হ্যা আল্লাহপাক নবী রাসূলের সাথে কথা বলেছেন।
কারো সাথে কথা হয়েছে সরাসরি। কারো সাথে ফেরেশতাদের মাধ্যমে, কারো সাথে ওহির মাধ্যমে। আমরা যেভাবে কথা বলি একজন আরেকজনের সাথে আল্লাহ সেইভাবে কথা বলতেন না। কত জন নবী রাসূলের সাথে আল্লাহ কথা বলেছেন, সেই তালিকা নেই। সমস্ত তালিকা পাওয়ার মাধ্যম হচ্ছে কোরআন এবং হাদিস। এবিষয়ে কোরআন হাদিসে তেমন কিছু নেই। তবে ধারনা কতা যেতে পারে। হযরত মূসা এবং আমাদের শেষ নবীর সাথে আল্লাহ পাক কথা বলিয়াছেন।
আল্লাহ নবী রাসূলের সাথে কোনো রকম ভাষা, অক্ষর, বা আওয়াজ ছাড়াই কথা বলেছেন।
যেমন কোরআন আল্লাহর বানী। কিন্তু কোরআন আল্লাহ পাক লিখেন নাই। অথবা আমরা সুর করে তেলোয়াত করি, সেটা আল্লাহ বলে দেন নাই। এগুলো মানুষের সৃষ্টি। আল্লাহপাকের ইশারায় অনেক কিছু হয়ে যায়। সমস্ত ক্ষমতার আধার তিনি। তিনি যা চাইবেন, তাই হবে। কেউ কোনোদিন আল্লাহ কে দেখে নাই। সেটা সম্ভব না। তবে কেউ চাইলে আল্লাহ কে অনুভব করতে পারবে। আল্লাহর সৃষ্টির দিকে ভালো করে চাইলেই যে কেউ আল্লাহ কে অনুভব করতে পারবে। আমি আল্লাহ কে অনুভব করতে পারি।
আল্লাহর কথা অদৃশ্য ভাবে নবী রাসূলের অন্তরে গিয়ে পৌছেছে।
এই বিষয়টা আমাদের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর খুব সুন্দর করে অনুভ করতে পেরেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, হৃদয়ের গভীর থেকে যে কথা উঠে আসে, প্রিয় মানুষের হৃদয়ে সে কথা ঠিক ঠিক পৌছে যায়। আল্লাহর কথা বলার জন্য বিশেষ কোনো মাধ্যম লাগে না। ভাষা লাগে না। কাগজ কলম লাগে। ইশারা লাগে না। আল্লাহ যাকে যা বুঝাতে চেয়েছেন, সে ঠিক ঠিক যথাসময়ে জেনে যায়, বুঝে যায়। আল্লাহ নবীজিকে বেছে নিয়েছিলেন বলেই নবীজি আল্লাহর ভাষা বুঝতে পেরেছেন। আল্লাহর ইচ্ছা পূরনের জন্য কাজ করে গেছেন।
নবীজির সাথে আল্লাহপাক যেভাবে কথা বলেছেন: তখন মধ্য রাত।
চারপাশ ঘন অন্ধকার। চারপাশ বড় বেশি নির্জন। কোনো সাড়া শব্দ নেই। কাবাঘরের বারান্দায় নবীজি ঘুমিয়ে আছেন। গভীর ঘুমে। তখন কেউ একজন নবীজিকে ডাকতে থাকে। মুহাম্মদ। এই মোহাম্মদ। নবীজির ঘুম ভেঙে গেলো। নবীজি দেখলেন, ফেরেশতা জিবরাইল তার মাথার কাছে দাড়িয়ে ডাকছেন। নবীজি জিবরাইল (আ) কে ভালো করেই চিনেন। জিবরাইল (আ) বললেন, দেখুন আপনার জন্য কি এনেছি! তার আগে ওজু করে নিন।
ওজু করার পর নবীজি দেখলেন ঘোড়ার মতো একটা কিছু।
তাতে আবার পাখা আছে। বাহনটির নাম বোরাক। বোরাক থেকে চারিদিকে আলো বের হচ্ছে। জিবরাইল (আ) অদৃশ্য ভাবে নবীজিকে কিছু শক্তি দিলেন। নবীজি বোরাকে বসলেন। পাশে জিবরাইল (আ)। কয়েক সেকেন্ডে মধ্যে বোরাক বাহনটি জেরুজালেমে চলে গেলো। জিবরাইল (আ) ইঙ্গিত করলেন, নবীজি বোরাক থেকে নামলেন। মসজিদে বসে নবীজি দুই রাকাত নামাজ পড়লেন। নামাজ শেষে বোরাক বাহনটি নবীজি আর জিবরাইল (আ) কে নিয়ে চললো অনন্ত নক্ষত্র বীথিতে। সেখানে মোট সাতটি আসমান।
নবীজি মহাকাশ দেখে মুগ্ধ! এক জায়গায় গিয়ে বোরাক থামলো।
তারা দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেন। একজন ফেরেশতা নবীজিকে স্বাগতম জানালো। এবং আদম (আ) এর সাথে নবীজির পরিচয় করিয়ে দেওয়া হলো। নবীজি আদম কে সালাম দিলেন। এরপর নবীজি আবার বোরাকে উঠেন। এবং প্রথম আসমান থেকে দ্বিতীয় আসমানে যান। সেখানে দরজা খোলা হলো। এবং ইসা (আ) সাথে নবীজির দেখা হলো। নবীজি সালাম দিলেন। এরপর নবীজি তৃতীয় আসমানে গেলেন, সেখানে দেখা হলো, ইউসুফ (আ) সাথে। একে একে নবীজি চতুর্থ, পঞ্চম এবং ষষ্ঠ আসমানে গেলেন। দেখা পেলেন— ইদিস (আ), হারুন (আ) এবং মূসা (আ) এর।
শেষমেশ সপ্তম আসমানে নবীজি আল্লাহর সাক্ষাৎ পেলেন।
সরাসরি নয়, মাঝখানে একটা পর্দা ছিলো। বেশ কিছু কথাবার্তা হয়। নবীজি ফিরে আসার সময় আল্লাহ ৫০ ওয়াক্ত নামাজের কথা বললেন। আল্লাহর সাথে নবীজির সাক্ষাতের সময় জিবরাইল (আ) কাছে ছিলেন না। ফেরার পথে জিবরাইল (আ) জানতে চাইলেন নবীজির কাছে আল্লাহ কি বলেছেন? নবীজি বললেন ৫০ ওয়াক্ত নামাজের কথা। জিবরাইল (আ) বললেন, হে নবী আপনার উম্মতেরা পারবে ৫০ রাকাত নামাজ পড়তে? নবীজি আবার আল্লাহর দরবারে গিয়ে নামাজ কমিয়ে আনেন।
আসমান থেকে নবীজি দুনিয়াতে ফিরে এলেন ঘুমন্ত অবস্থায়।
ঘুম থেকে উঠে নবীজি দেখেন জিবরাইল নেই। বোরাক নেই। অর্থাৎ জিবরাইল (আ) বোরাক নিয়ে চলে গেছেন। একে একে নবীজির সব ঘটনা মনে পড়লো। নবীজির প্রচন্ড শীত করতে লাগলো। নবীজি উঠানে তাকিয়ে দেখেন, ওজুর পানি শুকায় নাই। বোরাকে উঠার আগে নবীজ অজু করেছিলেন। সেই পানি শুকায়নি। পানি শুকানোর আগে নবীজির সাত আসমান ঘুরা হয়ে গিয়েছে। সাথে সাথে নবীজি দুই রাকাত নামাজ পড়লেন। লম্বা সময় ধরে প্রার্থনা করলেন। তারপর সাহাবীদের ডেকে সুখবর দিলেন। অর্থাৎ নামাজের কথা বললেন। সব সাহাবী নবীজির কথা মেনে নিলেন। কিন্তু একজন সাহাবী প্রশ্ন করলেন, সারাদিনে পাচবার উঠবস অর্থাৎ নামাজ পড়লে আল্লাহ পাকের কি লাভ হবে। আমাদেরই বা কি লাভ হইবে? নবীজি সাহাবীর এই প্রশ্নের উত্তর দিলেন না।