টিভির পর্দাটি ছোট হলেও সেটি কিন্তু মারাত্মক আকর্ষণীয়। টিভির পর্দার দুনিয়াতে একবার ঢুকলেই কিন্তু বস্তা পচা যা ইচ্ছা পাবলিক কে খাওয়ানো যায়। ভারতীয় টিভি ইন্ডাস্ট্রি এই সুযোগটি অত্যন্ত খারাপভাবে দিনের পর দিন ব্যবহার করেই্ যাচ্ছে। “কিউকি সাস ভি কাভি বাহু থী”, “কুসুম”, “সাসুরাল সিমার কা” ,”পাখি ড্রেস” ইত্যাদি যাচ্ছে-তাই চলছে তো চলছেই। “গেম অফ থ্রোন্স” বা “ব্রেকিং ব্যাড” তো আর এখানে সম্ভব না। কিন্তু আনুরাগ কাশ্যপকে তো আর চিনো না বাপু। নেটফ্লিক্সের কল্যাণে চলে এলো হিন্দী ভাষার দারুন এক টিভির রোমাঞ্চ “সেক্রেড গেমস”।
একদম স্পয়লার দিবো না। কাহিনী শুরু হয় এক টেলিফোন কলের মাধ্যমে। এক ক্রিমিনাল (নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী) এবং এক পুলিশ (সাইফ আলি খান) এর কথোপকথন। কিন্তু তাদের মধ্যে কোন চোর-পুলিশ সম্পর্কের কথাবার্তা নয়। যেন দুই বন্ধুর মধ্যে মন খুলে এক আড্ডা। সেই আলাপ থেকে এই কাহিনী যে কোথায় যায় সেটা চিন্তার বাইরে!
টিভি সিরিজ হিসেবে নওয়াজুদ্দিন এবং সাইফ বিরাট তারকা। তবে সিরিজটি একেবারেই তারকা নির্ভর না হয়ে পুরোপুরি কাহিনী নির্ভর। সাইফকে কিছুটা পার্শ্ব চরিত্রই বলবো। নওয়াজুদ্দিন এর চরিত্রের গুরুত্ব বেশি হলেও সব দৃশ্যে শুধু তাকে দেখা যাবে তা নয়। তবে দারুন অভিনয় করেছেন সাইফ এবং নওয়াজুদ্দিন। অন্যান্য পার্শ্ব চরিত্রে রাধিকা আপটে ছাড়াও দারুন লেগেছে যতীন শর্মা, নীরজ কবি, জিতেন্দ্র যোশি এবং লুক কেনি কে । এছাড়া অভিনেতাদের তালিকায় আরো একজন দুর্ধর্ষ অভিনেতা আছেন যাকে মাত্র কয়েকটি দৃশ্যে দেখানো হয়েছে।
বিক্রমচন্দ্রের উপন্যাস অবলম্বনে সুন্দর চিত্রনাট্য লিখেছেন বরুন গ্রোভার। এছাড়া পরিচালনার জন্য বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানি, এবং আনুরাগ কাশ্যপ প্রশংসার দাবীদার। ৮ টি পর্বের কোন জায়গাতেই বোরিং লাগেনি। সর্বদা একটি টান টান উত্তেজনা বিরাজ করে।
সিরিজটির খারাপ দিক তেমন কিছু নেই। শুধুমাত্র বলার জন্য বলা যায় নওয়াজুদ্দিনের চরিত্রটি “গ্যাংস অব ওয়াসেপুর” এর “ফাইজাল” একই ধরণের। এমনকি একটি দৃশ্যটি পুরোপুরি গ্যাংস অব ওয়াসেপুর থেকে তুলে দিয়েছে।
সিরিজটির ওপেনিং ক্রেডিট পুরাই মারাত্মক লেভেলের। পুরাই লোম খাড়া হয়ে যায়। ৮ টি পর্বের প্রতিটির নামের ভিতর রহস্য লুকিয়ে আছে। এছাড়া কিছু দৃশ্যে মনোযোগ দিলে পরে সেটা আবার কাজে আসে।
ভারতীয় টিভি সিরিজ বলেই পুরো পরিবার নিয়ে লাফায় টিভির সামনে বসা যাবে না। গলা কাটা, গালাগালি, এবং কাপড় খোলা সব কিছুই আছে এখানে। তবে কাহিনীই মূল আকর্ষণ। সপ্তম পর্বটি আমার বেশি ভালো লেগেছে। শেষ পর্বটি বেশ শকিং। নেটফ্লিক্সেরও একটি ধন্যবাদ প্রাপ্য।
একবার বসলে কিন্তু টানা ৮ ঘন্টা চলে যাবে। সুতরাং হিসাব করতে দেখতে বসার পরামর্শ দিচ্ছি। সব মিলিয়ে দারুন।
রেটিং – ৪.০ / ৫.০
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১৮ দুপুর ২:৩৪