somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বইমেলার ডায়েরি (১লা ফেব্রুয়ারি ২০১৫)

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৩:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শুরু হল বাংলা একাডেমিতে মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা ২০১৫। এবারো বইমেলাকে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে থাকছে মেলার প্রধান অংশ। আর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে থাকছে শিশু কর্নার, কিছু সরকারি প্রকাশনা সংস্থা, বিভিন্ন মিডিয়া এবং যথারীতি বহেড়াতলায় থাকছে লিটলম্যাগাজিন। এবারের অমর একুশে বইমেলায় মোট ৩৫১টি প্রকাশনা সংস্থা অংশগ্রহন করছে। এছাড়া ৮০টি লিটল ম্যাগাজিন বইমেলায় অংশ নিচ্ছে। এবার প্রথম বইমেলায় বাংলা একাডেমিসহ মোট ১১টি প্রকাশনা সংস্থা প‌্যাভেলিয়ন পেয়েছে। বিকাল তিনটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অমর একুশে গ্রন্থমেলার শুভ উদ্ধোধন করেন। এছাড়া তিনি বাংলা একাডেমি'র ৬০ বছর পুর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত চারদিনের আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মলেনেরও উদ্ধোধন করেন। সাহিত্য সম্মেলনে প্রতিদিন থাকবে দুটি করে অধিবেশন। সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত প্রথম অধিবেশন এবং বেলা আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত দ্বিতীয় অধিবেশন। প্রতিটি অধিবেশনই অনুষ্ঠিত হবে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে। এছাড়া আজ বইমেলার উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০১৪-এর পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকদের হাতে এক লাখ টাকার চেক, ক্রেস্ট ও সম্মাননাপত্র তুলে দেন। বিদেশে অবস্থানের কারণে ভ্রমণসাহিত্যে পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক মঈনুস সুলতান অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি।
এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠাগার চত্বরে শুরু হয়েছে দুইদিন ব্যাপী জাতীয় কবিতা উৎসব। আজ আর কবিতা উৎসবে যাওয়া হয়নি। কারণ প্রথম দিনের বইমেলায় গেছি সন্ধ্যায়। বইমেলায় গিয়ে আমার ছয়জন প্রকাশকের মধ্যে চারজনের সঙ্গেই আজ দেখা হয়েছে। মাজহারুল ইসলাম (মাজহার ভাই), আল-আমিন ভাই, জাহাঙ্গীর আলম সূজন ভাই, ও মাকসুদ হোসেন ভাইয়ের সঙ্গে। আমার অন্য দুজন প্রকাশক রাজীব নূর (রাজীবদা) ও পায়েল হাওলাদারের সঙ্গে আজ দেখা হয়নি। অমর একুশে বইমেলায় এবার নতুন এসেছে প্রকাশনা সংস্থা চন্দ্রদীপ। সেখানে দেখা হল কবি অসিম সাহা'র সঙ্গে। অসিম দা জানালেন, এবার তার মেলায় আসছে গল্পের বই 'শ্বশানঘাটের মাটি'। কিন্তু প্রকাশক দুঃখপ্রকাশ করলেন, বইটি মেলায় আসতে আরো দু-একদিন লাগবে। নতুন প্রকাশনা চন্দ্রদীপের প্রডাকশান এবার অনেক ভালো হয়েছে। অন্যপ্রকাশের সামনে পেলাম আমার প্রকাশক মাজহারুল ইসলামকে। কিছুক্ষণ আড্ডা দিচ্ছিলাম মাজহার ভাইয়ের সঙ্গে। মাজহার ভাই কথাপ্রসঙ্গে বললেন, এটা ঠিক প‌্যাভেলিয়ন না, বলতে পারেন চারদিক খোলা বইয়ের স্টল। আসলেই এবার বইমেলায় জায়গা অনেক বেড়েছে। কিন্তু বাংলা একাডেমি জায়গাটা ঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী সাজাতে পারেনি। অনেকটা কেমন খাপছাড়া। এলোমেলো স্টলের সারি। প‌্যাভেলিয়নগুলো গোটা মেলার মাঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিলেই ভালো হতো। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মূল মেলার মাঠে বইয়ের স্টলগুলো যেনো বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ানো। এবারো বইমেলার মাঠে অস্থায়ী টয়লেট করা হয়েছে শুধুমাত্র পূর্বদিকে। অনেকে আক্ষেপ করলেন, প‌্যাভেলিয়নগুলো মেলার মাঠে গেটের দিকে থাকায় পেছনের দিকে বইপ্রেমীদের ভিড় একটু কম হতে পারে। অন্যপ্রকাশের স্টলের সামনেই দেখা হল লেখক জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত আর লেখিকা পূরবী বসু'র সঙ্গে। খানিক আড্ডা হল। ওই সময় পূরবী দি'র ইন্টারভিউ করছিল সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর সাহেবের টিভি চ্যানেল দেশটিভি। একটা বিষয় আমার কাছে খুব খটকা লাগলো, অন্তত বইমেলা কভার করার জন্য আমাদের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বা সংবাদ মিডিয়ার উচিত শিক্ষিত রিপোর্টার দিয়ে বইমেলা কভার করানো। ইন্টারভিউ শেষে পূরবী দি যখন আমাদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন, তখন দেশ টিভি'র রিপোর্টার দিদি'র কাছে নাম জানতে চাইলেন। দিদি নাম বললেন। ছেলেটি আবার নামের বানান জিজ্ঞেস করলেন। দিদি তখন কিছুটা বিরক্তই হচ্ছিলেন হয়তো! আমি বললাম, অন্যপ্রকাশ থেকে দিদি'র কোনো একটা বই হাতে নিয়ে বানানটা দেখে নিন। পূরবী দি জানালেন, কলকাতা বইমেলায় অংশ নিতে ৫ তারিখ কলকাতা চলে যাবেন। সেখানেও দিদি'র কয়েকটা বই প্রকাশ পেয়েছে এবার।
আমাদের সেই আড্ডা আর জমেনি। ঠিক তখনই পেয়ে গেলাম লেখক মাহবুব লীলেনকে। লীলেন ভাই জানালেন, এবার মহাভারত নিয়ে তাঁর একটি ব্যতিক্রমী বই আসবে মেলায়। খুব খুশির খবর এটা। বাংলাদেশে এখনো গুটি কয়েক যাদের মহাভারত রামায়ন নিয়ে চর্চা আছে, লীলেন ভাই সেই গোত্রের অন্যতম তুর্যপাঠক। প্রায় কুঁড়ি বছর লীলেন বাই মহাভারত রামায়ন চর্চা করছেন। লীলেন ভাই রামায়ন ও মহাভারতের বিভিন্ন পর্বের অনেক ইতিহাসের সুলুক সন্ধানী বিষয়াদি নিয়ে কথা বলছিলেন। আমি লীলেন ভাইয়ের বইটার জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।
তারপর লীলেন ভাই আর আমি মেলায় ঘুরতে ঘুরতে শুদ্ধস্বর এর স্টলের সামনে এসে পাই প্রকাশক কবি আহমেদুর রশীদ টুটুল ভাইকে। সেখানে আরেক পশলা আড্ডা। টুটুল ভাই আক্ষেপ করে বললেন, এবারো মেলায় একটা গেট থাকায় ছুটির দিনগুলোতে বইপ্রেমীদের অনেক ঝামেলা হবে। মেলার মাঠে (উদ্যানে) একেবারে উত্তর পশ্চিম কোনায় একটা অস্থায়ী গেট অবশ্য দেখা গেছে। ওটা আদৌ চালু হবে কিনা এখনো জানা যায়নি। মেলার মাঠে অন্তত ভীড় এড়াতে উদ্যানের উত্তর-পশ্চিম কোনের গেট এবং উত্তর-পূর্ব কোনে আরেকটি বিকল্প গেট চালু করা উচিত। নইলে ছুটির দিনে বিশেষ করে ১লা ফাল্গুন, ১৪ ফেব্রুয়ারি আর ২১ শে ফেব্রুয়ারি মেলায় যে পরিমাণ ভীড় হয়, তা থেকে এবারো বইপ্রেমীদের মুক্তি নেই। আড্ডার ওই পর্যায়ে দেখা পাই আমার প্রকাশক মাকসুদ ভাইয়ের। মাকসুদ ভাইয়ের সাথে গল্প করতে করতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে আসি। তখন ফোন পাই কবি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা টোকন ঠাকুরের। বাংলা একাডেমি'র লিটল ম্যাগাজিন চত্বরের বহেড়াতলায় গিয়ে দেখা হল শিল্পী চারু পিন্টু, লেখক ঋষি এস্তেবান, কবি সাফি সমুদ্র, কবি মারুফ রায়হানসহ অনেকের সাথে। ওই সময় ফোন করল বন্ধু শিল্পী মোবাশ্বির আলম মজুমদার। মোবাশ্বির বলল, উদ্যানে আছে। আবার উদ্যানে ঢুকতে গিয়ে পেলাম টোকন ঠাকুরকে। তখন দেখা হল কবি জুয়েল মোস্তাফিজের সঙ্গে। শেষ পর্যন্ত মোবাশ্বিরের সাথে আর দেখা হয়নি। মেলা দুইভাগে ভাগ হওয়ায় এই সমস্যা এবারো বইপ্রেমীরা মোকাবেলা করবে।
গত বছর অমর একুশে বইমেলা উদ্ধোধন করার সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, মেলার সময় একাডেমি থেকে উদ্যানে আন্ডারগ্রাউন্ড বাইপাস করার। তা শেষ পর্যন্ত আর আলোর মুখ দেখেনি। তবে খুশির খবর হল আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের বইমেলায় এগারোটি বই প্রকাশ পাচ্ছে। বইগুলো প্রকাশ করেছে আগামী প্রকাশনী। যার মধ্যে একটি আত্মজীবনীমূলক স্মৃতিচারণ।
বইমেলা থেকে টোকন ঠাকুর আর আমি বেরোনোর পথে বকুল ভাই আমাদের চা খাওয়ালেন। তারপর টোকন ঠাকুর আর আমি যথারীতি ধ্রুবদা'র (শিল্পী ধ্রুব এষ) বাসায় গেলাম। সেখানে গিয়ে আড্ডা হল। পেলাম শিল্পী মামুন হোসাইন আর বাপ্পাকে। কিছুক্ষণ পর উত্তমদা (শিল্পী উত্তম সেন) আসলেন। ধ্রুবদা'র ইন্টারভিউ নিতে এসেছিলেন কবি চন্দন চৌধুরী। চন্দনের সঙ্গে আরেকজন ছিল। নাম ভুলে গেছি। ওরা ধ্রুবদা'র ম্যারাথন ইন্টারভিউ নিল।
আড্ডা শেষে আবার শাহবাগ আসলাম। তারপর বাসায়। এবারের অমর একুশে বইমেলার সময় সূচি হল- প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা এবং ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল আটটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত বইমেলা চলবে।
.................................
২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
ঢাকা
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×