http://facebook.com/rajinreview
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, কাশ্মীরের উরিতে অবস্হিত ভারতীয় সেনাবাহিনী হেডকোয়ার্টার জঙ্গি হামলার শিকার হয়। চারজন লস্করের জঙ্গি, ভারতীয় সেনার ১৯ জনকে ঘুমন্ত অবস্থায় হত্যা করে। ব্যাপারটায় ভারত বেশ নড়েচড়ে বসে। সেই ঘটনার বদলা হিসেবে ভারতীয় সেনা বাহিনী পাকিস্তানে একটি সার্জিকাল স্ট্রাইক চালায়। সোজা কথায় বেছে বেছে শত্রু নিধন। অফিসিয়ালি, বাংলাদেশ সরকার ভারতের এ পদক্ষেপকে সমর্থন জানিয়েছিল। এই সত্য ঘটনার উপর ভিত্তি করেই নির্মিত একটি ফাটাফাটি মানের একটি এ্যাকশন মুভি: Uri: The Surgical Strike।
বলিউড মুভিতে দুনিয়া উল্টায় গেলেও কিছু ফরমুলা থাকতেই হবে। তারমধ্যে প্রথম ফরমুলা হলো নায়ক-নায়িকার প্রেমকাহিনী। এইডা না থাকলে সেটা কোন বলিউড মুভিই না। এই মুভিই মনে আমার দেখা প্রথম বলিউড মুভি, যেটাতে নায়ক – নায়িকা নেই। মূল চরিত্রে ভিকি কৌশল, এবং সহচরিত্রে মোহিত রায়না, ইয়ামী গৌতম, পরেশ রাওয়াল, কৃতি কুলহারি থাকলেও মুভির চিত্রনাট্য এবং নির্মাণশৈলীতেই অনেক অধিক জোর দেওয়া হয়েছে। ভাবাই যায় না যে এটা পরিচালক আদিত্য ধরের প্রথম নির্দেশনা।
মুভির সেরা দিক নিঃসন্দেহে এ্যাকশন দৃশ্যগুলি। দৃশ্যগুলি এমনই জীবন্ত ছিল যে গায়ের লোম খাড়া হয়ে যায়। কিছু দৃশ্যে ভেবেছিলাম, নায়ক এখনই সালমান খান হয়ে সবাইরে সাইজ কইরা দিবে। কিন্তু না। এই মুভিতে যুদ্ধের রণকৌশল এবং পরিকল্পনাকে দারুণভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বাচ্চা মেয়ের নিজের পিতার মৃতদেহের সামনে স্যালুট দেওয়ার দৃশ্যটা মারাত্মক ছিল।
এরপরে অবশ্যই সাউন্ড ডিজাইনকে বাহবা দিতেই হবে। গোলাগুলির ধাম ধাম শব্দ সেইরকম ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। মুভির গানগুলি মোটামুটি হলেও ফাটাফাটি ছিল আবহ সংগীত। শাশ্বত সচদেব এর আবহ সংগীত এতটাই ভাল যে সেটা গানের এ্যালবামের সাথেই পাওয়া যাচ্ছে। তবে মুভির দৃশ্যগুলির সাথে সেগুলি অসাধারণ লাগে।
অভিনয়ের দিক দিয়ে ভিকি কৌশলের জবাব নেই। কয়েকদিন আগেই গুজরাতি ভোলাভালা চরিত্র করা ছেলেটি এখন বর্ডারের সানি দেওল এর চরিত্রকেও টেক্কা দেয়। এরপর অবশ্যই ইয়ামী গৌতমকে দারুণ লেগেছে। মোহিত রায়না এবং কৃতি কুলহারির চরিত্রগুলি আরও একটু বেশি হলে ভালো লাগতো।
মুভির খারাপ দিক খুবই কম। মিশনে যাবার আগে ভিকি কৌশলের এক ধরণের প্রতিশ্রুতি করে। যেটার কারণে মুভির রোমাঞ্চ কিছুটা কমে যায়। মুভিতে যথারীতি পাকিস্তানিদের গালি দেওয়া হয়েছে। এই মুভির মতে পাকিস্তানে তিন ধরণের মানুষ থাকে : জঙ্গি, জঙ্গিদের বন্ধু, এবং ভারতীয়দের গুপ্তচর। এছাড়া পাকিস্তানে আর কেউ থাকেনা। এটা মুভির খারাপ দিক না হলেও ব্যাপারটা কিছুটা হাস্যকর।
রাজনৈতিক ব্যাপারগুলি কিছুটা উপেক্ষা করে যদি মুভিটিকে শুধুমাত্র যুদ্ধের মুভি হিসেবে দেখেন তাহলে নিঃসন্দেহে ভাল লাগবে। সবমিলিয়ে আমার দেখা অন্যতম সেরা যুদ্ধের মুভি।
রেটিং – ৪.০ / ৫.০
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:৩৯