somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বধূবিদ্যা : সুহানা। প্রেমিকার সামনে স্নান করতে দোষ নেই...। প্রবাসী+

২৭ শে আগস্ট, ২০১২ সকাল ৭:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বধূবিদ্যা কোনো অর্থেই রূপক কিংবা কল্পনাপ্রসূত গল্প নয়। এ সিরিজটি সম্পূর্ণই পরকীয়াবিষয়ক আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার সরল স্বীকারোক্তি। তবে এখানে সামাজিক গোলযোগ ও বিশৃঙ্খলার কথা মাথায় রেখে ব্যক্তি ও স্থানের নামকে বাস্তব সত্যে উপস্থাপন করা যায়নি, রূপক অর্থেই ব্যবহার করতে হয়েছে বলে দুঃখিত।

আমাদের অফিসটা একটা পুরনো বিল্ডিঙে। বাড়ীওয়ালা ভেঙে কাজ ধরবে, এ জন্য হঠাৎ নোটিশে (২৭ দিন, চুক্তিপত্রে ছিলো ৩ মাস) আমাদেরকে অফিস ছাড়তে বলে, মেজায বিগড়ে যায়, বাট কিছুই করার নেই। কয়েক বছর ছিলাম এ বিল্ডিঙে, লোকটার সাথে সম্পর্কটাও বেশ ভালো, শুধুমাত্র পারস্পরিক সুসম্পর্কের খাতিরেই শর্ট নোটিসটি মেনে নিয়ে অন্য অফিস দেখা শুরু করি। ব্যাপারটি যতোটা ঝক্কি-ঝামেলার, ততোটা পোহাতে হয়নি, দু'চার দিনেই এক অফিস ম্যানেজ হয়ে গেলো, বাঁচলাম।
এই বিল্ডিংটাও বেশ পুরনো, মালিকও পুরনো মানসিকতার। এত্তো বড়ো একটা বিল্ডিং, ভাড়াটিয়াও অনেক, কিন্তু এতোসব ভাড়াটিয়াকে ম্যান্টেইন করার জন্য বাড়িওয়ালার কোনো আলাদা অফিস নেই, সকল প্রকার যোগাযোগ করতে হয় বাসায় গিয়ে, এ বিল্ডিঙেরই একটা ফ্লোরে (আমাদের জাস্ট উপররেরটা) পরিবার নিয়ে থাকেন থাকেন সদাহাস্য এ বাড়ীওয়ালা। মজার ব্যাপার হচ্ছে নতুন বাড়ীওয়ালার মতো আমাদের পুরনো বাড়ীর মালিকও হাসিমুখে থাকতেন সারাক্ষণ।
অফিসটি নিতে গিয়ে বিল্ডিঙের সামনে বাড়ীওয়ালার সাক্ষাৎ মেলে, বেশ আন্তরিক তিনি। কিছুক্ষণ কথা বার্তা বলেই স্পেসটা দেখি, ফাইনালও করে যাই, আগামীকাল অ্যাডভান্স দেবো বলে। পরদিন অ্যাডভান্সের পুরো টাকাটা নিয়ে তাকে ফোন দিলাম, ধরছেন না। নিচের লোকজনকে জিজ্ঞেস করে তার ফ্লোরে গিয়ে আবার ফোন দিলাম, ধরলেন না। একটু তাড়াও ছিলো, সাতপাচ না ভেবে কলিংবেল টিপ দেই। শব্দ হওয়ামাত্রই ভেতর থেকে এক জটিল কণ্ঠ, কে? আফসার সাহেবের (রূপক নাম) কথা জিজ্ঞেস করতেই বললো, উনি তো বাসায় নেই, এই বলে দরোজা খুললো এক ভয়ঙ্কর সুন্দরী। বললাম, নিচের ফ্লোরের অফিসটা আমরা নিচ্ছি, কথা হয়েছে, অ্যাডভান্স দেওয়ার কথা ছিলো। ফোন দিয়েছিলাম, ধরছেন না। সেই রূপবতী বললো, আব্বু দূরে কোথাও তো যাননি, আশপাশেই আছেন। ভেতরে এসে ওয়েট করেন, অথবা একটু ঘুরে আসতে পারেন, আব্বুকে পেয়ে যাবেন। মেয়েটার হাতের (হাত এবং পা, এই দুটি অঙ্গের প্রতি তাকালে কোনো মেয়েই মাইন্ড করে না বলে জানি) দিকে তাকিয়ে বললাম, তাহলে একটু হেটে আসি। আচ্ছা বলে সম্মতি দিয়ে দরোজা বন্ধ করে দিলো। চট জলদি নেমে পড়লাম বিল্ডিং থেকে, মাথা নষ্ট, নেমেই একটা সিগারেট ধরালাম। নিচে নেমে ভালো করেছি নাকি বাসায় বসে অপেক্ষা করা ভালো ছিলো, ব্যাপারটি নিয়ে একটা অন্তর্দ্বন্দ্ব তৈরি হলে নিজের ভেতর। সিগারেটটা শেষ হতে হতে মনে হলো 'সুন্দরীদের কাছে থাকাও ভালো, দূরে থাকাও ভালো।
কিছুক্ষণ পর আফসার সাহেব কল ব্যাক করলেন, অ্যাডভান্স পরিশোধ করে ২৫ তারিখ ওঠার কথা বললাম, তিনি রাজী। ২৫ তারিখ আসতে অনেক সময় লেগে গেলো, বারবার শুধু মেয়েটার কথাবার্তা কানে বাজছে, অবয়ব চোছে ভাসছে, তাই বেশ বিলম্বেই এলো ২৫ তারিখ। ২ তারিখে রিওপেনিং করলাম। অফিস করছি, বাণিজ্য চলছে, সবই ঠিকঠাক, কেমল মেয়েটার সাথেই দেখা হচ্ছে না, আফসোস তো কাজ করছেই মনের মধ্যে। মাস দেড়েক পর একদিন দেখলাম, রিক্সায় করে কোত্থেকে যেনো এলো। তাকানো দেখেই বুঝতে পারলাম, আমাকে সে চিনতে পেরেছে। কেমন আছেন জিজ্ঞেস করতেই বললো, ভালো আছি। আব্বুকে কি উপরে উঠতে দেখেছেন? বললাম না, ব্যাস দ্রুতপায়ে হেটে গিয়ে লিফট-এর সামনে গিয়ে দাড়ালো, লিফট এলে চলে গেলো সুন্দরীটি...। এমন করে মাসে অন্তত দু'তিনবার দেখা হয়, হায়-হ্যালো ছাড়া আর কিছুই বলা হয় না, সুযোগও নেই, বাড়ীওয়ালার মেয়ে বলে কথা।
লজ্জার ব্যাপার হলো, ৫ মাস পেরিয়ে গেলো, এখন পর্যন্ত তার মহাপবিত্র নাম মোবারকও জানা হয়নি, খারাপ লাগছে কিন্তু ধৈর্য হারাইনি, অপেক্ষা করছিলাম। এবারের ঈদের ছুটিতে বিল্ডিং প্রায় ফাকা, সব অফিস বন্ধ। প্রায় প্রতিদিনই বিকেলে অফিসে এসে সময় কাটিয়ে যাই এশার পর পর্যন্ত। একদিন রাত প্রায় ১০টার দিকে অফিস থেকে বেরুবো, এমন সময় ধীর গতির টক টক শব্দ, বুঝতে পারলাম উপর তলা থেকে কেউ নামছে। এমন সময় দেখি সেই মেয়ে, একজন বয়স্কা মহিলাকে ধরে ধরে হেটে নামছেন। আজকেই প্রথম আমাকে আগে সালাম দিলো। বললো, অফিস ছুটি দেননি। হ্যা, দিয়েছি। সবাই চলে গেছে, এমনিতেই এসে ঘুরে যাই। বললো, নামবেন? হ্যা, চা খেতে যাবো। শুনে বললো, দাদু লিফটে উঠে না, হেটেই নামাতে হয়, অনেক দিন পর এসেছে। এতোক্ষণ পর দাদুকে সালাম দিলাম, বললাম, ভালো আছেন। দাদু মাথা ঝুকিয়ে আস্তে করে হ্যা বললেন। আমিও তাদের সাথে হেটে হেটে নামলাম। দাদু গাড়িতে চড়ে বসলো, আমি চা খেতে চলে গেলাম। ১০/১৫ মিনিট পর চা খেয়ে সিগারেট টানতে টানতে বিল্ডিঙের সামনে এসে দেখি ম্যাডাম দাড়িয়ে মোবাইলে কথা বলছে। তার কাছাকাছি আসতেই তার কথা বলা শেষ। সিগারেট খান কেনো, এটা ভালো?
না।
তাইলে খান কেনো?
ভালো লাগে?
উপরে যাবেন?
হ্যা। আঙ্কেল কি বাসায়?
না। নামাজ পড়তে গেছে, এখনো আসে নাই। আপনার বাসা কোথায়?
কাছেই, ...। বলতে বলতে লিফটের কাছে গেলাম।
সিড়িতেই উঠি!
ঠিক আছে।
কোনো সমস্যা? না।
মুড অফ লাগছে!
এমনিতেই...। এই ক্যাটাগরির কথা বলতে বলতে অফিসের ফ্লোরে চলে এলাম। বললাম, তাহলে যান।
বললো, ঠিক আছে, যাই।
নামটা তো বলবেন!
‌'সুহানা, গেলাম, আব্বু আইসা পড়বে'।
মেয়েটা চলে গেলো, আমি আর অফিসে ঢুকলাম না, নেমে পড়লাম। বাসায় এসে খাওয়া দাওয়া সেরে শুয়ে শুয়ে সিগারেট খাচ্ছিলাম। বারবার শুধু কানের কাছে শব্দ হচ্ছে ‌'সুহানা, গেলাম, আব্বু আইসা পড়বে'।
আগামী কাল ঈদ, তবু আজ অফিসে এলাম, বিকেল নয়, দুপুরেই এলাম। অফিসে আসলে দেখা হতে পারে ‌'সুহানা, গেলাম, আব্বু আইসা পড়বে'-এর সাথে। সন্ধ্যার দিকে জানালায় নিম্নস্বরের টক টক শব্দ। প্রথমে বুঝতে পারিনি, গান বাজছিলো, তাই। পরে আবারও টক টক। জানালাটা স্লাইড করে দেখি ‌'সুহানা, গেলাম, আব্বু আইসা পড়বে'। বললো, কী, চাদ দেখেছেন? বললাম না। তার হাতে থাকা চাবিটি আমাকে সেধে বললো, এটা ছাদের চাবি, যান, চাদ দেখে আসেন- চাদ না দেখলে কি ঈদ হয়! চাবিটা হাতে দেওয়ামাত্রই 'যাই' বলে চলে গেলো উপরে। আস্তে ধীরে অফিস থেকে বেরিয়ে ধীরপায়ে তাদের ফ্লোর পেরিয়ে ছাদে উঠলাম। খুবই সুন্দর ছাদ, দক্ষিণ কোনে কিছু ফুল গাছ, তিনচারটি টুল, একটা টেবিল আর পশ্চিম-উত্তর পাশের লম্বা রশিতে কিছু কাপড় আর দুটি ব্রা, দুলছে...। চাদ দেখা যাচ্ছে স্পষ্ট। তাৎক্ষণিক মনে হলো, চাদের চেয়ে ব্রা অনেক বেশি টানে আমাকে। ব্রা'র ভেতরে কিছু থাকুক আর না থাকুক, ফীলিঙ...।
কোনো প্রকার দুশ্চিন্তা মাথায় না এনে একটা সিগারেট ধরালাম। নেমে যাবো, না থাকবো? চাবি ফেরত দেবো কীভাবে? ...ইত্যাদি ভাবতে ভাবতেই উনি হাজির। কাছে এসে বললো, দেখছেন? হ্যা, ‌'সুহানা, গেলাম, আব্বু আইসা পড়বে'। বললো, মানে? বললাম, সেদিন নাম জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনি তো এই নামই বলেছেন। শুনে অদ্ভূত একটা হাসি দিয়ে বললো, শোনেন- আব্বু বড়ো আপার বাসায় যাবে এখন, আব্বু নামলে আমি আসছি, আপনি সিগারেট খান, এই বলে চলে গেলো।
মেয়েটা কিছুই ভাবতে দিচ্ছে না, জিজ্ঞেস করতে দিচ্ছে না, একটার পর একটা কান্ড করেই যাচ্ছে। বুঝতেই পারছি না, একটা ভাড়াটিয়াকে চাদ দেখানোর দরকার কী? মেয়েটা আমাকে কেমন যেনো একটা ঘোরের মধ্যে ফেলে রেখেছে। কেমন যেন নেশাধরানো তৎপরতা, ঢাকা সিটির এত্তো গুরুত্বপূর্ণ ও মাহমূল্যবান একটা জায়গায় তাদের বাড়ী, পয়সারও অভাব নেই, মেয়েটাকে একদম অন্যরকম মনে হচ্ছে- এইসব হাবিজাবি চিন্তা করতে করতে অধঘন্টা চলে গেলো, আবার তিনি হাজির। কী, আঙ্কেল চলে গেছে? হ্যা। আন্টি যদি ছাদে আসে, তখন কী করবেন? আসবে না, বাইরে থেকে গেট লাগিয়ে দিয়েছি। আঙ্কেল আসতে কতোক্ষণ লাগতে পারে? মিনিমাম ২ ঘন্টা, আপনি চিন্তা কইরেন না, আপনাকে আমি সেফ করবো।
চাবিটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললাম, আমার নাম ...। অনেক কষ্ট হয়েছে এতোদিন আপনি করে বলতে, আর পারবো না। তুমি লেখাপড়া করো! না। এইসব পারসোনাল ডিটেইল পরে বলবো। এখন অন্যকথা বলো। ঈদের চাদ আছে, ফুলগাছ আছে, বসে কথা বলি, আকাশটাও খুব সুন্দর লাগতেছে, একটু মেঘ মেঘ ভাব, এই সময় কি লেখাপড়ার কথা ভাল্লাগে...? বললাম, দুই দুইটা ব্রা ঝুলতাছে, এইটা চোখে পড়ে না তোমার? মাথায় আলতো করে একটা থাপ্পর কেটে বললো, চোখে পড়তো, যদি ব্রা না হয়ে আন্ডারওয়্যার হতো! এই বলে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো, একটু পর মাথা উঠিয়ে অট্টহাসি হেসে বললো 'ইউ লাইক ব্রা'! বললাম 'অভিয়েসলি, ব্রেস্ট অলসো'।
বললাম, একটু আস্তে কথা বলো, সমস্যা হলে হতেও পারে, কথাটি বলামাত্রই ছাদের গেটের দিকে চলে গেলো ও। আমিও গেলাম। আমার দিকে তাকিয়ে ভেংচি কেটে বাহিরে হাত বের করে তালা মেরে দিয়ে বললো, এখন তো আর ভয় নেই? বললাম, ভয়ের কী আছে, তোমার সাহস থাকলে আমি সাহস হারাবো কেনো, আশ্চর্য! বললো গূড, এই বলে আমার হাতটা ধরে টেবিলের কাছে নিয়ে এলো। জিজ্ঞেস করলাম, হাত ধরে সাহস দেখাইলা মনে হয়। বললো হতে পারে। আমি বললাম, তাহলে আমিও সাহস দেখাই? বললো, দেখাও। ...জাস্ট জড়িয়ে ধরে ইয়া দমের একটা কিস করে বসলাম ঠোটে। ছাড়ার পর কেমন যেন পাথরশক্ত হয়ে গেলো। আবার ধরে আবার আরেকটা, লম্বা সময়...। ছাড়লাম। এবার কিছুক্ষণ আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে সে-ই আমাকে ধরে একটা কিপটা মার্কা কিস দিলো গালে। বললাম, এই তোমার সাহস? বললো, বড়ো কথা বইলো না, তোমার হার্টবিট মনে হয় ঢোল পিটাইতাছে!!! শোনো, ১০টা প্রায় বাজে, আব্বু চলে আসবে। বাইরে কাজ থাকলে সেরে আসো, আজকে বাসায় যেতে পারবা না, সকালে যাবা, আমি আর কিছু শুনতে চাই না, লেটস গো...। আধাঘন্টায় বাইরের কাজ সেরে আসবা। কারণ, ১১টায় গেট বন্ধ করে দিবে। জাস্ট সাড়ে দশটায় অফিসে চলে আসবা, লাইট জালাবা না প্লীজ। নাম্বার আদান-প্রদান হলো নেমে পড়লাম।
নিচে নেমে চায়ের দোকানে চা খাচ্ছি, একটা সিগারেটও ধরালাম। নিচে আসলে আমার কোনো কাজ নেই, যেহেতু তার কথায় চাদরাতেও অফিসে আছি, সেহেতু খাওয়া দাওয়ার চিন্তা করছি না, এ কথা চিন্তা করা মাত্রই তার কল। শোনো, বাইরে কিছু খাওয়ার দরকার নাই, আমি খাবারের ব্যবস্থা করছি, অন্য কোনো কাজ থাকলে দ্রুত সেরে আসো! আমি বললাম, শোনো, নিচে আমার কোনো কাজ নাই, শুধু প্রোটেকশন কিনতে নামলাম, রিমেম্বার দিস এন্ড গেট রেডি। দেখা যাক, বলে ফোন রেখে দিলো।
১০ মিনিট বিলম্ব হয়েছে, ফার্মেসীর জন্য একটু দূরে যেতে হয়েছে। দশটা চল্লিশে অফিসের গেটে দাড়িয়ে কল দিলাম, কেটে দিলো। একটু পর নিচে নেমে বললো, তুমি অফিসে ঢুকে বসো, আমি বাইরে থেকে তালা মেরে দিচ্ছি, লাইট জালাবা না কিন্তু। আব্বু আম্মু ঘুমালে আমি খাবার নিয়ে আসবো, সে পর্যন্ত একটু ধৈর্য ধরে রেস্ট নাও লক্ষ্মীসোনা- এই বলে এক প্রকার ধাক্কা মেরে আমাকে অফিসে তালাবদ্ধ করে চলে গেলো।
১১টা বাজলো, সাড়ে ১১টা, ১২টা, সাড়ে ১২টা, পৌনে একটায় সে এসে তালা খুললো, লাইট জালালাম। দেখি তার হাতে খাবার- নুডলস, পুডিং আর দুইটা কমলা। অনেক ক্ষুধা লাগছে, খেতে খেতে বললাম, আঙ্কেল-এর ঘুম ভাঙলে যদি নিচে নামে? না, নামবে না, বাইরে থেকে গেট লাগিয়ে এসেছি। রিস্ক আমি, তুমি কোনো চিন্তা কইরো না, খাও তো! খাওয়া দাওয়া শেষ করে দেখি ওর চোখ কেমন যেন টলটল করছে, কী যেনো বলতে চাইছে। একটা সিগারেট ধরিয়ে বললাম, কিছু বলবা? মুড অফ কেনো? একটু রাগান্বিত স্বরে বললো 'কিচ্ছু বুঝো না? অফিসে, ছাদে নাকি আমার রুমে? বললো, আমার রুমেই চলো, আব্বু-আম্মুর দরোজা বন্ধ, আসো, যাই- এই বলে আমার হাত ধরে অফিস থেকে বের করলো আমাকে, সে-ই লক করলো অফিস। উপরে গেলাম, ড্রয়িং রুমের ডান দিকে বারান্দার শেষ মাথায় ওর রুম। দরোজা লক করে সোজা আমাকে রুমে নিয়েই দরোজা বন্ধ করে হাই ভলিউম-এ টিভি ছাড়লো, চ্যানেল চেঞ্জ করতে করতে ইশারায় ফ্রী হতে বললো, সশব্দে বললো, ইজি হও! এই বলে টিভির ভিজুয়াল অফ করে লাইট নিভিয়ে দিলো।
জীবনে অনেক সময়ই অন্ধকারের প্রয়োজন পড়ে এবং আলোর পিছেও ছুটোছুটি করে মানুষ, বালক-বালিকা। সে রাতে আমাদের অন্ধকার প্রয়োজন ছিলো, বুঝি, কিন্তু আমরা চাদটাকে নেভাতে পারিনি। হয়তো চাদটা সারারাত ঈষৎ আলোকিত করে রেখেছিলো আকাশপৃথিবী, সে আলোটা আমরা সত্যিই মিস করেছি। রাতে একবার সুহানা বলেছিলো, ছাদে যাবার কথা, যাইনি। বলেছি, চাদ দেখা কেনো, চাদ খাওয়ারও এনার্জি নাই...।
বালিকা অথবা বধূদের সামনে অথবা তাদের সাথে করে গোসল করতে কোনোদিন ইতস্তত বোধ করিনি। কিন্তু আজ এমন হোলো কেনো, বুঝতেই পারছি না। আমার সাথে গোসল করার ইচ্ছাও সুহানার নেই, তাছাড়া এখন ও গোসল করবে না, কারণ, এখন করলেও সকালে আবার করতে হবে। তাই, একাই গোসল করছিলাম। হঠাৎ বাথরুমের দরোজায় শব্দ, বললো, দরোজাটা খুলো! খুলে দেখি, স্মিতহাস্যজোছনাবিকারিণী হয়ে দাড়িয়ে আছে। বললো, না, গোসল করবো না, তোমার গোসল দেখবো। শুনে কেমন যেন লজ্জা-লজ্জা লাগলো ভেতরে, বললাম, গোসল করলে করো, নইলে যাও। গোসল দেখবা, এটা কেমন কথা! ... একটু চুপ থেকে, আমাকে আদ্যোপান্ত পরখ করে নিয়ে, দুই হাত কোমড়ে রেখে হেলেদুলে বেশ হেয়ালি কণ্ঠে বললো- কী, লজ্জা পাইতাসো? এই কথা শুনে আমার যেন লজ্জাটা আরো বেড়ে গেছে। ব্যাপারটা বুঝতে পারলো ও। বললো, করো, করো, প্রেমিকার সামনে স্নান করতে দোষ নেই, আমি যাই, এই বলে দরোজাটা ধাক্কা দিয়ে চলে গেলো...।
গোসলের ব্যাপারে আমার কিছু উল্টাপাল্টা কথা আছে। ব্যাকরণভিত্তিক নয়, ঐতিহাসিক তো নয়ই, চরম অগোছালো হলেও বেশ শৈল্পিক এইসব কথা- গোসল জিনিসটা আমার কাছে কোনোদিন শুধুই পরিচ্ছন্ন হওয়ার সাবলীল পন্থা বলে মনে হয়নি। বরাবরই খুব এনজয়ফুল। ব্যাপারটা অন্যেরা কীভাবে নেয়, জানি না। বাট আমার কাছে দুর্দান্ত এক অধ্যায়ের নাম গোসল- একা করলেও ভাল্লাগে, কোনো মেয়েকে নিয়ে করলেও ভাল্লাগে, অনেকের সাথে করতেও ভাল্লাগে। একটু পর গোসল করতে যাবো, এ ব্যাপারটিও আমাকে অনেক না হলেও ঈষৎ আনন্দ দেয়। মানুষ যখন যা-ই করুক না কেনো, সেই সময়টাতে অন্যকিছু করার ইচ্ছাও তার মনে জাগে। শুয়ে থাকলে টিভি দেখতে মন চায়, চা খেলে সিগারেট খেতে মন চায়, হাত ধরলে কিস করতে মন চায়, ইত্যাদি, ইত্যাদি। কিন্তু গোসল জিনিশটা হচ্ছে ইউনিক, এই সময় অন্য কোনো কিছু করার সাধ জাগে না। ...এমনকি, গোসলের সময় কোনোদিন আমার পরম প্রিয় সিগারেটও খেতে মন চায়নি।
সুহানাও আমার কাছে গোসলের মতো প্রিয় একটা মেয়ে। ওরা কাছে গেলে, ওর সামনে দাড়ালে আমি আমার সব প্রেমিকার কথাই ভুলে যাই। মনিকা বেলুচি, পেনেলোপে ক্রুজ এবং জেনেলিয়াদেরও ভুলে যাই। নিমিষেই সে ভুলিয়ে দেয় রাজ্যের সব নারীর কথা। সত্যিকার অর্থে এই মেয়েটা কাগজে-পত্রে আমার কিছুই লাগে না। শুনেছি তালাক শব্দ উচ্চারণ করলেই স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্যের অবসান ঘটে কিন্তু আমাদের সম্পর্ক সাধারণ অথবা কোনো অসাধারণ শব্দে ইতি ঘটবার নয়। কবূল আর কাগজ-পত্রে সুহানার সাথে যার সম্পর্ক, সেই ছেলেটা তার জীবনে এখনো আছে- কাছে নয়, দূরে। তবে মনে হচ্ছে, তাদের সেই সম্পর্কটা আর পুনরুদ্ধার হবার নেই। পয়সাওয়ালা শিক্ষিত অভিজাত ঘরের মেয়ে সুহানা, অসম্ভব রূপবতীও। কিন্তু সমাজ তাকে আলোকিত হতে দেয়নি, জাগতিক সম্পর্কও তাকে অন্ধকারমুক্ত করতে পারেনি। আড়ম্বরপূর্ণভাবেই তার বিয়ে হয়েছিলো বছরদুয়েক আগে, প্রবাসী অর্থসম্পন্ন এক ছেলের সাথে। বিয়ে সপ্তাহখানেকের মধ্যেই সে জেনে যায় তার প্রিয় স্বামী য়ূরোপে একটি বিয়ে করেছে এবং তাদের দাম্পত্য এখনো বহাল আছে আগের মতো।
ঘটনাটি জানতে পেরে সে শ্বশুরবাড়ী থেকে তাৎক্ষণিক চলে আসে। এ ঘটনায় তার শ্বশুর বাড়ীর লোকজন নির্বিকার। স্বামীও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, তার কিছুই করার নেই, বিদেশিনীকে ছাড়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। আর তার পিতামাতা-আত্মীয়স্বজনও আত্মসম্মান রক্ষার্থে এই প্রবাসীর সাথেই তাকে সংসার করে যেতে বলে, অনেকভাবে চাপও দিতে থাকে। সবকিছুকে উপেক্ষা করে দুই বছর যাবৎ মেয়েটা বাবার বাড়ীতেই আছে, স্বামী শ্বশুরালয়ের সাথে তার কোনো যোগাযোগ নেই। তার বাবা মা এখনো চান, সুহানা যেন শ্বশুরালয়ে ফিরে যায়, সেই স্বামীরই সংসার করে। কিন্তু সে তাদের স্পষ্ট বলে দিয়েছে, যাবে না, যাবেই না। আর আমাকে বলেছে, চিরকাল কাছে থাকতে, খুব কাছে, অনেক কাছে। আমি তার কথা রেখেছি, খুব কাছেই আছি আমরা। আমি ৪ তলায়, সে ৫ তলায়। কাগজ-পত্রহীন বলে, আমাদের কাছে সেই একটি মাত্র পাটিশনকে কখনো তীব্র বলে মনে হয় না। ভালো থাকুক সুহানা, ভালো থাকুক সুহানারা...।
সমাজটা কেমন যেন, মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বিয়ে করা ছেলেটি ও তার পরিবারের মধ্যে কোনো অপরাধবোধ নেই। আর সুহানার পরিবারও, মেয়েটার জীবনের দিকে না তাকিয়ে তারা বড়ো করে দেখছে তাদের আত্মসম্মান, কী প্রয়োজন এসব আত্মসম্মানের, পৃথিবীটা সত্যি বিচিত্র!!!

* লেখাটি শফিক রেহমান সম্পাদিত মৌচাকে ঢিল অক্টোবর ২০১২ সংখ্যায় প্রকাশিত।
** নিচের লিংক থেকে আগের দুটি বধূবিদ্যায় চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন।

বধূবিদ্যা : আশা। বালিকাবধূটি এখন অনেক বেশি হাসতে জানে, ভালবাসতে জানে। প্রবাসী+

বধূবিদ্যা : রোদেলা। সেই বালিকাবধূই এখন আমাকে ভালো রাখতে চায়, ভালো থাকতে বলে। প্রবাসী+
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ১:৫১
১৬টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×