শত কিংবা হাজার বছর পরে যদি এই পৃথিবী টিকে থাকে, তাহলে বচ্চারা যখন আজকের এই বৈশ্বিক মহামারীর ইতিহাস পড়বে কিছুটা এমন হবে; “২০২০ সালে SARS-CoV-2 ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নোবল করোনা বা COVID-19 রোগে যখন সারা পৃথিবী দিশেহারা, তৎকালীন পরাশক্তি আমেরিকা ধরাশায়ী। সবদিকে অভিজাত এবং উন্নত ইউরোপীয় দেশ সমূহ কেঁদে কুল পাচ্ছে না। অবস্থা এমন হয়েছে যে লাখে লাখে আক্রান্ত হচ্ছে হাজারে হাজারে মানুষ মারা যাচ্ছে। যুবক, বৃদ্ধ, ধনী, গরিব, আর্মি, পুলিশ, মন্ত্রী, সরকার প্রধান থেকে কর্মকর্তা কেউ রেহাই পাচ্ছে না। বিশ্বের বাঘা বাঘা দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা ধ্বসে পড়েছিল। সারা পৃথিবী থমকে গিয়েছিল, বিমান থেকে শুরু করে পাবলিক বাসসহ সব যোগাযোগ বন্ধ। তখন পৃথিবীর খুব ছোট্ট একটা অত্যাধিক ঘনবসতিপূর্ণ দেশ ছিল অবিচল, সে দেশের মন্ত্রীরা ছিল ভাইরাসের চেয়েও বেশি শক্তিশালী। ১৮ কোটি জনসংখ্যার ছোট সেই দেশের মানুষ গুলোও ছিল মেলা বিচিত্র। তারা অন্যের ক্ষতি করার জন্য নিজের নাক কাটতেও দ্বিধা করতো না। খুবই উদাসীন, হিংসা কাতর, হুজুগে, একগুঁয়ে এবং ঠাট্টাবাজ জাতি ছিল তারা। এমন সব মজার মজার কান্ড করতো তারা যা পৃথিবীতে দ্বিতীয় কোন জাতি চিন্তাও করতে পারতো না যেমন; একজন সন্দেহভাজন ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীকে কোয়ারেন্টিন যে আলাদা করে রাখলে বাকিরা দোল বেঁধে দেখতে যেত। ওরা ভাইরাসের ব্যাপারেও ছিল উদাসীন এবং একগুঁয়ে। সরকার যা করতে না করে তাই বেশি করে, অসহায়ের জন্য বরাদ্দ অনুদান চুরি করে তাদের দলপতিরা। সারা পৃথিবীর বাঘা বাঘা বিজ্জানীরা যখন সেই ভাইরাসের প্রতিষেধক বানানোর জন্য গলদগর্ম অবস্থা তখন সেদেশে রাস্তার মোড়ে মোড়ে ভাইরাসের ঔষধ বিক্রি হতে শুরু হলো। সেদেশের সরকারও ছিল বেশ খোশ মেজাজি, জনগণের সাথে মজা করতো খুব। অফিস আদালত খোলা রেখে স্কুল বন্ধ করে দিত, সাধারণ যানবাহন বন্ধ করে দিত কিন্তু কাজে যেতে হবে মানুষকে। ডাক্তাররা ভাইরাসের অজুহাতে সাধারণ সর্দি-কাশির চিকিৎসা দিতেও নারাজি হয়ে গেল কিন্তু সরকার কিছু বললো না। হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে মানুষ মারা যেত, সামান্য সর্দি-কাশিতে এতো মানুষের মৃত্যু পৃথিবীতে আর হয়েছে কিনা কারো জানা নেই। তখন সে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা এমন এক চতুর কৌশল নিয়েছিল যে, যেদিন আমেরিকায় আক্রান্ত রোগী ৩ লক্ষ ছাড়িয়ে যায় সেদিনও বাংলাদেশে মাত্র ১০০ এর মত অথচ তাদের মত ঘনবসতিপূর্ণ দেশে আক্রান্তের সংখ্যা হবার কথা আকাশচুম্বী। তাদের কৌশল ছিল সবার চেয়ে আলাদা, কেউ আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ দেখা দিলে তাদের পরীক্ষা করতো না, ঔষধ দিয়ে আলাদা থাকতে পরামর্শ দিত। একা থেকে মারা যাবার পরে গিয়ে পরীক্ষা করতো কাউকে কাউকে আবার অনেককে করতোও না। ফলাফল ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষ কম এবং মৃতের সংখ্যাও কম।“
তাদের পাশের আরেকটা দেশ ছিল এদের চেয়ে আরেক কাঠি উপরে। তারাও প্রতিবেশীদের কৌশল অনুসরণের পাশাপাশি নিয়েছিল বেশ মজার কিছু কৌশল যেমন: ভাইরাসের সংক্রমণ না ঠেকিয়ে তারা "গো করোনা গো" স্লোগান শুরু করলো, ঔষদের পিছে না ছুটে গরুর মূত্র পান করতে পরামর্শ দিল, ডাক্তারদের সুরক্ষা নিশ্চিত না করে দেশের জনগণকে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ঘন্টি বাজাতে বললো, লাইট নিভিয়ে মোমবাতি জ্বালাতে বললো। ব্যাপারটা এমন দাড়ালো যেখানে পৃথিবীর পরশক্তি দেশ গুলো নাজেহাল সেখানে এরা ব্যাস ঘন্টি বাজিয়ে আরে মোমবাতি জ্বেলে করোনা মোকাবেলা করে ফেললো। সরকার নিজের মত মজা করে গেল জনগণের সাথে, আর সাধারণ জনগণ মজায় ধেই ধেই নেচে মারা গেল।
রূপকথার সেই দেশ, আমার গল্প শেষ।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:১৩