বাবা সরকারি চাকুরী করেন। সেই সুবাদে অফিস বদলী, নতুন অফিসে ঢুকে প্রথমদিন টেবিলে বসেই একটা ব্যপার লক্ষ্য করলেন। অফিসের বস হওয়াতে বাবার জন্য একটা কলিংবেল আছে- যাতে প্রয়োজনে বেল টিপে অফিস পিয়নকে ডাকা যায়। কলিংবেলের সুইচ খুঁজতে গিয়ে দেখলেন সেটা টেবিলে পায়ের নিচে রাখা। আগের যাঁরা অফিসার ছিলেন তাঁরা পিয়ন ডাকার জন্য পা দিয়ে সুইচ চাপ দিতেন, শব্দ শুনে পিয়ন হাজির হয়ে যেত। প্রথম দিনেই বাবার মন খারাপ হয়ে গেলো। পিয়ন সে যে শ্রেণীরই কর্মচারী হোক না কেন সেও তো মানুষ! হয়তো সব অফিসেই এই-ই নিয়ম, হয়তো তাঁর নিজেরো এভাবে ডাক শুনতে শুনতে অভ্যাস হয়ে গেছে, এমনো হতে পারে হয়তোবা তাঁরো মনের গভীরে এই নিয়ে ক্ষোভ-কষ্ট আছে। বাবার মনে হল পদমর্যাদায় যা-ই হোক একজন মানুষকে আমি কেন পা দিয়ে ডাকতে যাবো? অফিসে প্রথম যে পরিবর্তনটা করলেন উনি তা হচ্ছে সেই কলিংবেলের সুইচটা সাইড টেবিলে তুলে আনলেন।
প্রথম যখন এই ঘটনাটি শুনি একই সাথে খুব ভালো এবং খারাপ লেগেছিলো। খারাপ লেগেছিলো এজন্য যে এখনো আমরা অনেক ক্ষেত্রে মানুষকে সামান্য সম্মানটুকু দিতে পারিনি। আর যারা এই সম্মানটুকু দিতে জানে সেরকম নগণ্য কিছু মানুষের মাঝে বাবা একজন এজন্যে ভালো লেগেছিলো। মাঝে মাঝে দেখি সামান্য দুই-পাঁচ টাকার বাস বা রিক্সা ভাড়ার জন্য যথাশিক্ষিত লোকজন কেমন আচরণ করছে। সব-সময় যে অকারণে হয় তা নয়, কিন্তু অনেক সময়ই সুন্দর আচরণে বিষয়গুলো সমাধা করা যায়। বাপের বয়সী রিক্সাওয়ালা-কে তুমি/তুই বলে ডাকা নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যপার। কেন আমরা ভুলে যাই শেষপর্যন্ত আমরা সবাই মানুষ, হয়তো ভাগ্যের ফেরে আমরাও সে জায়গায় থাকতে পারতাম।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:২০