথিবী অচল। একদিন আমি না জাগলেই সারা দুনিয়া ঢেকে যেতো শীত আর অন্ধকারে। গাছপালা তো বটেই, মানুষের মত উন্নত একটা প্রাণীরও আমাকে ছাড়া চলে না। আমার আলো না থাকলে মানুষ কি পরিমাণ অসহায় হয়ে যেতো, সেটা কি কখনো চিন্তা করে দেখেছো......"

একজন অন্ধ সেদিন গাছতলায় বসে সূর্যের কথাগুলো শুনছিলো। এক পর্যায়ে শুধু মুচকি হেসে উঠে গেলো !
***

সত্যি বলতে রেহনুমাকে যে আমি কত ভালোবাসি, সেটা বিদেশ আসার আগ পর্যন্ত বুঝতে পারি নি......

বাপ-দাদার জমি বিক্রি করে আজ থেকে দশ বছর আগে জেদ্দা চলে এসেছিলাম। এখানে ছোট্ট একটা মুদি দোকান চালাই। দেশেরই কয়েকজন নির্মাণ শ্রমিকের সাথে ঘর ভাড়া করে থাকি। সঞ্চয় যা হয়, তাতে চলে যায় বেশ। এরই মধ্যে গ্রামে একটা ঘর তুলেছি, সাথে মাসে মাসে টাকা পাঠানো তো আছেই......

কষ্ট শুধু একটাই, আর তা হলো- পরিবার থেকে দীর্ঘকালীন বিচ্ছেদ। আমরা যারা এখানে ছোটখাটো চাকরি করি, তাদের দেশে যাওয়াটা খুব কষ্ট আসলে। সহজে ছুটি মেলে না। রেহনুমাকে যে এখানে এনে রাখবো, সেই সামর্থ্যও নেই আমার। তাছাড়া বাড়িতে বৃদ্ধ মা আছে, রেহনুমা এখানে চলে আসলে মার সাথে থাকবে কে? সব মিলে, আমাদের মত প্রবাসীদের অবস্থা হয় সে-ই নাবিকের মত, যে কি না প্রতিনিয়ত অব্যাহতি চায় নীল দরিয়ার থেকে। মধ্যপ্রাচ্যে বসেও যার মনের নোঙ্গর পরে থাকে সারেং বাড়ির ঘরে......

এসব মনে হলেই আগে সৈকতে চলে যেতাম। আমার এখান থেকে সৈকত কাছেই। প্রায়ই বিকেলে গিয়ে বসে থাকতাম ওখানে। রেহনুমার কথা ভাবতাম। প্রতিবার ছুটি থেকে ফেরত আসার সময় মেয়েটা যে আমার দিকে চোখভর্তি পানি নিয়ে তাকাতো, সেই মুখটা মনে পরতো খুব...... মায় মায়া, চিকন আমপাতার মত মুখ !

এ সৈকতেই আমার এক আরব কবির সাথে পরিচয় হয়েছিলো। কিছুটা ভবঘুরে ধাঁচের লোক, সম্ভবত প্রাচীন আরবের যাযাবর সত্তা তার রক্তে রয়ে গেছে এখনো। আমার গল্প বলেছিলাম তাঁকে। প্রিয়জন রেখে দূরে থাকা, প্রতিবার বিদায় নিয়ে আসার সময় কলিজা ছেড়া কষ্ট, প্রতিবার দেশে গিয়ে নতুন করে তাঁকে পাওয়া- এ স.....ব। আহামরি কিছু না যদিও, আমার মত প্রতিটা প্রবাসীরই জীবনের গল্প এগুলো। তারপরো সে মনোযোগ দিয়ে শুনলো।

একদিন তিনি নিজে থেকেই সৈকতে আমাকে খুঁজে বের করেছিলেন। বললেন- "বন্ধু ! তোমার জন্য একটা কবিতা লিখে এনেছিঃ

"দূরত্বকে অবহেলা কোরো না কখনো
কেননা সমুদ্র আকাশকে
ছুঁতে পারে কেবল অসীম দূরত্বেই

কখনো কি ভেবে দেখেছো
নক্ষত্রেরা কেনো এতো সুন্দর ?
আমি বলি- সেটা তাদের আলোকবর্ষী দূরত্বেরই কারণে......"


আমি কবির কথা শুনে চমকে উঠলাম। মনে হলো- সত্যিই আমি বুঝি রেহনুমাকে আরো আপন করে পেয়েছি এখানে। দূর দিগন্তে আকাশকে যেমন করে পায় সমুদ্র, অথবা রাতের আকাশ তারায় তারায় ঐশ্বর্যমন্ডিত হয়ে ওঠে যেভাবে !

আমি আমার কবি বন্ধুকে বুকে জড়িয়ে ধরলাম।
***
(সমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১২:১০
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাশ্মীরে বন্ধুকধারীদের হামলায় ২৬ জনকে হত্যা; নেপথ্যে উগ্রবাদী মোদীর বিতর্কিত কাশ্মীর নীতি!

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৮:২২

কাশ্মীরে বন্ধুকধারীদের হামলায় ২৬ জনকে হত্যা; নেপথ্যে উগ্রবাদী মোদীর বিতর্কিত কাশ্মীর নীতি!

পেহেলগাম, ছবি গুগল থেকে প্রাপ্ত।

কাশ্মীরে অন্তত ২৬ জন পর্যটক নিহত হয়েছেন, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোর সবচেয়ে মারাত্মক হামলা। বিশ্লেষকদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসর্জনের ছাই

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১১:০৯




একদিন দগ্ধ ঘাসে ভালোবাসা পুড়িয়ে দেব।
সর্বাংগে ওর ছাই মেখে আমি বৈরাগ্য নেব।
রগড়ে রগড়ে ধুয়ে ফেলব শ্রবন মেঘের জলে।
কায়াটা কে শুকতে দেব তোমার বাড়ির উঠনে।

পায়ের নখে গজিয়ে উঠবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিছু আশা, কিছু হতাশা, কিছু বাস্তবতা

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:০৯



বাংলাদেশ যেন একটা রোলার কোষ্টারে সওয়ার হয়ে চলছে এখন। প্রতিনিয়ত পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে; একটা সংযোজন-বিয়োজনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশ। আমরা সরকারের কর্মকান্ডে আশান্বিত যেমন হচ্ছি, তেমনি হতাশায়ও নিমজ্জিত হচ্ছি;... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইচ্ছে করে ঘুরে বেড়াই=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:১২


এই উষ্ণতায় ইচ্ছে করে ঘুরে বেড়াই নদীতে সমুদ্দুরে
বালুচরে হেঁটে বেড়াই,
ঢেউয়ে থাকি বসে, জল এসে ছুঁয়ে দিক আমায়,
হিম হাওয়া এসে ভাসিয়ে নিয়ে যাক সুখের সপ্ত আসমানে।

এই বৈশাখে ইচ্ছে করে পুকুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি শেষ কবে একটি বই পড়েছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২২


আজ ২৩ এপ্রিল, বিশ্ব বই দিবস। অনেকেই একে বলেন ‘বিশ্ব গ্রন্থ ও গ্রন্থস্বত্ব দিবস’। ইউনেসকোর উদ্যোগে ১৯৯৫ সাল থেকে দিনটি পালিত হয়ে আসছে বই, লেখক এবং কপিরাইট রক্ষার বার্তা নিয়ে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×