স্বল্পদৈর্ঘ্য ব্লগীয় সাইন্স ফিকশনঃ আজি হতে ১৫০০ বছর পর - ১ম পর্ব
১।
মহামান্য কিটির মুখে তৃপ্তির হাসি। যাক! শেষ পর্যন্ত সামহোয়ারইনব্লগকে
আবার দাঁড়া করানো গেছে। অবশ্য পুরো সাইটটাকে দাঁড় করাতে তাকে কম ঝামেলা পোহাতে হয় নি।
১৮+ অনেকগুলা পোস্ট পড়ে তিনিই প্রথম সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে সামুকে আবার দাঁড় করাতে হবে। তার সিদ্ধান্ত সব বিজ্ঞানীদের জানাতেই সবাই রাজি হয়ে গেলেন। মহামান্য কিটি প্রযুক্তি বিভাগকে আদেশ করলেন ৩০ ঘন্টার ভেতর আবার সামুকে দাঁড় করাতে হবে। প্রযুক্তি বিভাগের প্রধান প্রায় অমানুষিক পরিশ্রম করে তার টিম নিয়ে আবার সামুকে দাঁড় করালেন। ব্যানারে লিখে দিলেন
"সামু রিটার্নস!!"
২।
পুরো পৃথিবী জুড়ে সামুতে রেজিস্ট্রেশনের জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে গেলো। ফলস্বরূপ কিছুদিনের মধ্যেই সামুর ইউজারের সংখ্যা কয়েক লক্ষ ছাড়িয়ে গেলো। মহামান্য কিটি সারাদিন ব্লগে পড়ে থাকেন। বেশিরভাগ সময়ই তিনি ১৮+ পড়েন। যদিও কেউ জিজ্ঞেস করলে ভাব নিয়ে বলেন,
"মহাজাগতিক অর্থনীতি আর ব্যবহারিক বিজ্ঞানের সমন্বয় নিয়ে লেখাই আমার বেশী পছন্দ। আমি ঐগুলো পড়তেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।"
মহামান্য কিটি আরো লক্ষ করলেন বাঘা বাঘা সব বিজ্ঞানী আজকাল সাহিত্য চর্চায় লেগে গেছে। বিচিত্র ব্যাপার হলো যারা সাহিত্য নিয়ে লেখালেখি করছে তারা কেউই সাহিত্যের ছাত্র না। প্রায় সবাই বিজ্ঞানের লাইনের মানুষ। যেমন জীব বিজ্ঞানী জিলো গত কালকে কবিতা লেখলো,
"হৃদয় আমার পদ্মপাতা- যেনো আন্ধার ঘরে ব্যাঙ্গের ছাতা।"
তাছাড়া উদ্ভিদ বিজ্ঞানী টিক্রী সেদিন পোস্ট দিলো, "বিজ্ঞানীরা কেনো মন
বুঝে না?" আশ্চর্যের ব্যাপার ঐ পোস্ট কমেন্টে কমেন্টে ভরে গেলো! মহামান্য কিটি সামান্য চিন্তিত হলেন, "তবে কি মেয়ে বলেই তার পোস্টে
কমেন্ট বেশী পড়ে!" তিনি ঝটপট একটি সাইয়্যা নিক খুললেন। নাম দিলেন "অপি আক্তার"।
বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন সাবজেক্ট খোলা হলো। নাম হলো "ব্লগলজী"। ব্লগে বিশেষ অবদানের জন্য ব্লগীয়লজি, ব্লগিক্স এবং ব্লগায়ন এই তিন বিভাগের জন্য খোলা হলো বিশেষ প্রেস্টিজিয়াস পুরষ্কার "বুবেল"।
আরো দেখা গেলো অদ্ভুত কিছু চরিত্র! যে কিনা সম্পুর্ন চোখে দেখতে পায় তবু তার নিক নেইম অন্ধ আগুন্তক, আবার কাকে নাকি কাউয়া বলে ডাকা হচ্ছে। অথচ সে দাবি করছে সে কোকিল! কিটি ভেবে পেলেন না একটা মানুষ কিভাবে কাউয়া বা কোকিল হয়! আবার কেউ কেউ নাকি খুব বয়স্ক কিন্তু ভাব নিয়ে থাকে সে খুব বাচ্চা! দিনের পর দিন অদ্ভুত অদ্ভুত বিষয় হজম করতে লাগলেন কিটি।
মানুষের মন বড়ই বিচিত্র। মহামান্য কিটি একজন মেয়ে ব্লগারের প্রেমে পড়ে গেলেন। মেয়েটি দেখতে শুনতে বেশ ভালো। একদিন পোস্ট দিয়েছিলো। কেউ কি আছে আমার একাকিত্ব ঘোছাবে!? ঐ পোস্টে কিটি কমেন্ট দিয়েছিলেন, "আমি আছি গো সোনা তোমার পাশে!" তারপর বিরাট কাহীনি হয়ে গেলো। ঐ মেয়ের সাথে প্রেম ভালোবাসা আরো কতো কি!
একদিন কথা হলো কিটি মেয়েটির সাথে দেখা করবেন। কথা মতো দেখা করতে গিয়ে কিটি আক্রমনের শিকার হলেন। কে বা কারা যেনো মেরে তার হাত ভেঙ্গে দিলো। যাবার আগে হুমকি দিলো, "নেক্সট সাইয়্যা নিকের সাথে লুলামী করলে ঠ্যাং ভেঙ্গে হাতে ধরাইয়্যা দেওয়া হবে।"
৩।
সুখ বেশিদিন টেকে না। এক্ষেত্রেও তাই হলো। মহামান্য কিটি খবর পেলেন সামুকে কেন্দ্র করে ব্লগ পলিটিক্স শুরু হয়েছে। ভিন-গ্রহের প্রানীরাও নাকি ব্লগিং শুরু করেছে। ব্লগের মডুরা তাদেরকে সনাক্ত করতে পারছে না। যার ফলে ব্লগাররাই নেমে গেলো ওদের দমন করতে। প্রাচীন সামহোয়ারের কিংবদন্তি নিকগুলোর আদলে খোলা হলো অনেক গুলো নিক। এই নিক দিয়ে ব্লগ যুদ্ধ করতে নাকি আলাদা জোশ আসে। নিক গুলো হলো- অমি রহমান পিয়াল, আইজুদ্দিন, হাসিব, বিষাক্ত মানুষ। সব নিক দিয়ে খোলা হলো এ-টিম। এ টিমের আক্রমনে ভিন গ্রহের প্রানীরা মোটামুটি চিপায় চলে গেলেও তাদেরকে মাঝে মাঝে উঁকি দিতে দেখা যায়।
এটা ঠিক এমন একটা সময় যখন আস্তিক নাস্তিক বলে কিছু নেই, কিন্তু সেই আস্তিক নাস্তিক ক্যাচালও সীমা ছাড়িয়ে যেতে শুরু করলো। পুরো আধ্যাত্মিকতা বিভাগকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ব্লগাররাই যেনো ঈশ্বরের অস্তিত্ব মিথ্যা নাকি সেটা সত্য প্রমানের দায়িত্ব নিয়ে নিলো।
মিডিয়াতে খবর আসলো পুরো পৃথিবীবাসী নাকি ব্লগে মজে টাইম নষ্ট করছে। কেউ কাজে মনোযোগ দিচ্ছে না। যার ফলে উৎপাদনখাত প্রায় পুরোটাই ভেঙ্গে পরার উপক্রম।
সামুর সাথে পাল্লা দিয়ে আরো ব্লগ খোলা হলো। পুরো পৃথিবীই যেনো
হয়ে পরলো ব্লগময়! রহস্যময় নিকের সংখ্যাও বেড়ে গেলো অনেক। এগুলো কে বা কারা চালায় এটা নিয়ে সবার চিন্তার সীমা রইলো না।
মহামান্য কিটি অবাক হয়ে আরো লক্ষ্য করলেন সামুকে কেন্দ্র করে অদ্ভুতভাবে গালাগালির চর্চা হচ্ছে। নিজস্ব কিছু গালিও ব্লগাররা আবিষ্কার করে ফেলেছে। কি আজব! এইটা দেখে তিনিও একটা গালিবাজ নিক খুললেন। প্রথম গালিটা দিলেন "খা পো"।
প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রধান জানিয়েছেন, "সামুর মডু প্যানেলে নাকি কি সব
হচ্ছে! মডুরা ক্ষমতার অপব্যবহার করছে বলে সবাই ধারনা করছে। শুনে চিন্তায় পড়ে গেলেন মহামান্য কিটি। আলামত তো খারাপ! এসব কি হচ্ছে চারিদিকে!!
৪।
মহামান্য কিটি মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন। পৃথিবী জুড়ে থমথমে পরিবেশ। বাতাসে যুদ্ধের ঘনঘটা। পুরো পৃথিবীবাসী ব্লগকে কেন্দ্র করে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে! বিজ্ঞান একাডেমী আর প্রতিরক্ষা বিভাগকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে দুই ভাগে বিভক্ত ব্লগ সমাজ সম্মুখ যুদ্ধের ডাক দিয়েছে। যেকোন মুহূর্তে শুরু হয়ে যেতে পারে যুদ্ধ। এই মুহুর্তে যুদ্ধ হলে পৃথিবীর অবস্থাটা কি হবে! এতো দিনের গড়ে তুলা সভ্যতা!! এতো দিনের আহরিত জ্ঞান কি তবে যুদ্ধের কাছে পরাজয় স্বীকার করবে!!!
নাহ! এ কিছুতেই হতে পারে না।
৫।
পৃথিবীর সব চ্যানেলে একযোগে প্রকাশ হচ্ছে মহামান্য কিটির ভাষন--
"আপনারা সবই জানেন এক সামু ব্লগের কারনে পুরো পৃথিবী আজ ধ্বংসের সম্মুখীন। দুইভাগে বিভক্ত পৃথিবীতে আজ যেকোন মুহুর্তে শুরু হয়ে যেতে পারে যুদ্ধ। আজ আমি বুঝতে পারছি অতীতে একবিংশ শতকে কেনো সামুকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিলো। আমাদের সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো এই সামুকে পুনরায় জাগিয়ে তোলা।"
কিটি টিস্যু দিয়ে চোখ মুছে আবার বলা শুরু করলেন-
"তাই পৃথিবীর স্বার্থে আজ এই মুহুর্তে আমি সামু ব্লগকে নিষিদ্ধ ঘোষনা
করছি। সামুকে সম্পুর্নরূপে ধ্বংস করার আদেশ দিচ্ছি। ভবিষ্যতে কেউ যাতে আর সামুর ধ্বংসাবশেষ খুঁজে না পায়, সেই ব্যবস্থা করার জন্য প্রতিরক্ষা বিভাগকে নির্দেশ দিচ্ছি।"
৬।
যুদ্ধটি শেষ পর্যন্ত হয়নি। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তের জন্য মহামান্য
কিটি পৃথিবীবাসীর কাছ হতে "মহাজাগতিক বীর" উপাধি পেলেন।
লেখা ও আইডিয়া: আলিম আল রাজি এবং রাজসোহান
একটি যৌথ প্রযোজনা।