somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক নিরীহ গৃহবধু থেকে বীরাঙ্গনা নারীর কাহিনী

২৬ শে মার্চ, ২০১০ বিকাল ৪:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘটনাটি আমার বড় খালুর মায়ের কাহিনী।গতকাল আমার মায়ের মুখে শুনলাম।বড় খালুর মায়ের নাম ছিল কমলা বানু।বড় খালুর নাম রজলু।

ঘটনাস্থল কুষ্টিয়ার মজমপুর গেট মঙ্গল বাড়ি এলাকার আলফার মোড়।৭১সাল।রজলুর বাবা এলাকার খুব প্রভাবশালী একজন।আমার বড় খালু মোট তিনভাই।বড় খালু সবার ছোট।বড় ভাইয়ের বিয়ে হয়েছে,বাকী দুজন বিয়ের বয়স হয় নি তখনও।যাই হোক ঘটনাটি ৭১সালের জুন মাসের দিকে।তখন এলাকায় অনেক কুলাঙ্গার রাজাকারে যোগ দিচ্ছে আবার অনেকে দেশের টানে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে ঘর ছাড়ছে।রজলুর বাবা এলাকায় খুব প্রভাবশালী,তাই তাকে রাজাকারে যোগ দেবার আমন্ত্রন জানানো হইল।কিন্তু খালুর বাবা তথা আমার নানা কালক্ষেপন করতে লাগলেন,তিনি গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করতেন প্রকাশ্যে কিছু করতেন না।কিন্তু কোন ভাবে খবর পেয়ে যায় রাজাকারের দল।তারা তখন এক সন্ধ্যায় নানার বাসায় হামলা চালায়,তখন আমার খালু আর খালুর মেজো ভাই যশোরে কোন এক কাজে গেছিলো।বাসায় ছিলো খালুর মা বাবা বড় ভাই আর ভাবী।রাজাকারেরা বিভিন্ন মানসিক চাপ সৃস্টি করে তথ্য বের করার চেষ্টা চালায়।কিন্তু কিছুতেই না পেরে তখন বাড়ীর উঠোনের উপর খালুর নানী আর ভাবীকে বেঁধে ফেলে আর দুজনকেই উলঙ্গ করে দেয় (উফ!)
তারপরও খালুর বড় ভাই আর বাবা কোনভাবেই মুখ খোলে নাই।শেষে বেজন্মার বাচ্চারা তাদের দুজনকে খালুর নানী আর ভাবী এর সামনেই জবাই করে ফেলে।(উফ!পাঠক বুঝতে পারছেন কতটা নৃশংস দৃশ্য?)তারপর রাজাকারেরা খালুর ভাবীকে নির্যাতন করে চলে যায় আর ভাবী ঐখানেই মারা যায়।নানী কিন্তু তখনও বাঁধা অবস্থায় আছে আর তাঁর মুখটিও ছিলো বাঁধা।
সারারাত ঐভাবে ই ছিলো নানী,ভোরবেলায় নানীদের রাখাল উঠনেই ঢুকেই দৃশ্য দেখে চিল্লায় ওঠে।সেই রাখালের নাম ছিলো কানু।কানু তখন কোমড়ের গামছা খুলে নিজের চোখ বেঁধে ফেলে।তারপর কোনভাবে নানীর বাঁধন খুলে নানীকে কাপড় এনে দেয়।তারপর তাঁরা দুজন মিলে তিনটা লাশকে কবর দেয়।উফ!নানি তার নিজের স্বামী,সন্তান আর ছেলের বউকে কবর দিলো চিন্তা করা যায়?কতটা কঠিন পরিস্থিতি?

দু দিন পর খালু আর মেজো ভাই বাড়ী আসলে তাদের তখনই টাকা পয়সা দিয়ে ভারত পাঠিয়ে দেয়।

এরপর থেকে নানীর সাহস বেড়ে যায়,যে মহিলা চোখের সামনে জবাইকৃত স্বামি ছেলেকে কবর দেয় সে তখন হিংস্র।খুব শান দিয়ে একটা বড় রামদা বানায় সে।ওটা সব সময় সঙ্গেই রাখত আর তাঁর সামনে যদি কোন রাজাকার পরত ঐলাকায় সে কোন ভাবে জান নিয়ে ফিরতে পারত না।কোন ভাবে যদি নানী খবর পেয়েছে রাজাকার আসছে জান তখনই কতল।একবার নানীর বাসায় তিনজন মুক্তিযোদ্ধা আশ্রয় চায়,নানী আশ্রয় দেয়।ভোরবেলা কয়েকজন মিলিটারী নিয়ে দুজন রাজাকার আসে তাদের বাড়ি,উঠোনে এসে হাঁক পারে বাড়িতে কেউ আছে কিনা? ভেতরে মুক্তিযোদ্ধারা পজিশন নিয়ে নেয়,কিছু আলাপ করে নানী বাইরে আসে শাড়ির আঁচলে লুকিয়ে রাখা রামদা নিয়েই বের হন তিনি,দুজন রাজাকার এসে নানীর চুল মুঠি করে ধরতে যায় আর সঙ্গে সঙ্গে নানী দুজনের দেহ থেকে মাথা আলাদা করে দেন ভিতর থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্রাশ ফায়ারে বাকী মিলিটারী গুলোও মারা পড়ে।এরপর থেকে নানী একটু পালায় থাকত,কারণ তখন মিলিটারী রা নানীকে খুজত,কি৮ন্তু নানী পালায় থাকলেও সুযোগ পাইলেই একলা রাজাকার পাইলে কোপ দেওয়ার চেষ্টা করত,ফলে ঐ এলাকায় আর কোন রাজাকার চলার সাহস পাইতো না নানীর ভয়ে।

নানী এতটাই ঘৃণা করত এ স্বাধীন হবার পরও বেশ কয়েকজন রাজাকারের হাত কেটে ফেলেছিল।

পাঠক বলুনতো একজন সাধারন গৃহবধু কতটা কষ্ট পেলে এতটা ভয়ংকর হতে পারে?

আসুন মনের সবটুকু ঘৃণা ছিটিয়ে দেই সেই বেজন্মা রাজাকারদের।

আর শত সহস্র শ্রদ্ধা জানাই এইরকম জানা অজানা সেই সব নারী পুরুষের প্রতি।

মহান স্বাধীনতা দিবস অমর হোক,বাংলাদেশ বেঁচে থাকুক হাজার বছর।



বিঃদ্রঃ আম্মুর কথা তে সামান্য সংশোধন করা হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৭
১১৩টি মন্তব্য ১১৫টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×