#COVID19 #Awareness
আমি একজন প্রবাসী, কিভাবে প্রবাসী হয়েছি – ২০০৩ সালের মাঝামাঝি কলেজ জীবনে আমি ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়াই, তখন আমারা বিরোধী দলে। আমার এলাকায় তথা গোটা বাংলাদেশেই অসুস্থ রাজনীতি চলে। সরকারি দলের নেতা কর্মীরা বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের বিভিন্ন ভাবে ভোগান্তিতে ফেলে, এখনো হয়ে চলেছে সেই একই রাজনৈতিক ধারা। ২০০৬ সালের মাঝামাঝি যখন পরিরস্থিতি অনেক খারাপ তখন আমার বাবা বাধ্য হয়ে আমাকে সৌদিতে পাঠায়। এখানে এসেছি ১৪ বছর হতে চলেছে, গত ১৪ বছরে আমার আয়ের সিংহভাগ দেশে পাঠিয়েছি নিজের এবং পরিবারের জন্য।
রেমিটেন্স যোদ্ধা – এখন আমি যদি নিজেকে রেমিটেন্স যোদ্ধা বলি সেটা বাস্তবিক হবে হয়তো কিন্তু কতটা নৈতিক হবে? এই মধ্যপ্রাচ্চে আমি দেখেছি কোন প্রবাসী অবৈধ হুন্ডিতে টাকা পাঠাবার সুযোগ পেলে ভুলেও বৈধ ভাবে টাকা পাঠায় না। উন্নত বিশ্বে হুন্ডি ব্যবহারের প্রবনতা আরো বেশি। এখন তো অর্ধেকের বেশি টাকা যায় বিকাশে যেটা লাইসেন্স করা অবৈধ পথ। নিজের প্রয়োজনে বিদেশে এসে উপার্জন করে নিজের দরকারে টাকা পাঠিয়ে আমি নিজেকে রেমিটেন্স যোদ্ধা বলতে রাজিনা। আমার নজরে রেমিটেন্স যোদ্ধা হলো দেশে বসে যেসব তরুণতরুণীরা ফ্রি-ল্যান্সিং এর মাধ্যমে এই প্রতিযোগিতার বাজারে নিজেদের যোগ্যতায় কাজ করে বিদেশের টাকা বৈধ পথে দেশে নিয়ে যাচ্ছে তারাই মূলত।
উপরের কথা গুলো আমার নিজের উপলব্ধি, কেউ নিজেকে রেমিটেন্স যোদ্ধা বলতে চাইলে আমার কোন সমস্যা নাই। অনেকে জিজ্ঞেস করতে পারেন, তাহলে কি প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতিতে কোন অবদান রাখছেনা? অবশ্যই রাখছে তবে আমার দেখা কেউ দেশের উন্নয়নের জন্য টাকা পাঠায় না, সবাই নিজের দরকারে পাঠায় আর সেটা সঠিক ভাবে করে থাকলেই দেশের উপকার হচ্ছে বা হবে। আমরা যারা প্রবাসে আছি তারাই ভালো করে জানি বহিঃবিশ্বে আমাদের তথা বাংলাদেশী’দের সম্মান কোন পর্যায়ে আর এটা সম্পূর্ণ এই স্বঘোষিত যোদ্ধাদের অবদান।
সাম্প্রতিক করোনা ভাইরাসের আক্রমন থেকে নিজেদের বাঁচাতে এই স্বঘোষিত যোদ্ধাদের দলবেঁধে দেশে ছুটায় প্রমান করে ওনাদের দেশপ্রেম কোন পর্যায়ে। কেউ কেউ তো আরো একধাপ এগিয়ে, নিজের অসুস্থতার কথা গোপন রেখে দেশপ্রেম ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে। পৃথিবীর অন্যান্য জাতি নিজের জীবন দিয়ে দেশপ্রেম দেখায় আর আমরা অন্যের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে দেশপ্রেম জাহির করি। দেশে এখনো যতজন করোনা আক্রান্ত হয়েছে সবাই বিদেশ ফেরত নয়ত তাদের পরিবারের। অনেকেই বলবে এখানে সরকারের গাফিলতি আছে, আরে ভাই আমাদের দেশে কয়জন সরকারের উপর আস্থা রাখে, কয়জন সরকারের আহ্বানে সহযোগিতা করে, কয়জন মন থেকে সরকারকে মানে? তাহলে সরকারের গাফিলতি থাকলেই বা দোষ কিভাবে দেবেন? যদি বলেন কেন একজন প্রবাসী দেশে আসার পরে বিমানবন্দরে তাকে পরিক্ষা করা হয়নি, বা তাকে আলাধা করে রাখেনি ১৪ দিন? আমার প্রশ্ন হলো ওনার এই সময়ে দেশে আসার কি দরকার ছিল, আমরা কি জানিনা আমার দেশ এবং দেশের সরকারের সক্ষমতা কতটুকু?
ভাই রেমিটেন্স যোদ্ধা না হয়ে দেশপ্রেমিক হোন, নিজেকে প্রবাসী না বানিয়ে মানুষ বানান। দেশ কি দিয়েছে প্রশ্ন না তুলে আপনি কি দিয়েছেন দেশকে সেটা একবার ভাবুন!
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১৯