somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ই-কমার্স হবে অর্থনীতির সবচেয়ে বড় খাত

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোন কাজে বাইরে না গেলে সারাদিন ঘরে পিসির সামনে কাটাই। ফেইসবুকে, মোবাইল ফোনে, স্কাইপে প্রতিদিন লম্বা একটা সময় নানা ধরনের মানুষের সঙ্গে কথা হয়। অনেকেই ইংরেজি কিভাবে শেখা যায় তা জানতে চান- আমার লেখাপড়ার ব্যাকগ্রাউন্ড ইংরেজি সাহিত্য ও ভাষা। ব্লগিং আর অনলাইন রাইটিং নিয়েও অনেক প্রশ্ন- অনেকগুলো বছর প্রফেশনাল ব্লগার হিসেবে কাটিয়েছি। কেউ কেউ ই-কমার্স নিয়ে আর ই-ক্যাব নিয়ে জানতে চান। কেউ এ সম্পর্কে একেবারেই কিছু জানেন না এবং জানতে চান। কেউ আবার ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করতে চান এবং কি করনীয় তা জানতে চান। এছাড়া অনেকে ই-কমার্স ব্যবসা করার অভিজ্ঞতা বলেন আমাকে- সমস্যার কথা, সম্ভাবনার কথা।
আমি আমার সাধ্যমত উত্তর দেবার চেষ্টা করি। খুব ভাল লাগে যখন দেখি ময়মনসিংহ বা কুমিল্লা থেকে ই-কমার্স নিয়ে কেউ আমার সঙ্গে কথা বলেন। আরও ভাল লাগে যখন কেউ জানতে চায় বরিশালের কোন গ্রামের কৃষিপণ্য কিভাবে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিক্রি করা যায়।
এই শনিবারে (৮ নভেম্বর) প্রেস ক্লাবে আমাদের ই-ক্যাবের প্রেস কনফারেন্সে বলা হয় যে আগামি ১০ বছরের মধ্যে ই-কমার্স হবে মোবাইল ফোন বা এমনকি গার্মেন্টস সেক্টরের থেকেও বড় একটি খাত। পরের দিন বেশ কিছু পত্রিকা ও অনলাইন নিউজ সাইট গুলোতে একথা ছাপা হয়েছে। বেশ কয়েকজন আমার কাছে জানতে চেয়েছেন যে কিসের ভিত্তিতে একথা বললাম। নাকি ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশান অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)-এর জন্য হাইপ তোলার জন্য গিমিক বা স্টান্টবাজি?
১। না এটা গিমিক নয়। আমাদের অর্থনীতি ও ব্যবসার ভবিষ্যৎ ই-কমার্সেই। কেন এমনটা মনে করছি? ঢাকাতে এখন একটা ব্যবসা দিতে কত টাকা ইনভেস্ট করতে হয় কিংবা একটা দোকান দিতে? পজিশন কেনার কথা বাদই দিলাম। সালামি (এডভান্স), ডেকোরেশন মিলিয়ে মনে হয়না ১৫ লাখের নিচে হয়। তারপর মাসিক ভাড়া ১০-২০ হাজার। এর সঙ্গে কর্মচারীর বেতন যোগ করতে হবে। তাই অনেকের ইচ্ছা ও বুদ্ধি থাকা সত্ত্বেও নতুন ব্যবসা শুরু করা সম্ভব হয়না। ই-কমার্স এখানে দারুণ আশীর্বাদ বয়ে আনতে পারে।
২। ঢাকার বাইরের মানুষের জন্য তাদের পন্য ও সেবা বিক্রি করা বেশ কঠিন। তাদের পক্ষে সম্ভব নয় ঢাকা ও চট্টগ্রামে এসে দোকান খুলে বসে। কিন্তু ই-কমার্স এর মাধ্যমে তারা তাদের অনলাইন শপ খুলে বসতে পারেন খুবই অল্প বিনিয়োগে।
৩। এসএমই গুলোর জন্য মার্কেটিং খুবই বড় একটা সমস্যা। ফেইসবুক, ইউটিউব, টুইটার এ ব্যপারে অনেক বড় অবদান রাখতে পারে।
৪। সেদিন প্রেস কনফারেন্সে ঔষধ ও লেখাপড়ার উদাহরণ দিয়েছিলাম ই-কমার্স এর প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে। এই ঢাকাতেই অনেক এলাকা আছে যেখানে একটু দামী ও কম ব্যবহৃত ঔষধ পাওয়া যায় না এবং মিটফোর্ড যেতে হয়। ঢাকার বাইরের অবস্থা বুঝতেই পারছেন। এমন ওয়েবসাইট থাকা দরকার যেখানে সব ঔষধ পাওয়া যাবে এবং অর্ডার দিলে ডেলিভারি চার্জ নিয়ে বাসায় পৌঁছে দেবে। কিংবা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে গ্রামের শিক্ষার্থীরা অনেক কিছু শিখতে পারবে। এ দুটো উদাহরণ বোধহয় সাধারন মানুষের জীবনে ই-কমার্স কতটা প্রভাব ফেলতে পারে তার সুন্দর উদাহরণ।
৫। গ্রামের মানুষ তাদের উৎপাদিত পন্যের ন্যায্য মূল্য পেতে চায় এবং এজন্য ই-কমার্স এর কোন বিকল্প নেই। চীনে আলিবাবা এ ব্যপারে ইতিমধ্যেই বিপ্লব ঘটিয়েছে।
৬। ই-কমার্স কোম্পানির সংখ্যা যত বাড়বে চাকুরির বাজার ততই বাড়বে। তাছাড়া অনলাইন শপিং সাইটগুলোকে সাপোর্ট দেবার জন্য প্রফেশনাল ব্লগিং, এফিলিয়েট মার্কেটিং, ক্লাউড হোস্টিং, ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপিং, প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি সহ নানা ধরনের কোম্পানির দরকার হবে। ফলে ১ টি অনলাইন শপিং সাইট হলে এর জন্য কমপক্ষে আরেকটা সহায়ক কোম্পানির জন্ম হবে।
৭। তাছাড়া বুটিক হাউস, টুরস এন্ড ট্রাভেলস, আবাসিক হোটেল, রেন্ত-এ-কার সার্ভিস এ ধরনের অনেক কোম্পানি ই-কমার্সে আসতে বাধ্য হবে।
৭। অবশ্যই বেশ কিছু সমস্যা আছে ই-কমার্স সেক্টরে এবং আমরা ই-ক্যাব এজন্যই গঠন করেছি। প্রোডাক্ট ডেলিভারি এবং পেমেন্ট নিয়ে শক্ত কিছু সমস্যা আছে এবং এগুলো অল্প সময়ের মধ্যে সমাধান করা যাবে বলে মনে হয়না। তবে আমরা খুবই সিরিয়াস ভাবে কাজ শুরু করেছি। কে জানে হয়তো ভাল সমাধান আসতেও পারে। এজন্য দরকার সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকা। আরেকটা সমস্যা হল প্রতারণা। আশা করি সবাই আমাদের এ বিষয়ে সাহায্য করবেন।
৮। তবে আমার মনে হয় সবচেয়ে বড় সমস্যা হল মানুষ এখন পর্যন্ত অনলাইনে কেনাকাটা করতে সাচ্ছন্দ বোধ করেনা। অনেকে জানেও না কিভাবে কেনাকাটা করতে হয়। অনেকে উদ্বিগ্ন যে তাদের না ক্ষতি হয়। ই-কমার্স এর ক্রেতা এখনো ঢাকা কেন্দ্রিক। ঢাকার খুব বেশি লোক অনলাইনে নিয়মিত কেনাকাটা করে তাও নয়। এমনকি বিকাশ দিয়ে অনেক কিছু কেনাকাটা করে গেলেও বেশীরভাগ মানুষ বিকাশের মত সার্ভিস গুলো দিয়ে টাকা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গা পাঠানো ছাড়া অন্য কিছু করেনা এটাই বাস্তবতা। তাই মানুষকে অনলাইনে কেনাকাটা করতে উতসাহিত করতে হবে।
৯। ই-কমার্স নিয়ে সত্যিকার অর্থে এতদিন কারো মাথা ব্যাথা ছিল না বলেই আমরা অনেকে একত্রিত হয়ে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশান অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) গঠন করেছি। এর ফলে এখন একটা প্লাটফর্ম দাড়িয়ে গেছে। আমাদের সবার কথা এখন অনেক শক্তি পেয়েছে এবং অনেক বেশি মানুষের কাছে যাচ্ছে। আর এজন্য আমাদের সবাইকে চেষ্টা করতে হবে। এই রোজার ঈদে সবাইকে অনলাইনে কেনাকাটা করতে উৎসাহিত করি চলুন।
শেষ কথা হল আমরা অনেক কিছুতেই দেরি করেছি, ই-কমার্সে দেরি করা যাবে না।
আমাদের ইক্যাবের ওয়েবসাইটঃ http://www.e-cab.net/
লেখাটি প্রথমে আমাদের ই-ক্যাবের ফেইসবুক গ্রুপে প্রকাশিতঃ Click This Link
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×