সম্প্রতি সময়ের সবচেয়ে রহস্যময় ঘটনা হচ্ছে “মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৭৭ এর এমএইচ ৩৭০ বিমানটি নিখোঁজ”। ৯ মার্চ স্থানীয় সময় ১২ টা ৪১ মিনিটে বিমানটি ২২৭জন যাত্রী ও ১২ জন ক্রু নিয়ে কুয়ালালামপুর ছেড়ে বেইজিং এর উদ্দেশ্যে রওনা করে। প্রায় ঘন্টাখানেক সময়ের মধ্যে বিমানটির সাথে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলেন কর্তৃপক্ষ। তার পর থেকে নিখোঁজ। কোথায় গেল ২৩৯ জন আরোহী নিয়ে বিমানটি? তবে কি বিমানটি নিখোঁজ নাকি বিধ্বস্ত? তা এখনো রহস্যে ঢাকা।
এ ঘটনাটি অনেক রহস্যময় হলেও এ রকম বিমান নিখোঁজ হওয়া বা বিধ্বংস হওয়ার ঘটনা এই প্রথম নয়। এর আগেও ঘটেছে এ রকম ঘটনা। পাঠকদের জন্য বিশ্বের ১০টি সবচেয়ে রহস্যময় বিমান নিখোঁজ ও বিধ্বস্তের কাহিনী।
১.Air-France১.এয়ার ফ্রেন্স ফ্লাইট ৪৪৭: ২৮৮ জন আরোহী নিয়ে ব্রাজিলের রিওডি জেনেরিও থেকে ফ্রান্সের প্যারিসের উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে আটলান্টিকের বুকে হারিয়ে যায় এয়ার ফ্রেন্স ফ্লাইট ৪৪৭। সময় ২০০৯ সাল। পাওয়া গেছে মাত্র ৫০ টি লাশ। বাকী লাশগুলোর সন্ধান মিলছে না। আবশেষে ২০১১ সালে বিমানের ব্লাক বক্স রেকর্ডারটির সন্ধান পাওয়া যায়। সন্ধান পাওয়া যায় ১০৪ টি মৃত্যদেহ। বাকী ৭৪ টি মৃত দেহের আজও সন্ধান মেলেনি।
২.এয়ার ফ্লাইট ৯৯০: মিশরের এই বিমানটিকে মনে হয় ইচ্ছা করেই ধ্বংস করে দেয় পাইলট। দুই পাইলটের রেষারেষিতে জীবন দিতে হয় ২১৭ জন যাত্রীর সবাইকে। ১৯৯৯ সালের ৩১ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের জন এফ কেনেডি বিমান বন্দর থেকে মিশরের কায়রোর উদ্দেশ্যে রওনা দেয় বিমানটি। কিন্তু আটলান্টিক মহাসাগরে সলিল সমাধি হয় তার।
বিমানটির সহকারী পাইলট জামিল আল বতুতী, যৌন অশোভচারনের দায়ে পাইলট গ্রুপের প্রধান হাতেম রুশদী কর্তৃক কঠোরভাবে তিরস্কৃত হন। হাতেম রুশদী তাকে বলেন “এটাই মনে হয় তোমার শেষ ফ্লাইট”। প্রত্যুত্তরে জামিল বলেন এটা তোমারও মনে হয় শেষ ফ্লাইট। বিমান ওড়ার পর হাতেম রুশদী টয়লেটে গেলে ককপিটের নিয়ন্ত্রণ নেয় জামিল। তারপর বিমানটিকে ঢুকিয়ে দেয় আটলান্টিকের অথৈ জলরাশির ভিতর। পরে বিমানের রেকর্ডার থেকে পাওয়া যায় জামিলের সর্বশেষ বাক্য “ঈশ্বরের উপর ভরসা করিলাম”।
৩.ফ্লাইট ৫৭১: উরুগুয়ের এই বিমানটি ধ্বংস হয় ১৯৯৩ সালে আন্দিজ পর্বতমালায় । জন্ম দেয় গা শিউরে ওঠা এক ইতিহাসের। বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে ৪৫ জন আরোহীর মধ্যে ১২ জন ঘটনাস্থলেই মারা যায়। পরদিন মারা যায় ৬ জন। এরপর মারা যায় আরো ৮ জন।
কিন্তু বেঁচে যায় ১৬ জন। ৭২ দিন থাকতে হয়েছে ওই পর্বতে। কিন্তু কি খেয়ে এতদিন বেচে ছিল তারা? খেয়েছে তাদের মৃত বন্ধুদের লাশ। এদের ২ জন দশ মাইল দূর্গম পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে এক চিলিয়ান সেলসম্যানের সাক্ষাত পায়। সেলসম্যান কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে অবশেষে তাদের উদ্ধার করা হয়। ১৯৯৩ সালের কাহিনী যেন আজও জীবিত।
[
৪.ফ্লাইট ১৯ ও বার্মুডা ট্রায়াঙ্গল: বার্মুডা ট্রায়াঙ্গল এক রহস্যপুরীর নাম। কথিত আছে, এর আশপাশ দিয়ে জাহাজ বা বিমান গেলে তাকে আর খুঁজেই পাওয়া যায় না। ১৯৪৫ সালের ৫ ডিসেম্বরের বিকেলে ৫টি বিমান গায়েব হয়ে যায় এই স্থান থেকে। তার পর থেকে শুরু হয় বার্মুডা টায়াঙ্গল লৌকিক উপাখ্যান।
ফ্লেরিডা থেকে আকাশে উড়াল দেয় যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর ৫ টি প্রশিক্ষণ বিমান। নেতৃত্বে রয়েছেন অভিজ্ঞ বিমান চালক চার্লস টেইলর। দেড় ঘন্টা পর বার্তা আসতে থাকে বিমানগুলোর কোন কমান্ডই কাজ করছে না। অভিজ্ঞ বিমান চালক চার্লস টেইলর জানালেন তার বিমানের দুটি কম্পাসই অকার্যকর হয়ে গেছে। এরপর ১৪ আরোহী সহ বিমান ৫টিকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
৫.স্টার টাইগার ও বার্মুডা ট্রায়াঙ্গল: ব্রিটিশ সাউথ আমেরিকান এয়ারওয়েজ (বিএসএএ) এর আরেকটি বিমান স্টার টাইগারকে ১৯৪৮ সালের ৩০ বার্মুডা ট্রায়াঙ্গলে সমাধি খুঁজে নিতে হয়। অন্য একটি বিমান থেকে ২৫ যাত্রীকে উদ্ধারের জন্য খারাপ আবহাওয়ার মধ্যে উড়াল দেয়। প্রবল বাতাস এড়ানোর জন্য বেশী উপরে ওঠেনি বিমানটি। অপর বিমানটিকে অনুসরন করার এক পর্যায়ে প্রবল বাতাস তার গতিপথ থেকে ছিটকে এনে বার্মুডা ট্রায়াঙ্গলের মুখে ঠেলে দেয়। অনুসৃত বিমানটি নিরাপদ স্থানে যেতে পেরেছে ঠিকই। কিন্তু স্টার টাইগারকে শুনতেও পায়নি আর দেখতেও পায়নি।
৬.ফ্লাইট ১৯১: আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান দূর্ঘটনা ১৯৭৯ সালে ফ্লাইট ১৯১ বিধ্বস্তের ঘটনা। শিকাগোর ও’হারে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে সবেমাত্র বিমানটি উড়েছে। কয়েক মিনিটের মাথায় বিমানবন্দরেই বিধ্বস্ত হল বিমানটি। মৃত্যু বরন কররেন ২৫৮ জন যাত্রী ও ১৩ জন ক্রু এর সবাই।
৭স্টার এড়িয়াল: স্টার এড়িয়াল। ব্রিটিশ সাউথ আমেরিকান এয়ারওয়েজ (বিএসএএ) এর আরেকটি বিমান। ১৯৪৯ সালের ১৭ জানুয়ারি হারিয়ে যায়। স্থান? সেই রহস্যপুরী বার্মুডা ট্রায়াঙ্গল। আবহাওয়া ছিল পরিস্কার। যান্ত্রিক কোন ত্রুটিও ছিল না। তারপরও ডুবে গেল রহস্যপুরীতে। এক জায়গায় পরপর তিনটি বিমান বিধ্বংস! শুরু হল তদন্ত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তদন্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হল। কারণ “দূর্ঘটনার কারণ” অজানা।
৮.স্টার ডাস্ট: ব্রিটিশ সাউথ আমেরিকান এয়ারওয়েজ (বিএসএএ) এর এই বিমানটি ১৯৪৭ সালের ২ আগষ্ট আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ার্স থেকে চিলির সান্টিয়াগো যাওয়ার পথে হারিয়ে যায় আন্দিজ পর্বতমালায়। পিছনে রেখে যায় জবাবহীন কিছু প্রশ্ন আর সর্বশেষ পাঠানো বার্তা “STENDEC”। সর্বশেষ বার্তাটির অর্থ কি হতে পারে তা উদ্ধারের চেষ্টার কোন কমতি ছিল না। কিন্তু কি এর অর্থ, কেনই বা হারিয়ে গেল বিমানটিকে সে প্রশ্ন আজও প্রশ্ন। অবশেষ ৫০ বছর পর দেখা মিলল এর ধ্বংসাবশেষের। ২ আর্জেন্টেনিয়ান পর্বতারোহী বিমানটির ইঞ্জিনের ধ্বংসাবশেষ এবং কাপড়ের ফালি উদ্ধার করে।
৯.গিলেন মিলারের এয়ারফোর্স বিমান (১৯৪৪): গিলেন মিলার ছিলেন একজন বিখ্যাত ব্যান্ড শিল্পী। ১৯৪৪ এর বসন্তে ইউএস আর্মি এয়ারফোর্সের ব্যান্ড দলের সাথে এক সঙ্গীত অনুষ্ঠানে অসাধারণ পার্মফরমেন্স উপহার দেন। সর্বশেষ রাতটি কাটান বেডফোর্ডের কাছাকাছি মিল্টন আর্নেস্ট নামক জায়গায়। পরদিন বিমানে করে রওনা করেছিলেন প্যারিসের উদ্দেশ্যে। কিন্তু ইংলিশ চ্যানেল পারি দেওয়ার সময় বিমানটি নিখোঁজ হয়ে যায়।
১০. লকহিড ইলেক্ট্রা (১৯৩৭): আমেরিকান বৈমানিকদের পথিকৃৎ এমেলিয়া এয়ারহার্ট প্রথম নারী যিনি একাই বিমান নিয়ে আটলান্টিক পাড়ি দেন। ১৯৩৭ সালের ২ জুলাই হল্যান্ডের কাছাকাছি মধ্য প্রশান্ত মহাসাগরে লকহিড ইলেক্ট্রাসহ নিখোজ হন তিনি। তাকে নিয়ে চমকপ্রদ কিছু ঘটনা চালু রয়েছে। কেউ বলেন, জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ায় তার বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে। কারো কারো মতে তিনি ছিলেন ফ্রাঙ্ক ডি রুজভেল্ট এর গুপ্তচর এবং তিনি জাপানি সৈন্যদের হাতে আটক হয়েছিলেন। তার সম্পর্কে এ কথাও চালু রয়েছে যে, তার বিমানটি জাপান দ্বীপের নিকট বিধ্বস্ত হয়েছে এবং তার মৃত দেহ মরুভূমির কাঁকড়ার খাদ্যে পরিণত হয়।