somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মৌলবাদী রসনা: ভন্ডামীর চূড়ান্ত স্বাদ (প্রথম পর্ব)

৩০ শে আগস্ট, ২০১০ দুপুর ২:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

: দোস্ত, চল একদিন লালনের আসর বসাই। অনেকদিন লালন খাওয়া হয় না।
: কিন্তু দোস্ত, আমিতো ওগুলো খাইনা।
: আরে একদিন টেস্ট নিয়ে দেখলি আরকি। জীবনে সবকিছুর টেস্ট নেওয়া দরকার আছে।

লালনের (গাজা) আসর বসানোর প্রস্তাবকারী আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বন্ধু। আমার ডিপার্টমেন্টেরই ছাত্র। তবে সবচেয়ে বড় পরিচয় সে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ক্যাম্পাস কাপানো এক নেতা। একটি আবাসিক হলের সভাপতিও বটে। একদিন রাতে আমার সামনেই অন্য এক বন্ধুকে এভাবেই লালন খাওয়ার প্রস্তাব করে বসে সভাপতি সাহেব। যদিও অন্য বন্ধুটির অপারগতায় সভাপতি সাহেবের প্রস্তাবটি অকালেই ভেস্তে যায়।

আরেক বন্ধু শিবিরের সচল কর্মী। নামাজ-কালামে তার বিন্দুমাত্র আলস্য নেই। ছেলে হিসেবে একবারে সুনসান। শিরক-বেদআত করেছে বলে মনে হয়না। এমনকি আমাদের ব্যাচের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোতেও সে অংশ নিত না। ব্যাচের পক্ষ থেকে চাদা চাইলে অপারগতা প্রকাশ করত উচুগলায়। বেদআত বলে কথা। কিন্তু এ কি! হঠাত আর দশটা ছেলের মতোই রাত বারোটা বাজলে হন্তদন্ত হয়ে মোবাইল নিয়ে ছুটে সে। ব্যক্তিগতভাবে সু-সম্পর্ক থাকায় জিজ্ঞেস করতেই আমাকে বিস্তারিত জানায়। ঢাকার লালমাটিয়া কলেজের এক মেয়ের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে সে। ব্যাপারটা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে।
একদিন হঠাত করেই উধাও হয়ে যায় ছেলেটা। তার রুমমেটেদের কাছে জানতে পারলাম ঢাকায় গেছে। আমার আর বুঝতে দেরী হয় না।

তিনদিন পর সে ফিরে আসে। তখন ফাল্গুন মাস। কিন্তু সে জ্যাকেট পরে ক্লাসে যাচ্ছে কেন। আমার সন্দেহ হয়। অনেক পীড়াপিড়িতে জানায়, ঘাড়ে একটা দাগ বসেছে। তাই জ্যাকেটের বড় কলার দিয়ে ঢাকার জন্যই এই আয়োজন। দাগটা কিসের বোধকরি সচেতন পাঠক সহজেই অনুধাবন করতে পারছেন। ও অবশ্য আমাকে বিস্তারিতই বলেছিল। কিন্তু এখানে তার অবতারনা করতে আমার রুচিবোধে কিঞ্চিত নাড়া দিল। তাই করলাম না।

আশ্চর্যের বিষয় এই যে, ওই ঘটনার পর কিন্তু বন্ধুটি শিবির ছেড়ে দেয়নি। বরং তার জিহাদী চেতনা ঢেড় বৃদ্ধি পেয়েছিল। ওই ঘটনার পূর্বে সে শিবিরের কর্মী থাকলেও পরবর্তীতে একধাপ প্রমোশন পেয়ে সাথী পদ লাভ করেছিল।

আমার কাছের অনেকগুলি পর্যবেক্ষনের মধ্যে মাত্র দু’টির অবতারনা এখানে করলাম। সবগুলো বর্ণনা করলে পাঠকমনে বিরক্তির উদ্রেক ঘটতে পারে। তাই করলাম না।

ক্যাম্পাসে সাংবাদিকতা করার সুবাদে সব ছাত্র সংগঠনগুলির সাথেই আমাকে ওঠাবসা করতে হতো। সু-সম্পর্ক বজায় রাখাটাও ছিল পেশাগত উত্কর্ষতার একটা। শিবির সভাপতির কাছে ওপরের ঘটনাগুলো সম্পর্কে কৌতুহলের ছলে জানতে চাইলে তিনি প্রায়শই বলেতেন, ওগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আমি আরও উদাহরণ দিলে কিংবা এদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি সুকৌশলে কথাটা ঘুরিয়ে নিতেন। অবশ্য তারও এ বিষয়ে যথেষ্ট সুনামের কথা প্রচলিত ছিল। লোকমুখে শুনতাম, তিনিও নাকি ভালো প্রেমপত্র লিখতে পারতেন। একবার এক জুনিয়র মেয়েকে ফুলের তোড়া সমেত প্রেমপত্র পাঠিয়ে হল প্রভোস্টের কাছে ধরাও খেয়েছিলেন। শুধুমাত্র শিবিরের নেতা বলে ব্যাপারটা আন্ডারওয়ার্ল্ডেই সীমাবদ্ধ রয়ে গিয়েছিল।

এতো গেল শিবিরের চারিত্রিক কথাবার্তা। ক্যাম্পাসে আচমকা আরেকটি মৌলবাদী সংগঠনের আবির্ভাব ঘটলো। হিজবুত তাহরীর। তাদের অবস্থাটা দুইদিনের বৈরাগী ভাতেরে কয় অন্ন টাইপের। কর্মী সবেমাত্র ৫-৬ জন। কিন্তু রাক-ঢাক দেখে তা বোঝার কোনো উপায় নেই। এ সংগঠনটির আমদানীকারক আমাদের ব্যাচেরই এক মেধাবী ছাত্র। ইদানিং সে জাকির নায়েকের মত যাকে তাকে যেখানে সেখানে লেকচার দিয়ে বেড়ায়। যে তার লেকচার শুনছে না তাকেই সে শত্রু ভাবে। ইসলামের শত্রু। তার চার-পাচ কর্মীকে বলে দেয় শত্রুদের সাথে ওঠা-বসা না করতে। এমনকি কথা পর্যন্ত বন্ধ রাখার জন্য ফতোয়া নাজিল করে।

তাদের এ ফতোয়ার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি তাদের সেকেন্ড ইন কমান্ডকে একদিন এড়িয়ে চলার কারণটা জিজ্ঞেস করি। সে জানায়, যারা ইসলামের পথে আন্দোলন করেনা তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখা হারাম।

কথাটা শুনে আমি আকাশ থেকে পড়ি। মৌলবাদীতার জন্য মানুষের এতটা অধ:পতন হয়!
এই কখোপকথনের মাস দুয়েক পরের ঘটনা। শুনি, অন্য তিন বন্ধুর সাথে ওই সেকেন্ড ইন কমান্ড কক্সবাজার বেড়াতে গিয়েছে। যশোহর থেকে আরও এক বন্ধুসহ তাদের দুই কলেজ বান্ধবী কক্সবাজার বেড়াতে আসবে। এ ঘটনা আমাকে তেমন একটা অবাক করেনি।
কিন্তু অবাক হয়েছিলাম ওরা কক্সবাজার থেকে ফিরে আসার পর। অন্য এক বন্ধুর কল্যাণে কক্সবাজারের ছবিগুলো দেখতে পেয়েছিলাম। সেখানে ওই সেকেন্ড ইন কমান্ডের বেশ কিছু ছবি ছিল। প্রায় প্রতিটি ছবিই বান্ধবীদের সাথে। ভেজা বসনে সমুদ্র সৈকতে অথবা হিমছড়ির ঝড়নায়। অনেকটা আপত্তিকরই বলা চলে।

এ বিষয়ে সেকেন্ড ইন কমান্ডকে আমি নি:সংকোচে প্রশ্ন করেছিলাম। সে কি উত্তর দিয়েছিল এত বছর পর স্মৃতি আওড়াতে পারছি না। তবে সে ক্যাম্পাস জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত যে খেলাফত প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে মত্ত ছিল তা আমার স্মৃতিতে স্পষ্ট ধরা দিচ্ছে।
(চলবে)
১৩টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Dull Friday !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ২:৩৭


ইদের ছুটি শেষ হতে চলেছে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ ঈদের ছুটিতে ঢাকা থেকে বাড়িতে যায়। আমার ক্ষেত্রে বরবার উলটো ঘটনা ঘটে। কুমিল্লা থেকে ঢাকায় এসেছি ঈদের ছুটিতে এবার।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিটিংয়ের জন্য কেন এত তোড়জোড়?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৫:১২



অর্থাৎ চীনের সহায়তায় লালমনিরহাটের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এয়ার বেইস চালুর চেষ্টা, তিস্তা মহাপরিকল্পনা চীনকে নিয়ে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা ও চীনে গিয়ে ডক্টর ইউনূসের সেভেন সিস্টার্স সম্পর্কিত বক্তব্য ভারতের ভালো লাগেনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

কানাডার প্রধানমন্ত্রী ঈদের শুভেচ্ছা এবং বাংলাদেশে এর প্রতিফলন

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৬:১৮



গত বছরের মতো এবছর আর কানাডার প্রধানমন্ত্রী ঈদের শুভেচ্ছা জানাননি। রোজার শুরুতেও “রামাদান করিম” শুভেচ্ছাবচনটি কেউ পাঠায়নি। আগে যখন ট্রুডো ঈদের ঠিক আগে আগে সরকারি দপ্তর থেকে কানাডার মুসলিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

অকুতোভয় বাসচালক মো. সোহেলকে পুরষ্কৃত করা হোক

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:১৭

অকুতোভয় বাসচালক মো. সোহেলকে পুরষ্কৃত করা হোক

ছবিসহ মিনি পোস্টারটি এআই দিয়ে তৈরিকৃত।

থেঁতলানো চোয়াল, ভেঙ্গে গেছে দাঁত, রক্তাক্ত অবয়ব—তবু ৪০ কিমি বাস চালিয়ে যাত্রীদের বাঁচালেন! এই সাহসী চালকই বাংলাদেশের নায়ক... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর পর যা হবে!

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:৪২



বেহেশত বেশ বোরিং হওয়ার কথা।
হাজার হাজার বছর পার করা সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। দিনের পর দিন একই রুটিন। এরচেয়ে দোজক অন্য রকম। চ্যালেঞ্জ আছে। টেনশন আছে। ভয় আছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×