অনেক আস্পর্ধা নিয়ে বইয়ের ব্যাপারে লিখতে বসেছি, ভুলত্রুটি ক্ষমা করার অনুরোধ রইল। গ্রামের ছেলে নিজের পাঠ্য বইয়ের বাহিরে আর তেমন কিছু কেউ কিনে দিত না তাই ঢাকা আসলে মামাত-খালাত ভাইবোনদের থেকে নিয়ে বিভিন্য গল্পের বই পড়তাম, একটু বড় হবার পরে গাঁয়ের হাট থেকে নিজেই কিনতাম সস্তা রুপকথা কিংবা ভুতের পল্পের বই। এখনো মনে পরে ক্লাস নাইনে একদিন বাংলা টিচার জিজ্ঞেস করেছিল সবাইকে, পাঠ্য বইয়ের বাহিরে অন্য কোন পল্প বা উপন্যাস কে কে পড়েছে, সেদিন শুধু আমি একাই হাত তুলেছিলাম। কলেজে পড়ার সময় লাইব্রেরিয়ান বিরক্ত হয়ে যেত আমার উপর এমন সব বই চেয়ে বসতাম। কলেজের পাশেই একটা গন পাঠাগার ছিল, সেখান থেকে নিতে নিতে এক সময় আসলো সব বই আমার পড়া। এখন আর হার্ড কাভারের বই তেমন পড়া হয়না, বউ মাঝে মাঝে পাঠায় তাও পড়তে সময় পাইনা, মুভি, ইংলিশ সিরিয়াল আর আড্ডা দিয়েই নাহয় চুপচাপ সময় কাটিয়ে ঘণ্টা পার হয়। মাঝে মধ্যে অফিসে বসে কম্পিউটারে pdf ফাইলের বই পড়ি।
প্রথম আলো – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
এই বইটি নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমেই আমি বলবো যে, আমাদের সন্তানদের অষ্টম বা নবম শ্রেণীতে থাকতেই এই বইটি পড়তে দেয়া উচিৎ। এই বখে যাওয়া বয়সের শুরুতেই যদি এমন কিছু ওদের হাতে পরে এবং কিছুটা উপলব্দি হয় তাহলে আর তাদের শিক্ষার জন্য অভিভাবকদের চিন্তা করতে হবেনা। এই বই পড়ে আমি শিক্ষানুরাগী হয়েছি, আমার কৈশোরে যদি এই বই পড়া হতো তাহলে হয়তো আমি আজকে প্রবাসে শ্রমিক না হয়ে অন্য কিছু হতাম। ২০০০ সালের পর থেকে আমি একা একা ঢাকার পথেঘাটে একা ঘুরে বেড়াতাম, তখন ফুটপাতে অনেকে সস্তা দামে অনেক বড় বড় বই বিক্রি করতো, শেসব দোকানে “প্রথম আলো” বইটা দেখে আমি ভাবতাম এটা বুজি প্রথম-আলো পত্রিকার সংকলন জাতীয় কিছু হবে, পরে এখানে আসার বছর খানেক পরে এক বড় ভাই আমাকে অনেক গুলি বই দেয়, তখন হাতেও প্রচুর সময় থাকতো, সে সময়ে পড়েছিলাম এই অনবদ্য লেখা গুলি।
প্রথম আলো বইটা ভালোলাগার পিছনে সবচেয়ে বড় কারন হচ্ছে, কাহিনীর চরিত্র গুলি প্রায় সব বাস্তব জীবনের এক একজন কিংবদন্তী, “যেমন রবীন্দ্রনাথ, নরেন্দ্রনাথ (বিবেকানন্দ), রামকৃষ্ণ পরমহংস, নটী বিনোদিনী, গিরিশচন্দ্র প্রভৃতি। সুনীলই প্রথম রবীন্দ্রনাথকে উপন্যাসের চরিত্র হিসাবে ব্যবহার করেছেন। তবে উপন্যাসের মূল চরিত্র হিসেবে রয়েছে দুটি কাল্পনিক চরিত্র "ভরত ও ভূমিসুতা"। উপন্যাসটির ঘটনা প্রবাহ আবর্তিত হয়েছে এই দু'টি চরিত্রকে কেন্দ্র করেই। উপন্যাসটি থেকে স্পষ্ট একটি ধারণা পাওয়া যায় রামকৃষ্ণ পরমহংস ও তাঁর শিষ্যদের সম্বন্ধে”। লেখক এখানে এমন নিপুন ভাবে বস্তব চরিত্রের সাথে কাল্পনিক চরিত্রের মিশেল ঘটিয়েছে যা অনস্বীকার্য। ভরত এবং ভুমিসুতা এই দুই চরিত্র দিয়ে লেখক মানুষের ভাগ্য, ভালোবাসা, নিষ্ঠা, কর্ম-উদ্দীপনা এবং বিশেষ করে শিক্ষার যে চিত্র দেখিয়েছে, শিক্ষার প্রতি যে অনুরাগ, শিক্ষা মানুষকে কিভাবে বদলে দেয়, জীবনকে কোন অবস্থান থেকে কোথায় নিয়ে আসে তা আমাকে মুগ্ধ করেছে।
আমার প্রিয় বইয়ের তালিকায় এটি সবার উপরে রয়েছেঃ
১। প্রথম আলো – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
২। পূর্ব পশ্চিম – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৩। শ্রীকান্ত (৪ খন্ড) – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
৪। মুক্তিযুদ্ধের নির্বাচিত গল্প – ইমদাদুল হক মিলন
৫। অনিমেষ চতুষ্ক – সমরেশ মজুমদার (উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষ এবং মৌষলকাল এই চারটি বই নিয়ে অনিমেষ সিরিজ)
৬। কবি – হুমায়ুন আহমেদ
৭। চারুমতি – বুদ্ধদেব গুহ
৮। সেই সময় – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৯। সাতকাহন – সমরেশ মজুমদার
এগুলা ছাড়াও অনেক বই রয়েছে যাদের নাম মনে গাঁথা নাই, একটা বইয়ের কথা খুব মনে পরে, হুমায়ূন আহমেদের লেখা ছিল, অনেকটা ওনার জীবনীর মত একেবারে জন্ম থেকে ওনার শৈশব – কৈশোর নিয়ে লিখেছিলেন। তো এবারে আসি আমার সবচেয়ে পছন্দের বইয়ের কথা নিয়ে। সাতকাহনের মত বই আমি দুইবার পড়েছি, একবার ম্যট্রিকের পরে আবার বিদেশে এসে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৪:০১