somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি ভুতুড়ে অভিজ্ঞতা

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেপ্টেম্বর ১৩। আনলাকি থার্টিন।

বার্ডে দুই মাসের ফাউন্ডেশন ট্রেনিং এর শেষ দিন। বিদায়বেলায় একটু মন ভারাক্রান্ত। দুপুরের খাবার শেষে কোর্সমেট কয়েকজন মিলে প্রাণচঞ্চল কুমিল্লা শহর পরিভ্রমণ করলাম। ধর্মসাগর, অরিজিনাল আদি মাতৃভান্ডার, খাদির দোকান ঘুরে, কেনাকাটা শেষে সন্ধ্যায় বার্ডে শেষবারের মত ফিরে এসেছি। বিদায় শেষে নোয়াখালীর উদ্দেশ্যে রওনা দিতে দিতে রাত সাড়ে আটটা। আমি আর সারওয়ার ভাই মাইক্রোতে নোয়াখালী ফিরবো, মাইক্রো ড্রাইভার তোফায়েল - বেশ রসিক ও মিশুক মানুষ। ফিরতিপথে মনে হল কুমিল্লার প্যারা সন্দেশ বাসায় নিয়ে যাই, সুতরাং হাইওয়ের একটা হোটেলে গাড়ি থামিয়ে হালকা পেটপুজো, তারপর কেনাকাটা সেরে পুনরায় যাত্রা। প্রচন্ড বৃষ্টিতে সেসময় পদুয়ার বাজার হয়ে লাকসাম বাইপাস রোডের বেহাল দশা, তাই আমরা ফেনীর পাঁচগাছিয়া বাইপাস দিয়ে নোয়াখালীর চৌরাস্তা - মহীপালের রাস্তা ব্যবহার করে নোয়াখালী ফিরতাম।

যাই হোক, স্মৃতিচারণ-গল্প করতে করতে ভ্রমণ করছি। দেরীতে যাত্রা, বিরতি, একটু ঘুরপথ, রাস্তার জ্যাম সব মিলিয়ে বেশ দেরী হয়ে গিয়েছিল। নোয়াখালী-মহীপাল আঞ্চলিক রোড বেশ নির্জন। কিছু ট্রাক, দুয়েকটা বাস আর হাতেগোণা প্রাইভেট গাড়ী, রাস্তায় তেমন জনমনিষ্যিও নেই। জায়গাটা কোথায় মনে নেই, রাত প্রায় ১০:৩০ টা বাজে তখন, নিকষ কালো আঁধার চারিদিকে আর নির্জন রাস্তায় হু হু করে গাড়ী এগিয়ে চলছে। কিছু সামনেই একটা ট্রাক, তোফায়েল প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে ট্রাকটা ওভারটেক করবে। ট্রাক ফুলস্পীডে, আমরা মোটামুটি গতিতে; হঠাৎ দেখি আপাদমস্তক কাপড় মোড়ানো, মাথায় ঘোমটা দেয়া একজন মহিলা ঠিক আমাদের গাড়ীর সামনে দিয়ে স্বাভাবিক গতিতে হেঁটে বাম দিক হতে ডান দিকে রাস্তা পার হয়ে গেলেন আর তারপর আর দেখতে পেলাম না। ডানে-বামে না তাকিয়ে মুখ নিচু করে রাস্তা পার হয়েছেন, ট্রাক এবং আমাদের মাঝ দিয়ে, গাড়ী দুইটিও ভালো স্পীডেও ছিল, যেন মহিলা জানতেন তার সাথে আমাদের গাড়ীর দুর্ঘটনার কোন সম্ভাবনাই নেই। হাঁটার গতিও এতই স্বাভাবিক ছিল যেটা অবাক হবার মতই, একটু দৌড়ে বা দ্রুতগতিতে তো রাস্তা পার হবার কথা! তোফায়েল গাড়ীর গতি এতটুকুও কমায়নি, এমনকী স্টিয়ারিং ঘোরায়নি পর্যন্ত, সে খুব স্বাভাবিকভাবেই জায়গাটা পেরিয়ে চলে এল।

আমি একটু দ্বিধায় পড়ে গেলাম, এত রাতে একজন মহিলা নির্জন রাস্তায়, তার উপর এত স্বাভাবিক ভাবে রাস্তা পার হল, তার তো দ্রুতগতির গাড়ী দেখে ন্যূনতম আতংকিত হবার কথা ছিল। আমি কি চোখের ভুল দেখলাম কিনা, সারওয়ার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখি তিনিও অবাক হয়ে গেছেন, এমনকি তোফায়েলও মহিলা কে দেখেছে যদিও সে গাড়ীর গতি কিন্তু কমায়নি।

গাড়ীর ভেতরে একটু থম মেরে থাকলাম কিছুক্ষণ, তারপর আলোচনা শুরু হল। তোফায়েল জানাল গভীর রাতে গাড়ি চালানোর সময় সে আগেও বেশ কয়েকবার এই রাস্তায় হুবহু একই রকম এক মহিলাকে রাস্তা পার হতে দেখেছে। তার ধারণা এই মহিলা এখানেই কোন এক দুর্ঘটনায় হয়তো মারা পড়েছিলেন যার জন্য এই অশরীরী অভিজ্ঞতা এই রাস্তার চালকদের গভীর রাতে মাঝে মাঝে ফেস করতে হয়। চালকরা এই মহিলাকে দেখে কখনোই গাড়ীর গতি কমায় না, ব্রেক তো দূরের কথা।

হয়তবা সত্যিও হতে পারে, পৃথিবীর কত রহস্যই বা আমরা জানি! আবার এমনো হতে পারে আশেপাশে কোন লোকালয় বা বাজার আছে, গ্রামের মহিলা কোনরকম বাছবিচার না করেই রাস্তা পার হতে গিয়েছে। যেটাই হোক, রহস্য যাই থাকুক না কেন কিছুটা ভয় তো পেয়েছিলাম বটেই। সত্য-মিথ্যার তর্কে যাবো না, আমার অশরীরী অভিজ্ঞতার ভান্ডারে ঘটনাটা যুক্ত হল।

১৩ সেপ্টেম্বরের ঘটনাটা সবার সাথে শেয়ার করলাম, যাতে কোন পাঠক যদি কখনো চৌরাস্তা-মহীপাল রাস্তায় গভীর রাতে ভ্রমণ করেন, তিনিও এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন কিনা জানার ইচ্ছে রইল।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৬
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এই শহর আমার নয়

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:০২




এই শহর আমার নয়
ধুলিমলিন, পোড়া ধোঁয়ায় ঘেরা
ধূসর এক স্বপ্নহীন চেহারা।
এই শহর, আমার নয়।

ঘোলাটে চোখে জমে হাহাকার,
চেনা মুখেও অচেনার ছাপ।
পথে পথে স্বপ্নরা পোড়ে,
আলোর ছায়ায় খেলে আঁধার।

এই শহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

টিউবওয়েলটির গল্প

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:০৪



এটা একটি টিউবওয়েল।

২০০৯ সালে, যখন আমি নানী বাড়ি থেকে লেখাপড়া করতাম, তখন প্রতিদিন এই টিউবওয়েল দিয়েই গোসল করতাম। স্কুল শেষে ক্লান্ত, ঘামাক্ত শরীর নিয়ে যখন ঠান্ডা পানির ঝাপটায় নিজেকে স্নান... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজায় গণহত্যা : মুসলিম বিশ্বের নীরব থাকার নেপথ্যে !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:৫৮


গাজার প্রতিটি বিস্ফোরণে কেবল ধ্বংস হয় না —প্রতিধ্বনিত হয় একটি প্রশ্ন: মুসলিম বিশ্ব কোথায় ? মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির আয়নায় এই প্রশ্নটি এক খণ্ড অন্ধকার, যা শুধু আন্তর্জাতিক রাজনীতির ব্যর্থতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লেখকের প্রাপ্তি ও সন্তুষ্টি

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ০৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১২:০০

একজন লেখক যখন কোন কিছু লিখেন, তিনি কিছু বলতে চান বলেই লিখেন। বলাটা সব সময় সহজ হয় না, আবার একই কথা জনে জনে বলাও যায় না। তাই লেখক কাগজ কলমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওয়াকফ: আল্লাহর আমানত নাকি রাজনীতির হাতিয়ার?

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ০৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:৫৯


"একদিকে আমানতের আলো, অন্যদিকে লোভের অন্ধকার—ওয়াকফ কি এখনও পবিত্র আছে?"

আমি ইকবাল হোসেন। ভোপালে বাস করি। আমার বয়স প্রায় পঁইত্রিশ। জন্ম থেকে এখানেই বড় হয়েছি, এখানেই আমাদের চার পুরুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×