মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ১৯৫৭ সালের কাগমারী সম্মেলনে "আসসালামুয়ালাইকুম" বলে পাকিস্তানকে বিদায় জানানোর ঘটনা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক। তিনি তখন পূর্ব বাংলার জনগণের অধিকার, ভাষা, ও স্বাধীনতার চেতনার ভিত্তি স্থাপন করেন। অনেক ইতিহাসবিদ ও গবেষক মনে করেন, ভাসানীই বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রথম দিককার ঘোষকদের অন্যতম।
তাঁর ঘোষণার মধ্য দিয়ে যে স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়, পরবর্তী সময়ে তা মেজর জিয়া ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাদের নিজ নিজ সময়ে অনুসরণ করেন এবং বাস্তবায়ন করেন। এই ধারাবাহিকতার ফলে বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জন করে।
তবে বর্তমানে মাওলানা ভাসানীর নামের সঙ্গে সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দল যুক্ত নেই। যদি থাকত, তাহলে হয়তো তাঁর অবদান আরও প্রবলভাবে তুলে ধরা হতো এবং তিনিও বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে দাবি করতে পারতেন। তাঁর অবদান আজও বাংলাদেশের ইতিহাসে অমূল্য এবং প্রাসঙ্গিক
মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর "আসসালামুয়ালাইকুম" বলার ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক স্মরণীয় অধ্যায়। ১৯৫৭ সালের ৭-৯ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল জেলার কাগমারীতে অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহাসিক কাগমারী সম্মেলন। এই সম্মেলন ছিল মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে আওয়ামী মুসলিম লীগের (পরে আওয়ামী লীগ) একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক মঞ্চ। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের অধিকার, ভাষা, ও সংস্কৃতির জন্য এটি একটি মোড় পরিবর্তনকারী আন্দোলনের সূচনা করেছিল।
কাগমারী সম্মেলনের পটভূমি:
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে পূর্ব বাংলার জনগণ বুঝতে শুরু করে যে তারা পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর দ্বারা শোষিত হচ্ছে। ভাষা আন্দোলন, অর্থনৈতিক বৈষম্য, ও সাংস্কৃতিক নিপীড়ন পূর্ব বাংলার মানুষের মনে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছিল। এসবের পটভূমিতে মাওলানা ভাসানী একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন।
"আসসালামুয়ালাইকুম" বলার তাৎপর্য:
কাগমারী সম্মেলনের শেষ দিনে মাওলানা ভাসানী পাকিস্তান সরকারের শোষণ ও বৈষম্যের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি ঘোষণা করেন,
> "পাকিস্তানের শোষণ, জুলুম, এবং দুঃশাসনের অবসান না হলে আমি এই পাকিস্তানকে বিদায় জানাই। আসসালামুয়ালাইকুম!"
এটি মূলত পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতি পূর্ব বাংলার ক্ষোভ ও বিচ্ছিন্নতার ইঙ্গিত ছিল। ভাসানীর এই ঘোষণা পূর্ব বাংলার জনগণের স্বাধীনতা আন্দোলনের পথে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়।
এর প্রভাব:
১. মাওলানা ভাসানীর এই বক্তব্য পূর্ব বাংলার জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা জাগ্রত করে।
২. এটি পূর্ব বাংলার স্বাধীনতার আন্দোলনের প্রাথমিক সূচনা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৩. কাগমারী সম্মেলন পূর্ব বাংলার শাসন ব্যবস্থার জন্য স্বায়ত্তশাসনের দাবিকে জোরালো করে তোলে।
৪. এই ঘটনার পর মাওলানা ভাসানী পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর কাছ থেকে একঘরে হয়ে পড়েন, কিন্তু তিনি পূর্ব বাংলার জনগণের কাছে একজন নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।
মাওলানা ভাসানীর এই সাহসী ঘোষণা পরবর্তী সময়ে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পথ প্রস্তুত করেছিল।
সবাই ঘোষক নিয়ে টানাটানি করে, আমি আমার মত প্রকাশের স্বাধীনতা থেকে লিখছি।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ৮:৩২