সালটা ঠিক মনে নেই। তবে মাসটা ছিল রমজান। এগারো কিংবা বারো তারিখ। পবিত্র মাস। স্রষ্টা নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন। বান্দাদের পুরষ্কার নিজহাতেই দিতে হবে। প্রতিজ্ঞা বলে কথা। তাই তিনি মনস্থির করলেন একবার ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ঘুরে আসা যাক। অনেকদিন স্ব-শরীরে যাওয়া হয় না। তাছাড়া রমজান মাসে বান্দাদের কাজ-কর্মগুলোও স্ব-চক্ষে পর্যবেক্ষণ করা যাবে। যেমন পরিকল্পনা তেমন কাজ। আসরের পরপরই নেমে পড়লেন।
হাতে সময়ও তেমন নেই। প্রথমে আরব বিশ্ব দেখলেন। পরে ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া । তবে যখন আফ্রিকায় গেলেন তখন তার মনটা একটু খারাপ হলো। বান্দাদের এত দুরাবস্থা! যাই হোক খারাপ মন নিয়ে তিনি এবার আসলেন ভারতবর্ষে। তখন সূর্য প্রায় অস্তগামী। ইফতারের সময় অত্যাগত। স্রষ্টা আগেই বলেছেন, ইফতার বান্দাদের জন্য একটি নিয়ামত। এই অঞ্চলে বান্দাদের ইফতারের আয়োজন দেখে তার বিষন্ন মনে কিছুটা আনন্দের উদ্রেক ঘটলো। তিনি বিভিন্ন ইফতারের জলসায় যাচ্ছেন। বান্দাদের বিভিন্ন চাওয়া পাওয়া পূর্ণ করছেন। নেক বান্দারাও স্রষ্টাকে দেখে বেজায় খুশি।
ইফতারের সময় প্রায় ছুই ছুই। স্রষ্টা তখন বাংলাদেশ নামক দেশটার রাজধানী ঢাকাতে। আনমনে হাটছেন। হঠাত তার চোখে পড়ল এক বিশাল ইফতার জলসা। দূর থেকে দেখে পাক পবিত্র বান্দাদের সমাবেশের মতো মনে হচ্ছে। সবার মাথায় ইয়ে বড় বড় টুপি। তার উপর আবার স্রষ্টার নিয়ামত চাদ-তারা খচিত। আগ্রহ আরেকটু বেড়ে যায়। কিন্তু এ কি!! ওর মধ্যে যে জর্জেট শাড়ী পড়া বেগানা নারীও দেখা যাচ্ছে। কিন্তু স্রষ্টাতো আর আমাদের মতো নন। সবই তার সৃষ্টি। কেউ বেগানা হয়ে চললে তার শাস্তিওতো তাকে দিতে হবে। তাই তিনি ইতস্তত বোধ করলেন না। নি:সংকোচে চলে গেলেন জলসার মধ্যে। জলসার সবাই তখন মুনাজাতে ব্যস্ত। সবাইতো অবাক। খোদ স্রষ্টা চলে এসেছেন। তারা আরও বেশি বেশি করে চাইতে লাগলেন। "হে মাবুদ, তুমি আমাদের অমুক দাও, সমুক দাও। এই মুলুককে যারা কাফিরদের অভয়ারণ্য বানাতে চায় তাদের ধ্বংস করো। আমাদের জোটবদ্ধ থাকার তওফিক দাও। বড় বড় মওলানাদের প্রহসনের বিচার থেকে রক্ষা করো।" ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু হায়! স্রষ্টা যে নির্বাক। কোনো আশ্বাসতো দূরের কথা। লজ্জিত ও রাগান্বিত চেহারা নিয়ে হন হন করে জলসাস্থান ত্যাগ করলেন।
জলসার সবাই ছুটলেন পিছু পিছু। সবার সঙ্গে জর্জেট শাড়ী পড়া বেগানা নারীটিও। ঢেড় দূর গিয়েও তারা স্রষ্টাকে পেলেন না। যখন হতাশ মনে সবাই ফিরছেন তখন নিজেদের মধ্যে শুরু হলো কানাঘুষা। এই বেগানা নারীটা ওখানে না থাকলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতো না। ওখানে এত বড় বড় আলেমগণ ছিলেন। যারা ইসলামিক রাষ্ট্র রক্ষার জন্য ঊনচল্লিশ বছর আগে জিহাদ করেছেন। যাদের এম-১৬ গুলোতে এখনো লেগে আছে কাফির কুমারী মেয়েদের রক্ত। তাদের আবদার না শুনে স্রষ্টা এভাবে চলে গেলেন! সবকিছু ওই বেগানা নারীটার জন্য। কিন্তু তাদের ওই আলোচনা কানাঘুষা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। কেই মুখ ফুটে বলতে পারছে না। পিছে যদি বেগানা নারীটি শুনে ফেলে। কারণ জর্জেটধারী নারীটিকে যে তাদের বড়ই দরকার।
এমন সময় পিছন থেকে একটি গাধা তাদের ডাক দেয়।
:শোনো, তোমরা যা ভাবছো তা পুরোটাই গলদ।
: কেন? তাহলে কারণটা কি?
:তোমাদের ওখানে কি কোনো দেশদ্রোহী ছিল?
:ছিল। কিন্তু তারা তো ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থেই দেশদ্রোহী।
: আর খুনী?
:ছিল। কিন্তু তুমি তাদের খুনী বলছো কেন? জিহাদী বলো।
:কোনো নারী ধর্ষনকারী?
:হুম। কিন্তু কুফরদের স্ত্রী-কন্যা ধর্ষন তো কোনো গুনাহের কাজ নয়। আমাদের হুজুরদের এম-১৬ গুলো এখনো রক্তে লাল হয়ে আছে। আর সবকিছু তারা ইসলামের জন্যই করেছেন।
: শোনো, আর যাই কর স্রষ্ট্রার সাখে ধোকাবাজী করোনা। স্রষ্টা সবই বুঝেন। তোমাদের ওই এম-১৬ ওয়ালা হুজুরদের চেহারা দেখে স্রষ্টা রাগান্বিত ও লজ্জিত হয়ে ফিরে গেছেন। শুধুমাত্র বেগানা নারীটার জন্য নয়। যাওয়ার সময় পথে আমাকে বলে গেছেন এবং তোমাদের ধ্বংস কামনা করেছেন।
: কিন্তু আমাদের না বলে তোমার মতো একটা গাধাকে কেন বলে গেলেন?
: এর কারণটাও স্রষ্টা আমাকে বলে গেছেন। ওখানে যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের যেকোনা কারো চেয়ে নাকি আমি স্রষ্টার কাছে অনেক প্রিয় এবং পবিত্র।
বি:দ্র: (এটি একটি রম্যরচনা। কেউ একে সিরিয়াসলি নিলে নিজ দায়িত্বে নিবেন। এজন্য লেখক দায়ী নয়।)