প্রথম পর্বের পরে বেশ কিছুটা বিরতি দিয়ে আবার শুরু করলাম। আসলে যাত্রার ধকল জনিত ক্লান্তি কাটিয়ে উঠে কলম ( আসলে হবে কী-বোর্ড ) হাতে নিতে বেশ খানিকটা সময় লেগে গেল।
যা হোক, আমরা ৫ জন আমেরিকার বিভিন্ন শহর থেকে এসে লাস ভেগাসে পৌছুলাম বুধবার (১৫ ই জুলাই) সন্ধ্যার দিকে। বিমানবন্দরে আমাদের প্রথম কাজ ছিল একজন আরেকজনকে খুঁজে বের করা। সবাই একত্র হবার পরে আমরা ছুটলাম বিমানবন্দর সংলগ্ন রেন্ট-এ-কার এর অফিসে। গাড়ি আগে থেকেই বুকিং দেওয়া ছিল। সুতরাং নির্ধারিত গাড়িটি নিয়ে বেরিয়ে আসতে খুব একটা সময় লাগেনি। গাড়ি নিয়ে সোজা চলে গেলাম আমাদের হোটেলে।
আমাদের হোটেলের কথাতো আগের পোস্টেই বলেছিলাম। হোটেলটির নাম লুক্সোর এবং দেখতে পিরামিডের মত। হোটেল রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়েই সবাই মিলে হোটেলের ভিতর অবস্হিত একটি ক্যাফেতে ঝটপট ডিনার সেরে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম - উদ্দেশ্য রাতের লাস ভেগাসের সৌন্দর্য উপভোগ।
এবেলা বলে রাখি লাস ভেগাস কিন্তু রাতেই বেশি সুন্দর। এমনকি ক্যাসিনো গুলোও রাতের বেলা নানান রংয়ের আলোকসজ্জাতে সজ্জিত করা হয়। আর তাই দিনের আলোর চেয়ে রাতের বেলাই তাদেরকে মানায় ভাল। আসলে গ্যাম্বলিং ব্যাপারটাতে এক ধরনের নিষিদ্ধ গন্ধ আছে, সাধেই কি আর সিন সিটি নাম হয়েছে! আর নিষিদ্ধ মানেই অন্ধকার, অন্ধকার মানেই রাত্রি - এ কথা মাথায় রেখেই ভেগাসের স্ট্রাকচারগুলো এমন ভাবে তৈরী হয়েছে যে তাদের রাতেই ভাল লাগে।
ঘোড়াঘোড়ির প্রথম পর্যায়ে বেশ কিছুক্ষন লাস ভেগাস বুলোভার্ডের মধ্য দিয়ে হেটে বেরালাম। লাস ভেগাস বুলোভার্ড হলো লাস ভেগাসের মূল রাস্তা। লাস ভেগাস শহরের সর্বত্রই ক্যাসিনো থাকলেও বেশিরভাগ ক্যাসিনোই লাস ভেগাস বুলোভার্ডের দুই পাশে অবস্হিত। আরও জানিয়ে রাখি যে লাস ভেগাসের হোটেল এন্ড ক্যাসিনো গুলোর বেশির ভাগই কোন একটি নির্দষ্ট থিম বেসড (ছবি দেখলেই বুঝতে পারবেন), যেমন কোনটি প্রাচীন মিশরের পিরামিডের ছায়াবলম্বনে নির্মিত, আবার কোনটি আধুনিক নিউ ইয়র্ক শহরের ছায়াবলম্বনে।
লাস ভেগাস বুলোভার্ডে বেশ কিছুক্ষন ঘোড়াঘোড়ি করলাম আর ক্যাসিনোগুলোর দেখলাম বাইরে থেকে এবং বলাই বাহুল্য যে অসংখ্য ছবি তুলেছি যার বেশ কিছু দিলাম এখানে। স্ট্রাকচারগুলো বাইরে থেকে দেখতে যতটা সুন্দর, ভেতর থেকেও ঠিক ততটাই সুন্দর। তাই বাইরে থেকে একচক্কর ঘুড়ে দেখার পরে বেশ কিছু হোটেলের ভেতরে গিয়েও দেখলাম। সে ছবিও এখানে দিলাম।
আমরা কেউই গ্যাম্বলিং এর ব্যাপারে উৎসাহী ছিলাম না (যার মূল কারন টেকাহীন মানিব্যাগ)। তাই ঐ পথটা মাড়াইনি। আরও ঘোড়াঘোড়ির ইচ্ছে থাকা সত্বেও তাড়াতাড়ি হোটেল রুমে ফিরতে হলো, কেননা সকাল সকালই বেরিয়ে যেতে হবে জায়ন ন্যাশনাল পার্ক ( ইউটাহ ) এর উদ্দেশ্যে।
পরবর্তি কিস্তিতে জায়ন ন্যাশনাল পার্ক ( ইউটাহ ) নিয়ে লেখব। আপাতত এটুকুই থাকুক। যাবার আগে লাস ভেগাস সবচেয়ে আকর্ষনীয় হোটেল/ক্যাসিনোগুলোর কয়েকটির ছবি ও তাদের নাম এখানে দিলাম। এর বাইরেও কয়েকটি খুচরো ছবি দিলাম। আশা করি ভালো লাগবে আপনাদের।
১। বেলাজিও হোটেল এন্ড ক্যাসিনো
এটি সম্ভবত লাস ভেগাসের সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত তিনটি হোটেলের একটি হবে। হোটেলের সামনে যে ফোয়ারাটি আছে তা গানের তালে তালে নাচে। ভেতরের ডেকোরেশন এক কথায় মাইন্ড ব্লোইং - সপ্তবর্ণা ঝাড় বাতিটি লক্ষ্য করুন ( ৪ নং ছবিটি) - এত লাইভলি আর কালারফুল! এই হোটেলের খাবারও অনেক বিখ্যাত। এদের আর এম. জি. এম. গ্র্যান্ডের বুফে ভেগাসের সব চেয়ে বিখ্যাত বুফে। গতবার যখন নিউ ইয়ার'স ইভে ভেগাসে গিয়েছিলাম, তখন ২ ঘন্টা লাইনে দাড়িয়ে থেকেও ওদের বুফেতে ঢুকতে পার নি!
২। এম. জি. এম. গ্র্যান্ড হোটেল এন্ড ক্যাসিনো
এটিও সম্ভবত লাস ভেগাসের সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত তিনটি হোটেলের একটি হবে। লাস ভেগাসে এম. জি. এম. গ্র্যান্ড কোম্পানির অনেকগুলো হোটেল হোটেল আছে বিভিন্ন নামে। শুধু এই হোটেলটিই কোম্পানির নিজের নামে। আর তাই স্বভাবতই এর জৌলুসও খুবই বেশি। হোটেল এবং ক্যাসিনো দুটো অংশই সব সময় জমজমাট থাকে। সম্ভবত এটাতে খেললে টাকা বেশি পাওয়া যায়। এদের মাসকট হলো সিংহ (১ নং ছবি দেখুন)। আর তাই এরা হোটেলের মাঝে কাঁচ দেওয়া একটি চিড়িয়াখানা করেছে যাতে সত্যিকারের সিংহ পালে (২ নং ছবি দেখুন)। ডেভিড কপার ফিল্ড এই হোটেলের ইনডোর অডিটোরিয়ামে নিয়মিত ম্যাজিক শো করেন।
৩। প্যারিস হোটেল এন্ড ক্যাসিনো
৪। ভেনিসিয়ান হোটেল এন্ড ক্যাসিনো
৫। সিজার'স প্যালেস হোটেল এন্ড ক্যাসিনো
আকারে এটিই হয়তো সব চেয়ে বড় হোটেল। মহামান্য জুলিয়াস সিজারের সময়ের রোমান সভ্যতাকে ধারন করে আছে এই হোটেলটি। এই হোটেলটিতে বেশ ক জন নামকরা শিল্পী সারা বছর নিয়মিত লাইভ স্টেজ শো করে; যেমন এল্টন জন, সেরা জেসিকা পার্কার, শেরি। এই হোটেলটি আবার বিয়ের জন্যও জনপ্রিয়। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া মুভি হ্যাংওভারে এই হোটেলটিই দেখান হয়েছে।
(এরা এখানে নিয়মিত পারফর্ম করে, এল্টন জন, জেসিকা পার্কার, শেরি)
৬। লুক্সর হোটেল এন্ড ক্যাসিনো
৭। নিউ ইয়র্ক হোটেল এন্ড ক্যাসিনো
৮। নিউ অরলিয়েন্স হোটেল এন্ড ক্যাসিনো
লুইজিয়ানা অংগরাজ্যের নিউ অরলিয়েন্স শহরে এ ধরেনের আর্কিটেকচার দেখা যায় যা কিনা ফ্রেন্চ কলোনিয়াল সময় এবং স্হাপত্যকে ধারন করে আছে।
৯। এক্সক্যালিবার হোটেল এন্ড ক্যাসিনো
পিনোকিওর স্বপ্নের জগৎকে ধারন করে আছে এই হোটেলটি।
১০। মিরেজ হোটেল এন্ড ক্যাসিনো
১১। মন্টে কার্লো হোটেল এন্ড ক্যাসিনো
১২। বেইলি'স হোটেল এন্ড ক্যাসিনো
ভেগাসে প্রায় সব হোটেলেই বিভিন্ন ধরনের শো হয় - কোনটি ম্যাজিক, কোনটি সার্কাস আবার কোনটি মিউসিক্যাল। ভেগাসের অন্যতম পপুলার ও পুরনো স্টেজ শো "জুবিলি" এই হোটেলই হয়। আগেরবার এই শোটি দেখার ভাগ্য হয়েছিল। শোটি অত্যন্ত আকর্ষনিয়, অনেকটা মিউসিক্যাল টাইপ। তবে বলাই বাহুল্য শো এর মেয়েগুলো ছিল স্বল্পবসনা। নিচের ছবিতে স্টেজ শো "জুবিলি" এর এ্যাড দেখা যাচ্ছে হোটেলের সামনের বিলবোর্ডে।
১৩। লাস ভেগাস বুলেভার্ড
লাস ভেগাসের মূল রাস্তা লাস ভেগাস বুলেভার্ডের একটি ছবি এখানে দিলাম। একটু দূরেই হোটেলের সারি দেখা যাচ্ছে।
ভাল লাগলে জানাবেন দয়া করে। খারাপ লাগলেও জানাবেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০০৯ সকাল ৯:১৮