somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নির্বাক স্রষ্টা ও একটি গাধা

২৪ শে আগস্ট, ২০১০ ভোর ৬:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সালটা ঠিক মনে নেই। তবে মাসটা ছিল রমজান। এগারো কিংবা বারো তারিখ। পবিত্র মাস। স্রষ্টা নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন। বান্দাদের পুরষ্কার নিজহাতেই দিতে হবে। প্রতিজ্ঞা বলে কথা। তাই তিনি মনস্থির করলেন একবার ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ঘুরে আসা যাক। অনেকদিন স্ব-শরীরে যাওয়া হয় না। তাছাড়া রমজান মাসে বান্দাদের কাজ-কর্মগুলোও স্ব-চক্ষে পর্যবেক্ষণ করা যাবে। যেমন পরিকল্পনা তেমন কাজ। আসরের পরপরই নেমে পড়লেন।
হাতে সময়ও তেমন নেই। প্রথমে আরব বিশ্ব দেখলেন। পরে ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া । তবে যখন আফ্রিকায় গেলেন তখন তার মনটা একটু খারাপ হলো। বান্দাদের এত দুরাবস্থা! যাই হোক খারাপ মন নিয়ে তিনি এবার আসলেন ভারতবর্ষে। তখন সূর্য প্রায় অস্তগামী। ইফতারের সময় অত্যাগত। স্রষ্টা আগেই বলেছেন, ইফতার বান্দাদের জন্য একটি নিয়ামত। এই অঞ্চলে বান্দাদের ইফতারের আয়োজন দেখে তার বিষন্ন মনে কিছুটা আনন্দের উদ্রেক ঘটলো। তিনি বিভিন্ন ইফতারের জলসায় যাচ্ছেন। বান্দাদের বিভিন্ন চাওয়া পাওয়া পূর্ণ করছেন। নেক বান্দারাও স্রষ্টাকে দেখে বেজায় খুশি।
ইফতারের সময় প্রায় ছুই ছুই। স্রষ্টা তখন বাংলাদেশ নামক দেশটার রাজধানী ঢাকাতে। আনমনে হাটছেন। হঠাত তার চোখে পড়ল এক বিশাল ইফতার জলসা। দূর থেকে দেখে পাক পবিত্র বান্দাদের সমাবেশের মতো মনে হচ্ছে। সবার মাথায় ইয়ে বড় বড় টুপি। তার উপর আবার স্রষ্টার নিয়ামত চাদ-তারা খচিত। আগ্রহ আরেকটু বেড়ে যায়। কিন্তু এ কি!! ওর মধ্যে যে জর্জেট শাড়ী পড়া বেগানা নারীও দেখা যাচ্ছে। কিন্তু স্রষ্টাতো আর আমাদের মতো নন। সবই তার সৃষ্টি। কেউ বেগানা হয়ে চললে তার শাস্তিওতো তাকে দিতে হবে। তাই তিনি ইতস্তত বোধ করলেন না। নি:সংকোচে চলে গেলেন জলসার মধ্যে। জলসার সবাই তখন মুনাজাতে ব্যস্ত। সবাইতো অবাক। খোদ স্রষ্টা চলে এসেছেন। তারা আরও বেশি বেশি করে চাইতে লাগলেন। "হে মাবুদ, তুমি আমাদের অমুক দাও, সমুক দাও। এই মুলুককে যারা কাফিরদের অভয়ারণ্য বানাতে চায় তাদের ধ্বংস করো। আমাদের জোটবদ্ধ থাকার তওফিক দাও। বড় বড় মওলানাদের প্রহসনের বিচার থেকে রক্ষা করো।" ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু হায়! স্রষ্টা যে নির্বাক। কোনো আশ্বাসতো দূরের কথা। লজ্জিত ও রাগান্বিত চেহারা নিয়ে হন হন করে জলসাস্থান ত্যাগ করলেন।
জলসার সবাই ছুটলেন পিছু পিছু। সবার সঙ্গে জর্জেট শাড়ী পড়া বেগানা নারীটিও। ঢেড় দূর গিয়েও তারা স্রষ্টাকে পেলেন না। যখন হতাশ মনে সবাই ফিরছেন তখন নিজেদের মধ্যে শুরু হলো কানাঘুষা। এই বেগানা নারীটা ওখানে না থাকলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতো না। ওখানে এত বড় বড় আলেমগণ ছিলেন। যারা ইসলামিক রাষ্ট্র রক্ষার জন্য ঊনচল্লিশ বছর আগে জিহাদ করেছেন। যাদের এম-১৬ গুলোতে এখনো লেগে আছে কাফির কুমারী মেয়েদের রক্ত। তাদের আবদার না শুনে স্রষ্টা এভাবে চলে গেলেন! সবকিছু ওই বেগানা নারীটার জন্য। কিন্তু তাদের ওই আলোচনা কানাঘুষা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। কেই মুখ ফুটে বলতে পারছে না। পিছে যদি বেগানা নারীটি শুনে ফেলে। কারণ জর্জেটধারী নারীটিকে যে তাদের বড়ই দরকার।
এমন সময় পিছন থেকে একটি গাধা তাদের ডাক দেয়।
:শোনো, তোমরা যা ভাবছো তা পুরোটাই গলদ।
: কেন? তাহলে কারণটা কি?
:তোমাদের ওখানে কি কোনো দেশদ্রোহী ছিল?
:ছিল। কিন্তু তারা তো ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থেই দেশদ্রোহী।
: আর খুনী?
:ছিল। কিন্তু তুমি তাদের খুনী বলছো কেন? জিহাদী বলো।
:কোনো নারী ধর্ষনকারী?
:হুম। কিন্তু কুফরদের স্ত্রী-কন্যা ধর্ষন তো কোনো গুনাহের কাজ নয়। আমাদের হুজুরদের এম-১৬ গুলো এখনো রক্তে লাল হয়ে আছে। আর সবকিছু তারা ইসলামের জন্যই করেছেন।
: শোনো, আর যাই কর স্রষ্ট্রার সাখে ধোকাবাজী করোনা। স্রষ্টা সবই বুঝেন। তোমাদের ওই এম-১৬ ওয়ালা হুজুরদের চেহারা দেখে স্রষ্টা রাগান্বিত ও লজ্জিত হয়ে ফিরে গেছেন। শুধুমাত্র বেগানা নারীটার জন্য নয়। যাওয়ার সময় পথে আমাকে বলে গেছেন এবং তোমাদের ধ্বংস কামনা করেছেন।
: কিন্তু আমাদের না বলে তোমার মতো একটা গাধাকে কেন বলে গেলেন?
: এর কারণটাও স্রষ্টা আমাকে বলে গেছেন। ওখানে যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের যেকোনা কারো চেয়ে নাকি আমি স্রষ্টার কাছে অনেক প্রিয় এবং পবিত্র।


বি:দ্র: (এটি একটি রম্যরচনা। কেউ একে সিরিয়াসলি নিলে নিজ দায়িত্বে নিবেন। এজন্য লেখক দায়ী নয়।)
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ওয়াকফ: আল্লাহর আমানত নাকি রাজনীতির হাতিয়ার?

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ০৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:৫৯


"একদিকে আমানতের আলো, অন্যদিকে লোভের অন্ধকার—ওয়াকফ কি এখনও পবিত্র আছে?"

আমি ইকবাল হোসেন। ভোপালে বাস করি। আমার বয়স প্রায় পঁইত্রিশ। জন্ম থেকে এখানেই বড় হয়েছি, এখানেই আমাদের চার পুরুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড. ইউনুসের সরকার..........দীর্ঘ সময় দরকার!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ০৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:২৫



সম্প্রতি জাতীয় নাগরিক পার্টির সারজিস আলম ড. ইউনুস সম্পর্কে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছে। সে মোটাদাগে যা বলতে চেয়েছে তা হলো, ড. ইউনুসের আরো পাচ বছর ক্ষমতায় থাকা উচিত। অত্যন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেমন মুসলিম ??

লিখেছেন আরোগ্য, ০৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ২:০৫



বিলাসিতায় মগ্ন মুসলিম জাতি তার আরেক মুসলিম ভাইয়ের নির্মম হত্যার সংবাদ শুনে কেবল একটি নিঃশ্বাস ছেড়ে নিজেদের রাজভোজ আর খোশগল্পে মনোনিবেশ করে। হায় আফসোস! কোথায় সেই মহামানব যিনি বলেছিলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবাবিল পাখি আরবদেরকে চর্বিত তৃণের ন্যয় করবে! ছবি ব্লগ

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৯


ফিলিস্তিনকে বোমা মেরে ছাতু বানিয়ে ফেললো ইসরাইল, অর্ধলক্ষ মানুষকে পাখি শিকারের মতো গুলি করে হত্যা করলো তারপরও মধ্যপ্রাচ্যের এতোগুলো আরব রাস্ট্র শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছে আর ভাবছে আমার তো কিছুই... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা (বোনাস পর্ব)

লিখেছেন সামিয়া, ০৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:০৮



চারদিক হাততালিতে ভরে উঠলো।
বর্ষা আপু চিৎকার করে বলে উঠলো, "ইশান-অহনা!! অফিস কাপল অফ দ্য ইয়ার!!"
বুলবুল ভাই অহনাকে বললেন, “এখন বলো আসলেই সাগরে ঝাঁপ দিবা, না এই হ্যান্ডসাম যুবকটারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×