ছবি: গুগোল হতে ।
বিশেষ দ্রব্যষ্ট:
আমি ব্লগে কবিতা লিখি তাই এই ধরনের বড় বিবরণ (যার আবার কোন যুতসই ব্যাখ্যা খুজে পাইনি) লেখা আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং । তাই যথা সম্ভব ছোট করে ঘটনাটি লেখার চেষ্টা করেছি ।তবুও আমার দূর্বল লেখনী আর উপস্থাপনা বিরক্তিকর হতে পারে আশংকায় আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। লেখায় স্থান, কাল, পাত্রের বিবরনে ব্যক্তিগত তথ্য গোপন করার প্রয়াস ছিলো বলে দুঃখিত ।লেখাটি সুপাঠ্য হবেনা জেনেও পাঠক প্রতিক্রিয়া আশা করছি ।।
বছর কয়েক আগের কথা, আমি তখন ঢাকার উত্তরাতে থাকি । কোন এক কাক ডাকা ভোরে ফেসবুক ক্রল করছিলাম । কাক ডাকা ভোরের বিশেষত্ব নতুন করে বলার কিছু নেই তবুও নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে কুয়াশারা জানালার পাশঘেসে জামাট বেঁধেছিলো, সাথে মৃদুমন্দ হাওয়া পরশ মনকে উদাস করে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্টছিলো, সে দিন । উদাস মনে নিয়ে কতশত ভাবতে ভাবতে ফসবুকের দেওয়ালে একটা ট্যুর প্রোগাম ইভেন্ট দেখতে পেলাম । সেখানে খুব সুন্দর সুন্দর ছবি সাথে দুরন্ত প্রাকৃতিক দৃশ্যের বর্ণনা দেওয়া ছিলো । আমি এক মুহূর্তে সিধান্ত নিয়ে ফেল্লাম আমিও যাবো তাদের সাথে । এটা ফেসবুক ভিত্তিক গ্রুপট্যুর কোন ট্রাভেল এজেন্সির প্যাকেজ না তাই যেন আরো আকর্ষিত হলাম অজানা এডভেঞ্চারের রোমান্সে । বলতে দ্বিধা নেই এখানে উঠতি সেলিব্রিটিরা (হালের ফেসবুক-ইউটিউব, মডেল,গায়ক- গায়িকা)থাকছে জেনে আমি তো বুমেরাং । সেই কবে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এমন গ্রুপট্যুর করেছি , সবাই এখন যার যার কাজে ব্যস্ত । কয়েকে গ্যালোন তেল খরচ করে তাদের সাথে এমন একটা ট্যুরে প্ল্যান করে শেষে ব্যার্থ হয়েছি কয়েকবার । জীবনে রোমাঞ্চ আনতে ভ্রমণের বিকল্প নেই বলে একটা ফিচারও পড়ছি দুইদন আগে সেটাও ভিতর ভিতর ডালপালা গজাচ্ছিলো । তাই সিধান্ত পাক্কা করতে বেশি বেগ পেতে হলোনা । ছুটির চিন্তা আমার ছিলো না, কদিন পর প্রিয় স্বদেশ ছেড়ে বিদেশ বিভূয়ে যাচ্ছি(আরো একটা ডিগ্রীর জন্য) । তাই সময়ও অফুরন্ত ,শুধু একটা দ্বিধা কাজ করছিলো এখানে যাওয়া কি ঠিক হবে ! ! শিং ভেঙে বাছুর হওয়ার বিড়ম্বনা পোহাতে হবে কিনা কে জানে । নিয়ম কানুনের মধ্যে এইজ রেস্ট্রিকশন্স বলে কিছু নেই দেখে খানিকটা ভরসা পেলাম । তাই লেনদেন সম্পন্ন করে আনুসাঙ্গিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করলাম ।
যথাযত প্রক্রিয়া (ঝামেলা) শেষ করে আমরা তামাবিল পর হয়ে ভারতের -সিলং-আসাম-গোহাটী-মেঘালয়-চেরাপুঞ্জী রুটের উদ্দ্যেশে পা বাড়ালাম । প্রতিমধ্যে আমার গোমড়ামুখো স্বভাবের কারনে সামান্য সৌজন্য বাদে কারো সাথে তেমন আলাপ হয়নি। বর্ডার পর হয়ে সবার মধ্যে অন্যরকম চাঞ্চল্য লক্ষ্য করলাম এবং তা যে আমার মধ্যেও সঞ্চারিত হয়নি তা জোর দিয়ে বলতে পারি না । নিজে কে মুক্ত পাখি মত মনে হলো তাই ডানা মেলে দিলাম । কয়েক জনের সাথে পরিচয় হলো যাদেরকে মাঝে মধ্যে টিভিতে দেখি । অভিজাত ট্যুর ছিলো তাই সব সুবিধা ছিলো মানসম্মত, তাই সাচ্ছন্দে সময় কাটতে লাগলো । প্রতিটি জনপ্রিয় স্পট ঘুরে দেখার পর একদিন করে সময় থাকতো নিজেদের মত করে ঘোরা অথবা কেনাকাটার জন্য, তাই আমরা আলাদা আলাদা ভাবে তুলনামূলক অজনপ্রিয় স্পট ঘুরে দেখতে লাগলাম । আমি একটা ৫ জনের গ্রুপে ছিলাম সাবাই অতিরিক্ত রোমাঞ্চপ্রিয় বলে আমার মনে হয়েছে। তাদের কর্মক্ষেত্র মিডিয়া সংশিষ্ট বলে তারা খোলামনের মানুষ, তাই দ্রুতই সবার সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো । বাস্তবে তাদের সম্পর্কে ধারনাটুকু ততোদিন বদলে গিয়েছে তাই প্রাণখুলে সবাই প্রকৃতির সঙ্গে সময়টুকু উপভোগ করতে লাগলাম । তারপর একদিন সেই অতিভৌতিক ঘটনার মুখোমুখি হতেই হলো আমাকে ।
সে দিন ফ্রি ডে ছিলো, মানে নিজেদের মতো করে ঘোরার দিন আরকি । গত রাতেই আমরা সিধান্ত নিয়েছিলাম সেই মোতাবেক শহরের কাছেই (২৪ কিলোমিটার) একটা পুরোনো বাড়ি দেখতে যাবো । আমাদের স্থানীয় গাইড সে ব্যাপারে রসিয়ে, রসিয়ে অনেক বর্ণনা দিয়েছিলো সেগুলো প্রাসঙ্গিক নয় বলে উল্লেখ করলাম না । তবে পরে যদি কোন প্রাসঙ্গিকতা চলে আসে তবে পাঠক মিলিয়ে নেবেন আশাকরি।
যাই হোক , ঘটনার দিন খুব সকালে আমরা ল্যান্ড রোভার গাড়ী করে স্পটের উদ্দ্যেশে রওনা হই । প্রচন্ড কুয়াশাছিলো আর রাস্তার অবস্থা নাই বা বলি । আমরা দুইপাহাড়ের মাঝখানদিয়ে বয়ে চলা একটা ঝিরির (পাহাড়ী ছোট নদী) পাঁশদিয়ে ছোট ছোট গ্রাম পার হয়ে গন্তব্যে পৌছাই আনুমানিক সাড়ে দশটায় । তবুও মনে হচ্ছিলো যে ঝুপ করে সন্ধ্যা নেমে আসবে, চারিদিকে কুয়াশাজড়ানো অতভূতুড়ে পরিবেশ । অনুভূতির সপ্তদর্শণ তখনো বাকীছিলো কে জানে । বাহন থেকে নেমে ভেবেছিলাম বুঝি পৌছে গেছি কিন্তু জানতে পারলাম এখনো দু কিলোমিটার মতো হাঁটতে হবে,সামনে রাস্তা থ্রিহুইলারও চলার উপযোগী নয় । হাঁটার কথা শুনে অনেকে রণভঙ্গ দিতে চাইলো কিন্তু গাইডের বর্ণনায় অনুসন্ধিৎসার পালে বাতাস পেয়ে তরতরিয়ে এগিয়ে চললাম আমরা । কোন এক অচেনা দ্বীপ আবিষ্কারের নেশায় মত নাবিক এক এক জন । পিন পতন নিরবতা উপমা যেখানে খাটে না , এক একটা অচেনা পাখির ডাকও যেন হৃদপিন্ড এফোঁড় ও ফোঁড় করে চলে যাচ্ছে ।ঝুকে পড়া গাছে ডালের ঝোলা লতা সরিয়ে পথ করে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা গাইড কে অনুসরন করে । মনে হচ্ছে আমাদের পিছনের পথ যেন বেমালুম মিলিয়ে যাচ্ছে ,শুকনো মারা বিশাল এক অশ্বথগাছ যেন স্পটত আমাকে ভেংচি কাটলো । আমি এগুলো পাত্তা দিলাম না, এ রকম পরিবেশে এরক দৃষ্টিবিভ্রম হতেই পারে । আমার একটা ছোট টিলা বেয়ে এগুতে লাগলাম ,প্রতিমধ্যে অনেক গুলো কাঁটা গাছের গুড়ি দেখতে পেলাম আর সেখানে কয়েকজন স্থানীয় মানুষ আর তাদের অন্যরকম দৃষ্টি তারা স্থানীয় ভাষায় গাইডেরে সাথে কি যেন বললো। ভাষা না জানলেও ধারনা করলাম এদিকে অনাধিকার প্রবেশ তাদের পছন্দ নয়,সাথে অল্পবিস্তর সর্তকবার্তা । আমরা একটুআধটু যে ভয়পেলাম না তা জোর দিয়ে বলাছি না । তবে গাইড বারবার আস্বস্ত করতে লাগলো আর শোনাতে লাগলো অবিশ্বাস্য সব উপকথা। তবুও মনের মধ্যে খচখচনি দূর হলো না, এই পতিত বনের মধ্যে কেন এসছি তাই নিজেকে তিরস্কার করতে লাগলাম । অল্পক্ষনের মধ্যে আবার সবাই মিলে ডিফরেস্টেশনের কুফল নিয়ে আলোচনায় মেতে উঠলাম । কিচ্ছুক্ষনের মধ্যে আমাদের সামনে অল্পঘোলা জলের মাঝারি একটা লেক উদ্ভাসিত হলো,কুয়াশায় আকাশ ঢাকা থাকায় সূর্যের আলোর কোন দেখানেই তার উপর পানি থেকে ধোয়া ওঠছে । লেকের ওপারে উচু সমতলে একটা লোকালয় বলে মনে হলো। গাইড মারফত জানতে পারলাম আমাদের কাঙ্খিত গন্তব্য ওখানেই । প্রথমে যেটাকে ঘোলাপানির লেক মনে করে ছিলাম আদতে সেটা অগভীর এখানে মাছ চাষ হয় তাই কৃত্রিম ভাবে অনেকগুলো বাঁধ দেওয়া হয়েছে। আঁকাবাঁকা সেই বাঁধ ধরে আমরা লেক পার হয়ে ছোট্ট একটা গ্রামে পৌছালাম । পুরোগ্রাম যেন হুমড়ী খেয়ে পড়লো আমাদের উপর আর সরুচোখে আমাদের দেখে ছেলে-বুড়ো সবাই কানাকানি করকে লাগলো। জনা ৫০ হবে গ্রামের জনসংখ্যা । ধারনা করলাম এদিকে টুরিষ্ট আসে না তাই তারা এতো কৌতুহলি।নিজেকে স্যার লিভিংস্টোন বলে মনে হতে লাগলো, যেন দূর্গম আফ্রিকার কোন জনপদ আবিষ্কার করে ফেলেছি । আমরা স্থানিয়দের সাথে ছবি তুললাম কথাবলার চেষ্টা করলাম আমাদের গন্তব্য সমন্ধে যে ধারনা পেলাম তা মোটামুটি হরর সিনেমার মত, তখনো এতোটা আশা করনি যে কি ঘটতে চলেছে আমাদের সাথে । একজন বয়ষ্ক একজন জানালো এখানে লেকের দক্ষিন পাড়ে পুরোন বাংলো আছে যেটা কোন এক ইংরেজ সাহেব বানিয়েছিলেন এখানে চা বাগান গড়ে তোলার প্রতয়ে, তবে তিনি সফল হননি তার স্ত্রীও কন্যার মিত্যুতে তিনি এই এলাকাছেড়ে চলে যান । তারপর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দল কিছুদিন ঘাঁটিগেড়েছিলো এখন আর্মির তৎপরতায় তারা এলাকা ছেড়েছে এবং বাংলোটা পুড়িয়ে দিয়েছে । পুরো সময় আমাদের গাইড কাম অনুবাদকের সব গল্পে ছাই পড়ে গেলো সাথে তার মুখে কালো পর্দা, সে যে কিছুই জানে না তার সে গোমর ফাঁস হয়ে গেলো। অবশ্য আমাদের কয়েক জনের দায়ও আছে হন্টেড প্লেস হন্টেড প্লেস করে গাইডের মাথাখারাপ করে তুলেছিলো । কি আশা করে ছিলাম ভূতবাংলো দেখবো আর এখন কি শুনছি । বেচারা গাইড নিজেও আশাহত হলো, তবুও যে নির্মল প্রকৃতিরমধ্যে সময় কাটাচ্ছি তা আমাদের জন্য যথেষ্ট বলে আমরা পা টেনে টেনে পোঁড়াবাংলোর দিকে এগুতে লাগলাম। আমরা স্থানীয় অতিরিক্ত কিছু পিচ্চি অভিযাত্রী পেলাম, তারা খুবই উৎসাহি ।এতদূর এসেতো আর ফিরে যাওয়া যায় না। কয়েক মিনিট হাঁটার পর আমরা জঙ্গলে ঢাকা একট কম্পাউন্ডের গেটে এসে দাড়ালাম । লোহার রড দিয়ে তৌরি গেটের দরজা দেওয়াল পথরেরচাই দিয়ে উচু করা,মনে হলো এগুলো বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ডিফেন্সিফ পজিশন ছিলো । লোহার মোটা মোটা রডে তৌরি সদর দরজা কেন এখনো এখানে আছে বুঝলাম না আমাদের দেশের চোররা টিনের বেড়া খুলেনিয়ে যায় আর এখানে কি সুন্দর পেটানো লোহা । যাক মনে মনে ভাবলাম ভূতবাংলো না হোক উলফার ক্যাম্প দেখতে পেলাম তা বা কম কিসে !! দরজা খোলই মানে তালা নেই, আর নেই কোন কতৃপক্ষ তাই তোড়জোড় ছাড়াই ভিতরে ডুকে পড়লাম।ছবি যে বিভিন্ন ফ্রেমে বিভিন্ন কোন থেকে তোলা হচ্ছে তা আর বলতে । তবে কোন এক আশ্চর্য কারনে স্থানীয় বাচ্চারা আমাদের সঙ্গ দিতে ভিতরে আসলো না । আমি ছাড়া অন্য কেউ বোদহয় তা খেয়াল করলো না । সবাই আজকের অভিযানের অন্তিম পর্যায়ে বুদ হয়ে গেছে, ঠিক তখনি ধংসস্তুপের পাশে উল্টদিকে মুখকরা একটা পরিচিত মানুষকে দেখতে পেলাম । আমি নিশ্চিত হতে এগিয়ে গেলাম, স্পষ্ট দিনের আলো তখন যদিও কুয়াশা আর গাছের পাতার ফাঁকগলিয়ে আসা দূধর্ষ আলোর লুকোচুরি তখনো চলছে । আমি আস্ত আস্ত এগিয়ে গেলাম,কাছে যেতেই মানুষটা আমার দিকে মুখ ফিরালো । আমার বাল্যকালের বন্ধু রহিম(ছদ্দনাম) আমাকে দেখে হাঁসছে আর বলছে কেমন আছিস দোস্তো আয় আয় ঈদের কোলাকুলি করি । আমি কিছু না বুঝে (যাকে বলে যাদু কি ঝাপ্পি)কোলাকুলি করলাম । বহুদিন বাদে স্কুলজীবনের প্রিয়বন্ধুকে পেয়ে আনন্দে অভিভূত হয়ে গেলাম । আমি রহিমের সাথে সাচ্ছ্যন্দে আমার আঞ্চলিক ভাষায় গল্পশুরু করলাম একমুহূর্তে যেন বাল্যকালের গ্রাম্যস্কুলে ফিরে গেলাম স্মৃতির পাতা উল্টে সাদাকালো সময়কে ফিরিয়ে নিয়ে এলাম আজকের রঙিন সময়ে । হঠাত আমার মাথায় বিদুৎ খেলে গেলো রহিমতো বেঁচে নেই সপ্তম শ্রেণীর বার্ষিক পরিক্ষা শেষে মামা বাড়ি বেড়াতে গিয়ে বাস দূর্ঘটনায়...।আমি আর কিছু চিন্তা করতে পারছিলাম না । আমি নিজে ওর মৃতদেহ দেখেছি । তবে আমি আজ ভারতের এক শহর হতে দূরে জংগলে ঘেরা পরিত্যক্ত বাংলোর আঙিনায় । এক মুহূর্তের মধ্যে নিজেকে গুছিয়ে নিলাম, নিজের শরীরে আলতো করে চিমটি কেটে দেখলাম না সব ঠিক আছে । আমাকে অস্বাভাবিক দেখে রহিম বললো অবাক হয়েছিস তাই না ? আমি এখানে কি করছি ইত্যাদি । ওর পরবর্তি কথাগুলো যেন আমরা কানে আসছিলো না , আমি শুধু তার নড়ে নড়ে ওঠা ঠোঁট আর চোখ-মুখের অভিব্যক্তি দেখতে পাচ্ছিলাম । সেই চোখ সেই মুখ,সেই অঙ্গভঙ্গি শুধু বয়সটা একটু বেড়েছে , এ সে কিশোর রহিম নয় তবে সে আমার বন্ধু তা আমি শতভাগ নিশ্চিত । আমি পাগল হয়ে যাইনি , কথার ফাকেঁ আমি ফোনে দিন, তারিখ, সময়, দেখে নিয়েছি, আশে পাশে তাকিয়ে দেখি সবাই স্ব-উৎসাহে কতকিছু ব্যাখা করছে। আমার গাইড আমাকে দোতালা ভাংগা বাড়িটায় উঠতে ডাকলো সবাই নাকি গ্রুপফটো নিবে । রহিম আমাকে তার বাড়িতে আমন্ত্রন জানালো আমার তাড়া দেখে সঙ্কুচিত মুখে বললো আসবি তো ? আমি কোন কিছু না চিন্তা করে বললাম আসবো । তারপর এক নিঃশ্বাসে কয়েকটা প্রশ্ন করলাম এদেশে কি করে আসলি? কোথায় থাকসি ? কি করিস ইত্যাদি । সে মৃদু হেসে বললো আয় পরে কথা হবে সন্ধ্যার সময় তোর হোটেলে আসবো বলে গেট দিয়ে বেরিয়ে চলে গেলো । আমি পরমূহুর্তে ভাবলাম আমিতো ওকে হোটেলের ঠিকানা বলিনি ! তাই দৌড়ে গেটের কাছে গিয়েও সোজা রাস্তায় কাউকে দেখতে পেলাম না ।
তার মধ্যে সবাই আবার ডাকাডাকি শুরু করলো বলে ফিরে এলাম । এখানে দেখার তেমন কিছুই নেই সবই সাদামাটা একপুরোনো বাংলোর ধ্বংস্তুপ আর অধুণালুপ্ত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ডেরা । কিছুক্ষণ সেখানে থেকে আমরা হোটেলের উদ্দেশ্যে প্রথমে পায়ে হেঁটে তারপর গাড়ীযোগে আমাদের হোটেলে পৌছালাম । খেয়ে-দেয়ে হোটেলের বেলকুণিতে বসে আজকের ঘটে যাওয়া ঘটনা মিলাতে লাগলাম । আচ্ছা সে কি আসলেই রহিম ছিলো না রহিমের মত দেখতে অন্যকেউ ! যদি অন্যকেউ হবে তাহলে এতো কথা জানলো কি করে ,নাকি রহিম মরেনি ? বেঁচে থাকলেও এখানে কেন ? অনেক গুলো প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো । যুক্তি দিয়ে ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করলাম কিন্তু তেমন কোন ফলাফল পেলাম না । একবার ভাবলাম আমি হয়তো শৈশবের সেই ট্রমা মাথায় নিয়ে ঘুরছি বলে আজ তাকে হ্যালুসিনেট করেছি কিন্তু কিভাবে তা সম্ভব । কথাটা ভাবতেই আমাদের গাইড কে ফোন দিলাম ফোনে পাওয়া গেলো তাকে জিজ্ঞাসা করলাম সে যখন দুপুরে আমাকে গ্রুপফটো তুলতে ডেকেছিলো তখন আমি যার সাথে কথা বলছিলাম তাকে চিনে কি না ? সে হতভম্ব হয়ে বললো স্যার ফোন করে রসিকতা করেন যে ,আমি যা বোঝার বুঝেনিলাম। সাথে প্রচন্ড ভিরমি খেলাম এমন একটা মানসিক সমস্যা রয়েছে আমার ।মনেমনে ঠিক করলাম ঢাকায় ফিরে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। তারপর মোটামুটি নিশ্চত হয়ে ঘুমানোর জন্য বিছানাতে গেলাম ।
ঘুমভাঙলো দরজা নকের শব্দে খুলেদেখি হোটেলের কর্মচারি আমার নাকি ভিজিটর আছে নিচে লবিতে অপেক্ষা করছে । ততক্ষনে সন্ধ্যা হয়ে গেছে, গোছাতে গোছাতে ভাবতে লাগলাম কে হতে পারে ? তার সাথে আমাদের টিম লিডার কে ফোন দিলাম সে জানালো তারা সবাই মিলে সিনেমা দেখতে গেছে আমি ঘুমে ভেবে বিরক্ত করেনি । আমি তাকে শুকনো ধন্যবাদ দিয়ে ফোনটা রাখলাম । মনের মধ্যে আশংকা জেগে উঠলো রহিম কে কি তাহলে সত্যি দেখেছি ? সেই কি এসেছে ? তা না হলে বিদেশে কে আসবে তাছাড়া এখানে আমার পূর্বপরিচিত কেউনেই । দূরুদূরু মন নিয়ে সিড়ি ভেঙে নিচে নামতে লাগলাম, সিড়ির মাঝামাঝি এসে দেখি লবি মোটামুটি খালি ডেস্কের আর্ভ্যথনাকারীরা ছাড়া জনা কয়েক মহিলা ও শিশু কোন পুরুষ মানুষ নেই । আহ! একটা স্বত্বির নিঃশ্বাস বেরিয়ে গেলো বুকের মধ্যে থেকে , নিচে নেমে দেখি আমাদের দলের একজন ফিমেল সদস্য । ওনি সব সময় কেমন মনমরা হয়ে থাকনে ,আজ দেখলাম হাঁসি-খুশি । সে জানালো সে সিনেমায় যায়নি আমি আছি যেনে খবর পাঠিয়েছে । তারপর তার একাকিত্বের সঙ্গী হতে আমন্ত্রন জানালো, আমি বললাম কি সৌভাগ্য আমার । সে মিষ্টি হেসে সৌজন্য করতে কড়া বারণ করলেন । আমরা ডিনারের জন্য পূর্বনির্ধারিত রেস্টুরেন্টে গিয়ে কফি খেলাম। যাক আমি নিশ্চিন্তবোধ করলাম, রহিমের ব্যাপারটা মন হতে খানিকটা মুছে গেছে ততক্ষনে । বলে রাখা ভালো আমি তখনো ব্যাচেলার তাই সুন্দরীর সঙ্গ উপভোগ করলাম, সু-পুরুষ হিসাবে নিজেকে উপস্থাপন করতেও সক্ষম হলাম। কিছুক্ষন পর সিনেমা শেষ করে আমাদের গ্রুপের অনন্য মেম্বারও রেস্টুরেন্টে হাজির হলো, আমাদের ইভেন্টের শেষদিন ছিলো বলে ডিনারের আয়োজন ছিলো কিন্তু বিপত্তি তো তখনো আমার পিছুছাড়েনি । ডিনারের দেরি হবে বুঝে বাইরে বের হলাম তাছাড়া হৈইহুল্লোড় ভাল্লাগছিলোনা । সিগারেট হাতে হাঁটতে হাঁটতে একটা গলির মধ্যেঢুকে পড়লাম ,অচেনা শহর তাই দ্রুতই রাস্তা হারালাম । ফোন বের করে গুগোলম্যাপ বের করছি হঁঠাত কে যেন ডাক দিলো দোস্তো.....(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:২৩