বাৎসরিক ছুটি শেষে দেশ থেকে আসছি এই মাসের ৩ তারিখে (আমি একজন সৌদি প্রবাসী), রিয়াদ এয়ারপোর্টে নেমে ওয়ালেট চেক করে দেখি ৪২ রিয়াল ক্যাশ আছে সাথে এটিএম কার্ডে কিছু আর ক্রেডিট কার্ড আছে বলে টেনশান নিলাম না। এক বন্ধু আসছিল এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করতে ওর বাসা রিয়াদে, ওর ওখান থেকেই দেশে যাই আবার এসে এখানে উঠি। পরে আমার রুমমেটের সাথে আসছি কর্মস্থলে তাই কোন খরচ হয়নাই। ৫ তারিখে অফিসে জয়েন করলাম, আমি যেখানে কাজ করি এখানে মোবাইলের লোড ছাড়া বাকি সবই ফ্রি। উইকেন্ডে দাম্মাম যাবো, ভাবতেছিলাম ৪২ রিয়াল দিয়ে কিভাবে কি হবে এটিএম কার্ডে যা আছে তার চেয়ে ১ রিয়াল বেশি আসছে ক্রেডিট কার্ডের বিল।
তখনি এক বড় ভাই জিগাইলো, "মুহসীন আমার কিছু জিনিশ অনলাইন থেকে অর্ডার করা দরকার তুমি কি একটু করে দিতে পারবা?" মুখে কইলাম হ ভাই সমস্যা নাই, মনে মনে কই ভাই এটার জন্যই তো আমি অপেক্ষা করতেছি। আমি ক্রেডিট কার্ড দিয়ে অর্ডার করবো ভাই ক্যাশ দিয়ে দেবে, আমার খরচ চলে যাবে।
যাক উইকেন্ডে কাটিয়ে আসলাম পরেই জানতে পারি আমার এক ভায়রা আসছে মক্কাতে ওনার মা'কে নিয়ে পবিত্র উমরাহ্ পালনের উদ্দেশ্যে। তার মানে আমাকে দেখা করতে যেতে হবে আর নিজেও উমরাহ্ করিনাই মেলা দিন। ভাবতেছি কেমনে যাই, বাসে গেলে জান বের হয়ে যাবে কারন ১১০০ কিমি রাস্তা আর বিমানে গেলে এই সর্ট নোটিশে টিকেটের দাম দিয়ে দেশ থেকে ঘুরে আসা যাবে। তখনি রিয়াদের এক বন্ধু (নন ব্যাচ) জানাইলো ওরা ১৬ তারিখে উমরাহ্ করতে যাবে, ওরে কইলাম আমার জন্য এক সিট রাখিস। কোনমতে মক্কা যেতে পারলে হয়, এর পরে বন্ধু রশিদের হোটেল আছে নয়তো ফারুকের বাসা।
এর মধ্যে আবার আমাদের SSC 2002 & HSC 2004 Bangladesh গ্রুপের Silent Smile 2019 এর জন্য কালেকশান হচ্ছে, মানে আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করছি রাস্তার সুবিধা বঞ্চিত বাচ্চাদের মুখে ঈদের আগে হাঁসি ফুটাতে। তো সৌদিতে মিনিমাম চাদা ধরলো পার হেড ৫০ রিয়াল। একদিন এমনি মজা করে বললাম আমার টা কে দিবি, বন্ধু রাজীব উঠে কয় তোরটা আমি দিয়ে দেবো এমনিতেও তুই আমার কাছে কিছু টাকা পাওনা আছিস। খোঁদার কসম আমি ভুলেই গেছিলাম ওর কাছে কিছু পাওনা আছি বলে। যাক সাইলেন্ট স্মাইলের চাদা হয়ে গেল, মক্কা যাবার ব্যবস্থা হয়ে গেল।
এর মাঝে খবর পেলাম রিয়াদ এম্বাসির কর্মকর্তা বন্ধু পলাশ আর নূরনবী পরিবার সমেত মক্কা যাবে, জেজানের বন্ধু আল-আমীন পোস্ট দিল সে আসতেছে মক্কা। এর পরে জানলাম রিয়াদের আরেক বন্ধু কবিরও যাবে এই সপ্তাহে, খামিস মুশাইত থেকে বন্ধু মাহবুব আসবে পরিবার নিয়ে। তখনি মক্কার বন্ধুদের নক করলাম কোন প্লান করা যায় কিনা, ওদের সারা পেতে দেরি দেখে জেদ্দার বন্ধু ওমর ফারুককে নক দিলাম। ওমর ঠুকঠাক করে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে ফেললো। পলাশও আমাকে নক দিতেছিল একটা ইফতারের আয়োজনের জন্য। ওমর সবাইকে দাওয়াত দিয়ে হিসেব টিসেব করে বসে আছে কিছু যে হোস্ট তারেই জানায় নাই, যাক ওর ভরসা ছিল রশিদের উপর সে নিমেষেই সব আয়োজন করে ফেলছে। ইফতার আয়জনের গুরুভার পালন করেছে বন্ধু সোহেল রায়হান এবং আবদুল হামিদ, আমাদের বিশিষ্ট ব্যংকার বন্ধু জাহেদুল কায়শার আর দেওয়ান ইফতারে স্পেশাল কাটাকুটির দায়িত্ব পালন করেছে। মক্কা H&M এর কর্মকর্তা বন্ধু রনি অনেক ব্যবস্ততার মাঝেও কষ্ট করে হেটে এসেছে, এক্কেরে শেষ দিকে এসেছে রাজীব রহমান। ওহ মক্কার রাকিব, জেজানের নুরনবিও ছিল আমাদের সাথে। আমাদের ০২--০৪ এর এক বিশাল মিলন-মেলা হয়ে গেল পবিত্র নগরী মক্কাতে। মদীনার বন্ধু সোহেল শামসকে এবার মেলা মিস করেছি।
মক্কা যাবার দিন সকালে যখন অফিসে সবাইকে বলে যাচ্ছিলাম তখনি এক কলিগ বলল ২ মিনিট দাড়া একটা কথা আছে। পরে সে হুট করে এসে পকেটে হাত ঢুকিয়ে দিল আর বলল এটা সামান্য একটু হাদিয়া, আল্লাহ তোর উমরাহ্ কবুল করুক। পরে দেখলাম ২০০ রিয়াল। নিজের করমস্থল থেকে রিয়াদ গেলাম আরেক কলিগের সাথে, সে তার বাসার সামনে আমাকে নামিয়ে দিয়ে বাকি রাস্তার ভাড়া সমেত উবারে তুলে দিছে।
আল্লাহর অশেষ রহমতে উমরাহ্ পালন করে, ভায়রার সাথে দেখা করে ইফতার মাহফিল করে জেদ্দা গিয়ে ওমরের বাসায় খেয়ে সহি-সালামতে বাসায় এসেছি পকেট আবার খালি। গতকাল ইফতারের একটু আগে আরেক কলিগ এসে মেলা জোর খাটিয়ে দিয়ে গেল ১৩০ রিয়াল, জিগাইলাম কিসের টাকা কয় আপনার ভাবীর জন্য যে বোরখা নিছিলেন ঐটার জন্য। বিশ্বাস কর আমি কল্পনাও করিনাই এই টাকার কথা।
ভায়রা আসছে ওনাকে কিছু কিনে দিলেও ওনার বাচ্চাদের জন্য কিছু কিনে দেয়া দরকার, সেই সাথে নিজের বউ আর মেয়ে। তখনি মনে পরলো মদীনার বন্ধু সোহেল এর কথা, ওরে ফোন করে বলে দিছি কিছু উপহার সামগ্রী প্যাক করে ভায়রাকে দিয়ে দিতে। টাকা ওরে পরে দেয়া যাবে, ও আগেও এভাবে আমাকে সাহায্য করেছে।
এত কথা কয় জনের পড়ার সময় হবে জানিনা, আমিও লিখতাম না। আমাদের হিমু জীবন কাহিনী শুনাচ্ছিল বেশ কিছুদিন, ওর জীবনের শুরু দিকের সংগ্রামের কথা। তাই ইচ্ছে হলো আমিও একটু শুনাই, ভাল চাকুরী করলে বা বিদেশে থাকলে যে কেউ খুব ভাল আছে বা তার হাতটান নাই এমনটা না। ভালো - খারাপ সময় সবারই আসে। খারাপ সময়ে আল্লাহ কাকে দিয়ে আপনার সমস্যা পার করেছে সেটা মনে রাখা খুব জরুরি।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০১৯ রাত ১১:১২