উনার ব্যক্তিত্ব আমার ভাল লাগা শুরু হয়েছে অনেক পরেই। তবে এবার মনে হচ্ছে উনার পতন আসন্ন। এই বাংলাদেশকে এককভাবে চালানোর বিচক্ষণ মানুষ ছিল না। হোক সে মন্দের ভাল! সে জায়গা উনি পূরণ করেছেন। তবে উনি স্বাভাবিক রক্তে মাংসে গড়া বাঙালি ও বাংলাদেশী। সুতরাং ভুলের উর্ধ্বে নন। উন্নয়নের মাঝে আখের গুড়ের পিপড়াগুলি খেয়ে দেয়ে সুইস ব্যাংক, বেগম পাড়া, সেকেন্ড হোম টোম করে বসে আছে। যেমন উন্নয়ন তেমনি ফাঁপা অর্থনীতি। শেখ হাসিনার চেষ্টার কমতি ছিল না। কিন্তু উনার এখন অবসরে যাবার প্রয়োজন। মানুষ যখন বাধর্ক্যে উপনীত হয় তখন ভুল কথাবার্তা ও সিদ্ধান্ত বেশি হয়ে যায়। প্রভাবশালী প্রতিবেশীর কারণে বৈষম্যমূলক চুক্তি করতে বাধ্য হয়েছেন। উনার উন্নয়নে মান সম্মত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাত সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় নি। যোগাযোগখাত ও ব্যবসাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। এতে কিছুটা কর্মর্সংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়। সব কিছুতেই কিন্তু রয়ে গিয়েছে। বিনামূল্য শিক্ষা ও বড় সেবা কেন্দ্র চালু করলেই মান সম্মত শ্রেণি হিসেবে উল্লেখ করা যায় না। আলোচনায় আরো অনেক খাত বাদ রয়ে গিয়েছে।
উনার জায়গায় কাউকে তৈরী হতে দেন নাই বা কেউ হয়ে উঠে নাই বা বানিয়ে নেন নাই। আপাতত কে যোগ্য হবে জানি না। এটা ব্লগারদের কাছে আমার প্রশ্ন।
মুক্তিযোদ্ধা পরবর্তী একজন মুক্তিযোদ্ধা অসৎ হলে ও খারাপ কাজ করলে যেমন আমি সব মুক্তিযোদ্ধাদের অসৎ ও খারাপ বলতে পারব না। তেমনি একজন সাধারণ মানুষ ন্যায়ের কথা বললেই রাজাকার হয়ে যাবে না। মুক্তিযোদ্ধার চেতনাধারী মানুষরা অন্যায়কে ন্যায় বললেও সেটা মেনে নেওয়া যাবে না। না মেনে নেওয়াকেও দেশ বিরোধী উল্লেখ করা সঠিক নয়। যেমন ড. জাফর সাহেব যা বলেছেন। উনি মেধাবী সন্দেহ নাই। কিন্তু মেধাবী হলেই সর্বদা সঠিক থাকবেন তার যৌক্তিকতা নেই।
বাংলাদেশের অবস্থা ভাল নেই। গৃহযুদ্ধের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এখানে জামাত, বিএনপি, পাকি পন্থী দেশি বিরোধীরাও সুযোগ নিবে। ভারতপন্থী, উপজাতিরাও(পাহাড়ের আদিবাসীরা) বাদ যাবে না। শেখ হাসিনাকে শক্ত হাতে মোকাবেলা করতে হবে। যদি কঠিন হাতে করেন তাহলে সম্ভবত এটাই তার শেষ round. আমি খুব করে সুন্দর সমাপ্তি চেয়েছিলাম। Point to be noted যে, ''আমি খুব করে সুন্দর সমাপ্তি আশা করেছিলাম'', এই বাক্যটি বলি নাই। চাওয়া, পাওয়া, আশা এগুলির মধ্যে পাথর্ক্য বিস্তর। উনার কাল হয়ে দাঁড়াবে মিলিটারী বা গণআন্দোলন নয়। আমার দৃষ্টিতে উনার আশে পাশের মানুষ, ব্যুরোক্রেটরা।
উপরে নেতিবাচাক অনেক কিছুই চোখে পরবে, তবে উনার ইতিবাচক পদক্ষেপগুলির অভাব নাই। কিন্তু একনায়কতন্ত্র হলে সংসদের প্রয়োজন নেই। রেলওয়ের অনেক কাজই চোখে পরে কিন্তু জনগণ বান্ধব কোনগুলি এটাই বিষয়। এখন বালিশের মূল্যের জন্য, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পের পুরোপুরি শেখ হাসিনা করেন না। কিন্তু একনায়ক হলে দোষটা তে একজনের ঘাড়ে দেবার জন্য ভুক্তভোগীরা উতপেতে থাকবেই। পরপর ২ নির্বাচনে শেখ হাসিনাই জয় লাভ করত। হোক সে ৫১% করেই। কিন্তু ১০০% স্টাইলের দরকার ছিল না। এসবের জন্য অন্যায়কারীরা উনার দলীয় ছায়ায় আসার সুযোগ আরো বেশি পেয়েছে। এটা যদি এখনও হাসান আষাঢ় সাহেবের মত মানুষরা না বোঝেন তাহলে কখন জেগে উঠবেন? নাকি তারাও সুবিধাভোগীর কোটায়। ঐদিন শুনতে হল বন্দী মুক্তিযোদ্ধার দাবীর কথা। যেটা আসলেও কি হয়? সম্ভব? বাস্তব ও স্বাভাবিক কথাবার্তা? যেখানে যুদ্ধে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন কিন্তু পাকিস্তানে অবস্থানরত বাঙালি সৈন্য ও অফিসারদের তাদের গোয়েন্দা সংস্থা ধরে ফেলে। তারা বন্দী হয়ে রয়ে গেল বন্দী বিনিময় হবার আগ পর্যন্ত। তখনকার সময় যারা সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের যারা সহায়তা করেছে বা চেষ্টা করেছে, জীবন বাজি রেখেই করেছে। তারা সবাই মুক্তিযোদ্ধা হবার কথা। কিন্তু কালক্রমে এটা ত্যানা পেঁচিয়ে উদ্ভট করে রেখে দেওয়া হল। ভাতা ও সহায়তা যদি দিতেই হয় আহত, নিহত পরিবারদের দেওয়া উচিত ছিল। এখন আমি ব্যাংকার, ব্যবসায়ী, নির্মাণ শ্রমিক। দেশের জন্য যুদ্ধে গেলাম বা যারা গেল তাদের সহায়তা করলাম। আমি সুস্থ থাকলে যুদ্ধ শেষে নিজ কর্মস্থলে ফিরে আসব। আমি অসুস্থ থাকলে রাষ্ট্রের কাছে শরণাপন্ন হতে পারি। সেটা রাষ্ট্র আমাকে ভাতা বা কোটা হিসেবে প্রথম বংশের সুযোগ দিতে পারে। যাতে তারা আমি বা ছেলে-মেয়ে দাড়াঁতে পারে। আমার নাতি-নাতনীদের মা-বাবা তো দেশের প্রয়োজনে অসুস্থ হয়নি। সুস্থ থাকলেও তারা ভাতা পাবার যোগ্য নয়। তারা পড়াশোনার সহযোগীতা পেতে পারে ১ম বংশ হিসেবে। যাতে তারা জ্ঞানটা কাজে লাগিয়ে ২য় প্রজন্মের জন্য স্বাধীন দেশে কিছু করতে পারে। ২য় প্রজন্মের দায় সবাই নিতে যাবে কেন? দেশ স্বাধীন হয়েছে কি বৈষম্য ও শ্রেণিকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য? পাকিস্তানী ও বাঙালি বৈষম্যের জন্যই ১৯৭১ এ আমরা স্বাধীনতার জন্য লড়াই করি। এর সূত্রপাত ১৯৫২ থেকে শুরু হয়। ১৯৪৫ এর পর বিক্ষিপ্ত আরও তথ্য থাকতে পারে, সেটা আমি না বললাম। বৈষম্য না থাকলে আমরা এতদিন পাকিস্তানের পতাকার নিচেই থাকতাম! বৈষম্যমূলক শ্রেণিবিভেদের কারণেই আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। পৃথিবীর অনেক দেশেই একাধিক ধর্ম, বর্ণের, ভাষার, সংস্কৃতির মানুষ সহবস্থান করে। যেখানে মোটামোটি সাম্যের ছায়া আছে। পাকিরা যেখানে আমাদের করেছে অবহেলিত। পাকি কেন? ভারতীয়রাও করে! by default ধরেই নেয় বাংলাদেশি মানেই উর্দু/হিন্দী কথা বলা মানুষ। একাধিক ভাষায় পারদর্শীতা খারাপ কিছু নয়। কিন্তু প্রাধান্যমূলক প্রয়োগ কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
১৯৫২ বর্তমান প্রজন্মের জন্য বড্ড বেমানান। মুখে একরকম আর কার্যক্রমে ব্যতিক্রম।
সত্যই সেলুকাস, কি বিচিত্র!
আরেকটা মুক্তিযোদ্ধ দরকার মনে হচ্ছে, এরপর আবার আরেকটাও দরকার হতে পারে। The Hunger Games মুভির সবগুলো দেখতে পারেন। এর থেকে সহজ উদাহরণ দিতে পারছি না। অস্ত্রকে নৈতিক ও অনৈতিক অনেক কাজেই ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। মেধাও তেমনি। মেধা বা অস্ত্রের দোষ দিয়ে লাভ নাই।
আর সামুর অবস্থা নাকি সুবিধার নয়। তা জেনে ভাল লাগল না। সামু সকল ঝড়ঝাপটা ঠেলে টিকে থাকুক। সেই দোয়া করি। মতের অমিল হওয়া স্বাভাবিক। মিল হওয়াও স্বাভাবিক। একেক জনের দৃষ্টি একেক রকম। মোটা কথা আমাদের জন্ম বাংলাদেশে। জন্মগতভাবে বাংলাদেশি। হোক আমরা ভিন্ন ধর্ম, ভাষার(পাহাড়ের আদিবাসীদের)। দেশটা ছোট, মানুষ বেশি ও আমরা সবই মরণশীল। যাদেরকে রাজপথে মারছি, তারা আমাদেরই ভাই/বোন। অতিলোভ সামলান! হোক সে পয়সা বা ক্ষমতা। কেউ কবরে কিছু নিয়ে যেতে পারবেন না। সেটাকে বিবেচনা করে একসাথে সুন্দর করে থাকার চেষ্টা করলে ভাল হয়। আপনারা সকলে ভাল থাকুন।
ছবি: https://en.wikipedia.org/wiki/Sheikh_Hasina
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৬