বেগুনবাড়ি-হাতিরঝিল প্রকল্প: ছয়তলা ভবনসহ নয়টি স্থাপনা উচ্ছেদ
সেনাসদস্যসহ দাঙ্গা পুলিশের সহায়তায় এ অভিযান চালানো হয়
সূত্র: প্রথম আলো
ঐ প্রকল্প এলাকায় অনেক আগে থেকেই আমি নিয়মিত যাতায়াত করি। পরিবর্তনটা আমি নিজ চোখেই দেখেছি। প্রকল্পের কাজটা জোরেশোরে শুরু হয় সেনা সমর্থিত গত তত্বাবধায়ক সরকার আমলে। প্রকল্প বাস্তবায়নে সেনাবাহিনীর বড় ভূমিকা আছে।
যে স্থাপনা গুলো উচ্ছেদ করা হয়েছে সেগুলো হয়ত অবৈধ। সেটা নিরুপন করার দায়িত্ব আদালতের। আদালত নিশ্চয়ই সেটার সমাধান দিয়েছেনও। আদালতের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব প্রশাসনের। প্রশাসন পুলিশের সহায়তা নিয়েই এই জাতীয় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে। গনতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় এটাই যথেষ্ট। প্রশাসন চাইলেই আইনগত ভাবে সেনা মোতায়েন করতে পারে। কিন্তু এই উচ্ছেদ অভিযানে সেনা সদস্যদের উপস্থিতির উদ্দেশ্য কি?
প্রশাসন কি ধরেই নিল পুলিশ দিয়ে হবে না? সেনা সদস্যদের প্রয়োজন পরল কেন? পুলিশ দিয়ে না হলে সেনা সদস্যরা কি করবে? গুলি ছুড়বে? ওটা কি যুদ্ধক্ষেত্র? আদালতের রায় বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশাসনের সন্দেহ ছিল কি? তাই কি একধরনের জোর করা হল? প্রশাসন কি সন্ত্রাসীদের মত জোর যার মুল্লুক তার নীতিতে বিশ্বাসী হয়ে পরছে? সাধারন মানুষকে সামরিকশক্তির ভয় দেখিয়ে প্রশাসন কি হাসিল করল? সেনাবাহিনীকে তাহলে কি সাধারন মানুষকে ভয় দেখানোর কাজেই রাখা হয়েছে? দেশের আরও এমন অনেক অবৈধ কাজের ব্যপারে কেন সেনা মোতায়েন হয় না? এই জোর করে উচ্ছেদ কার স্বার্থে?
অনেকেই হয়ত বলবেন সেনাসদস্যদের ছাড়া উচ্ছেদ করা যেত না তাই তাদের উপস্থিতি ঠিক আছে। Desperate situation requires desperate measures – মানলাম। কিন্তু এটা কি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হল? এভাবে কি কোন সমস্যার সমাধান হয়েছে কোনদিন? এই জাতীয় অস্থায়ী সমাধান কি আরও বড় সমস্যা ডেকে আনে না? ক্রসফায়ার করে সন্ত্রাসীদের কি পুরোপুরি নির্মূল করা গেছে? অপরাধ আসলে কতটুকু কমেছে?
সেনাবাহিনী রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ন প্রতিষ্ঠান। শুধু যুদ্ধ নয়, শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা বা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাজেও তাদের অনেক ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে সেনা সদস্যদের যথেচ্ছা ব্যবহার করে তাদের কি বিতর্কিত করা হচ্ছে না? এমনও দেখা গেছে যে সেনাসদস্যদের দিয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রন করা হচ্ছে! সব কিছুরই একটা চটজলদি অস্থায়ী সমাধান বের করা আরকি!
জোর যার মুল্লুক তার নীতিই যদি প্রশাসনের পছন্দ হবে তাহলে পূর্নাঙ্গ সামরিক শাসন আসুক না, ক্ষতি কি ?! কিন্তু সেনাশাসনের অধীনে প্রশাসন তাহলে কেন অস্থস্তি বোধ করেন?
সমস্যার সমাধানে শর্টকাট বলে কিছু নেই। যে কোন গভীর সমস্যার মৌলিক সমাধানই আমাদের মত সাধারন জনগনের কাম্য। একজন সাধারন খেটে খাওয়া মানুষ হিসেবে উপরের প্রশ্নগুলি করা আমার অধিকার। গনতন্ত্রের একটা বড় বৈশিষ্ট্য জবাবদিহিতা। এসব ছোটখাট সিদ্ধান্তও কি সরকারের প্রতি আমাদের অনাস্থা তৈরি করে না?
(এই বিষয়ে আপনি কি ভাবছেন? মন্তব্য আশা করছি। জবাব দেয়ার দায়িত্ব অবশ্য আমার নয়! সরকারের !! )
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০১০ দুপুর ২:০০