
সম্প্রতি ঢাকা ক্লাবে স্বজনদের একটি অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে গিয়ে কবি ও দার্শনিক ফরহাদ মজহার বেশ বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন। যারা এ সংক্রান্ত টিভি নিউজ এবং পত্রিকার খবর পড়েছেন, তারা ব্যাপারটিরে কীভাবে দেখছেন খুব বেশি জানার সুযোগহয় নাই আমার; কিছুক্ষণ আগে এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট চোখে পড়ল পথিক এর- সেটি ছাড়া। প্রসঙ্গত বলে নেই, এই পৌঢ় ব্যক্তিত্বের বিষয়ে যাদের কিছুমাত্র জানা শোনা আছে, তারা বেশ ভাল করেই জানেন যে, তিনি সবসময় লুঙ্গি পরতে স্বাচ্ছন্দ অনুভব করেন। এমনকি যদ্দুর দেখেছি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানগুলোতে অংশগ্রহণের সময়ও অন্য কোন পোশাকে তাঁকে মনে পড়ে না। ব্যক্তিগতভাবে তিনি অনেকটাই একজন ঋষি বা সাধকের জীবন যাপন করেন বলে মনে হয়েছে আমার; যে সাধকের সাধনা শুধু ব্যক্তির গভীরে বূদ হয়ে থাকে না, সমাজ রাজনীতি ও কৃষিকাজে তৎপর।
তো প্রথমে আমার সুবিধাবাদি মন ভেবেছিল, ফরহাদ মজহার এই ব্যাপারটিরে এড়িয়ে গিয়ে নিজের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখার চেষ্টা করলেই সম্ভবত ভাল করতেন। কী দরকার বিতর্কে যাবার, হাসিমুখে নিজের পরিচয়টা দিয়ে অথবা ভিতরে না ঢুকেই চলে আসতে পারতেন তিনি। ভাবমূর্তি এবং স্ট্যাটাস সম্পর্কে অতিশয় টনটনে আমার মতো সুবিধাবাদি মানুষের অনুকরণের দিকে গেলেন না তিনি। তা না করে তিনি প্রতিবাদ করলেন এই বলে যে, এটি একটি কলোনিয়াল নিয়ম, আর ক্লাবের সেক্রেটারি অহংকারের সাথেই এর উত্তরে বললেন এটিতো কলোনিয়াল ক্লাবই।
এটার অর্থ কি এটাই যে, য়ু ব্লাডি নেটিভস আর নট এলাউড হিয়ার!!!!?
গুড। আমরা অন্তত জানতে পারলাম যে, বাংলাদেশে এখনো ঘোষিতভাবে কিছু কলোনিয়াল প্রতিষ্ঠান রয়ে গেছে, যেখানে লুঙ্গি পরা বেয়াদপ নেটিভ মানুষদের প্রবেশ নিষেধ। তখন এই প্রশ্ন করাটা উচিত হবে, যে, বিভিন্ন রকম উপনিবেশের বিরুদ্ধে দীর্ঘ জেহাদের পর অর্জিত সাংবিধানিকভাবে সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রে আমরা এইসব কলোনিয়াল প্রতিষ্ঠানগুলোকে আদৌ বেড়ে উঠতে দেবো কি, বা সেইসবের অস্তিত্ব মেনে নেবো কি-না।
কেউ কেউ হয়তো আইনি প্রশ্ন তুলে তর্ক জুড়ে দেবেন যে, একটা ক্লাবের নিজস্ব ড্রেসকোড থাকতেই পারে। মানলাম, কিন্তু সেটি কাদের জন্য প্রযোজ্য হবে- ক্লাবের নিজস্ব সদস্য ছাড়া আর কারু উপর এই নিয়ম ফলাবার কোন অধিকার এইরকম কোন প্রতিষ্ঠান রাখে কি-না- ফরহাদ মজহার কি ঢাকা ক্লাবের সদস্য হতে গিয়েছিলেন- এইসব প্রশ্ন ছাড়াও ক্লাব যখন পাবলিকলি ব্যবহার করার জন্য ভাড়া দেওয়া হয়, তখন এই ক্লাবে কে কোন পোশাক পরে আসবেন তার প্রেসকিপশন ক্লাব কোন অথরিটিবলে দেবে- এই প্রশ্নটিও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অবশ্যই আর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নও এখানে তুলতে পারি যে, লুঙ্গি কেন বাংলাদেশের মত একটি দেশ- যার অধিকাংশ মানুষের সাধারণ পোশাক- সেই দেশের একটি ক্লাবের ড্রেস কোডে অন্তর্ভূক্ত হবে না, যেখানে আজিব নিয়মে একটি কলোনিয়াল ড্রেসই সব জায়গায় ড্রেসকোড হিশেবে রাখা হয়?
পরিশেষ, ফরহাদ মজহার "ফরহাদ মজহার" এই পরিচয় নিয়ে ক্লাবে ঢোকার অনুমতি পেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি "ফরহাদ মজহার" হিশেবে ঢুকতে রাজি ছিলেন না, যে কোন একজন মানুষ, লুঙ্গি যার সাধারণ পোশাক, তাদের একজন হয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভিতরে অবস্থিত যে কোন জায়গায় ঢোকার আইনগত অধিকার চেয়েছেন- যে অধিকার মৌলিক অধিকার হিশেবে সংবিধান সবাইকে দিয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০১০ রাত ৮:০২