somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

প্রফেসর আলতাফ

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রফেসর আলতাফ।
স্যারের বাড়ি রাজশাহী। অথচ উনি সারা জীবন কাটিয়ে দিলেন ফরিদপুর। অসংখ্যা ছাত্রছাত্রী স্যারের। ছাত্রছাত্রীদের ভালোবাসার কারনে তিনি ফরিদপুরেই থেকে গেলেন। আলতাফ স্যার ছিলেন হুমায়ূন আহমেদের বন্ধু। একবার হূমায়ূন আহমেদ স্যারের বাসায়ও এসেছিলেন। যাইহোক, স্যার ঢাকা এলে আমার বাসায় আসতেন। আমি জোর করে স্যারকে আমার বাসায় রেখে দিতাম। আমার বউ সুরভির হাতের রান্না স্যারের খুব পছন্দ। একবার স্যার আমার বাসায় এসে অসুস্থ হয়ে গেলেন। অনেক জ্বর। কিছুতেই জ্বর কমছিলো না। স্যারের সাথে আমার অনেকদিন ধরে যোগাযোগ নেই। শুনেছি স্যার এখন অনেক অসুস্থ। স্যার আমাকে অনেক বই দিয়েছেন। উনি আমাকে জোর করে অনেক বই পড়িয়েছেন। স্যারের কারনে কিছু ভালো বই পড়ার সুযোগ হয়েছে। স্যার আমাকে দিয়ে বাংলা সাহিত্যিতের সেরা একশ' বইয়ের তালিকা করিয়েছেন। এরপর বিশ্ব সাহিত্যের একশ' বইয়ের তালিকা করিয়েছেন। এমনকি সেই বই গুলো আমাকে জোর করে পড়িয়েছেন। যদি বলতাম, স্যার বই তো আমার কাছে কেন। স্যার সেই বই ফরিদপুর থেকে আমাকে ঢাকায় কুরিয়ার করে পাঠিয়ে দিতেন।

স্যার আসসালামু আলাইকুম।
কেমন আছেন? অনেকদিন আপনার সাথে দেখা সাক্ষাত নেই। আমাকে ভুলে গেছেন? সুরভিকে ভুলে গেছেন? ছোট্ট পরীকে ভুলে গেছেন? গতকাল রাতে আপনাকে স্বপ্নে দেখেছি। সুন্দর স্বপ্ন। বিকশাল এক দীঘিতে আপনি আর আমি বরশি দিয়ে মাছ ধরছি। আমি তো বিশাল এক কাতলা মাছ ধরে ফেলেছি। খুশিতে দুই হাত উপরের দিকে তুলে নাচছি। বাসাবো কালিবাড়ির দীঘিতে টিকিট কেটে মাছ ধরার ব্যবস্থা আছে। এবার আপনি ঢাকা এলে সেই দীঘিতে মাছ ধরতে যাবো। আপনি কি বরশি দিয়ে মাছ ধরতে পারেন? খুব কঠিন কিছু না। ছিপ হাতে নিয়ে বসে থাকবেন। ভাগ্য ভালো হলে মাছ পাবেন। কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এর সাথে স্যারের বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক ছিলো। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আলতাফ স্যারকে মঞ্চ নাটক করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। স্যার হয়তো কয়েকটা মঞ্চ নাটকও করেছেন। স্যার অনেকের সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু আমি ঘরকুনো স্বভাবের কারনে কারো সাথে যোগাযোগ অব্যহত রাখতে পারিনি।

স্যার আমার ছোট কন্যা ফারাজা কে দেখেননি।
দেখলে অনেক খুশি হতেন। আমার ইচ্ছা একদিন আমার ছোট কন্যা ফারাজাকে নিয়ে ফরিদপুর গিয়ে স্যারকে অবাক করে দেবো। এখন তো ফারাজা হাটতে শিখে গেছে। কথাও বলতে পারে। কত কথা যে বলে! স্যার নিশ্চয়ই আমার ছোট কন্যার মাথায় হাত রেখে দোয়া করে দিবেন। ঢাকায় এসে স্যার একবার আমার অফিসে এসেছিলেন। স্যার ঢাকা এলে অনেক কাজ নিয়ে আসতেন। খুবই ব্যস্ততার মধ্যে স্যারের সময় কাটতো। স্যার, আমার বাসায় একটি কোট রেখে গেছেন। সেই কোট আমি যত্ন করে রেখে দিয়েছি। এই কোট টি স্যারকে আর দিবো না। থাকুক আমার কাছে সৃতি হিসেবে। বেশ কিছু বই স্যার আমাকে পড়তে দিয়েছিলেন। সেই বই গুলো যত্ন করে রেখে দিয়েছি। আমার ইচ্ছা আছে- এবার খুব ধূমধাম করে হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন পালন করবো। আলতাফ স্যারকে প্রধান অতিথি করবো। কেক স্যার কাটবেন। আমি যেমন হুমায়ূন আহমেদকে পছন্দ করি, আলতাফ স্যারও করেন। আমি রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে একটি বই লিখেছিলাম। 'বিকল্পহীন রবীন্দ্রনাথ' নামে। বইয়ের একটি কপি স্যারকে পাঠিয়েছিলাম। বইটি পড়ে স্যার আমাকে ফোন করেছিলেন। খুব খুশি হয়েছিলেন।

আমার মনে আছে-
একদিন মিরপুর এক নম্বরে আপনার সাথে হঠাৎ দেখা। সাথে আপনার ভাগ্নি ছিলো। ভাগ্নিসহ আপনাকে নিয়ে গেলাম আমার শ্বশুর বাড়িতে। আমার শ্বশুর বাড়ি মিরপুর। সুরভি আপনাকে দেখে অনেক খুশি। এরপর কোনো একদিন আপনার সাথে আপনার ভাগ্নির বাসায় গিয়েছিলাম। আপনার ভাগনি দারুন লেবু চা করে খাইয়ে ছিলো। দারুন হয়েছিলো সেই লেবু চা টা। আমার মনে আছে, একদিন হটাৎ স্যার ফোন দিলেন। বললেন, নীলক্ষেত আসতে। সন্ধ্যায় গিয়ে দেখি, স্যার কিছু বই বাধাই করছেন। সেদিনও স্যার আমাকে একটা বই দিয়েছিলেন। স্যারের কি মনে আছে সেই বইটার নাম? নীলক্ষেত থেকে আমরা হেঁটে কলা ভবনের সামনে গিয়ে বসলাম। অনেক গল্প হলো। চা নাস্তা খেলাম। মানুষ আসলে কিছুই ভুলে না। হুটহাট সব মনে পড়ে যায়। স্যারের এক বন্ধু আমাদের এলাকাতেই তার বাসা। স্যারের সেই বন্ধুর সাথে আমার প্রায়ই দেখা হতো রাস্তায়। এমনকি ফোনেও কথা হতো। কিন্তু স্যারের বন্ধুর নাম্বার হারিয়ে ফেলেছি। তার সাথে এখন আর দেখা হয় না।

স্যার ঢাকায় এখন বইমেলা চলছে।
মেলাতে কি আসবেন? আপনার শারীরিক অবস্থা ভালো? শুনেছি আপনি অনেক অসুস্থ। এখন কি অবস্থা? আপনাকে স্বপ্নে দেখার পর থেকে পুরোনো সৃতি গুলো খুব বেশি মনে পড়ছে। আপনাকে বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েছিলাম। ফোন যাচ্ছে না। নাম্বার কি বদলেছেন? তবে স্যার আমি দুঃখিত এর মধ্যে একবার আমি ফরিদপুর গিয়েছিলাম। আমার ইচ্ছা ছিলো টেপাখোলা যাবো। আপনার সাথে দেখা করবো। কিন্তু আমি পারিনি। কারন তখন সম্ভবত আপনি কলকাতায় গিয়েছিলেন। যদি আপনি ঢাকা না আসেন তাহলে আমিই যাবো ফরিদপুর আপনার সাথে দেখা করতে। আমার প্রিয় শিক্ষক প্রফেসর আলতাফ। তিনি একটা কথা আমাকে প্রায়ই বলতেন- 'সহজ সরল সুন্দর জীবনযাপন করো। আলতাফা স্যার একজন সহজ সরল ভালো মানুষ। তিনি আমাকে খুবই স্নেহ করতেন। নানান সময় আমাকে বুদ্ধি, পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করেছেন। আমি আলতাফ স্যারকে আমার বাসায় দাওয়াত দেই। তিনি তার স্ত্রীকে নিয়ে আমার বাসায় সাত দিন থেকে গেছেন। স্যারের কাছ থেকে অনেক শিখেছি।

স্যার আমাকে শিখিয়েছেন, মানুষকে ভালোবাসতে হবে।
সব সময় মানুষের পাশে থাকতে হবে। প্রচুর পড়াশোনা করতে হবে। নারী জাতিকে সম্মান করতে হবে। পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে হবে। এরপর দেশের জন্য ভালো কিছু করতে হবে। সমাজের অসহায় ও দরিদ্র মানুষের পাশে থাকতে। স্যার সবাইকে একটা অনুরোধ করতেন, সেটা হলো- জীবন সুন্দর। কেউ বেলাইনে চলে গেলে স্যার খুব কষ্ট পেতেন। এই স্যারের কারনেই আমি আজও লাইনে আছি। উনি জোর করে আমাকে অসংখ্য বই পড়িয়েছেন। আলতাফ স্যার আমাকে পৃথিবীর সেরা সেরা মুভি গুলো জোর করে দেখিয়েছেন। ভালো ভালো বইয়ের সন্ধান দিয়েছেন। অনেক সময় স্যার আমাকে বই কিনে দিতেন। স্যার বলতেন, দুষ্ট লোকদের সাথে মিশবে না। সময় অপচয় করবে না। মন্দ মানুষের সাথে মিশবে না। বুদ্ধিমান মানুষদের সাথে মিশবে। মন্দ কথা শুনবে না। মন্দ কথা বলবে না। বড় বড় স্বপ্ন দেখবে। সেই সব স্বপ্ন সত্য করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাবে। স্যার আরও বলতেন- মানুষের সবচেয়ে বড় অস্ত্রই হচ্ছে- ভালোবাসা। তাই সবাইকে ভালোবেসে যাও। বিনিময়ে কিছু আশা করো না।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১:১২
১১টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার একটা ব্যক্তিগত সমুদ্র থাকলে ভালো হতো

লিখেছেন সামিয়া, ২১ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:২৭


আমি এসে বসছি
নরম বালুর উপর,
সামনে বিশাল সমুদ্র,
ঢেউগুলা আমারে কিছু একটা বলতে চাইতেছে,
কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না।

আমার মাথার উপর বিশাল আকাশ,
আকাশের নিচে শুধু পানি আর পানি,
আমি একলা,
আমার সামনে সমুদ্রের একলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নভোচারীদের বহনকারী ক্যাপসুল

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:৫০





ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামসকে নিয়ে নাসা ও স্পেসএক্স-এর স্পেসক্রাফ্ট ড্রাগন ক্যাপসুল পৃথিবীতে পৌঁছে গেছে। ক্যাপসুলের রং পুরোপুরি বদলে গেছে-এটি একেবারে কালো হয়ে গেছে।

এই ক্যাপসুলের অবস্থা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় নাগরিক পার্টি’ (এনসিপি)

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২১ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৯:৪৭



জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে আত্মপ্রকাশ করতে যাওয়া নতুন রাজনৈতিক দলের নাম ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ (এনসিপি)। রাজনীতি করা ভালো। বোকা, সহজ সরল লোকদের রাজনীতি করা ঠিক না।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্তের এই মাতাল সমীরণে... সাজাই এ ঘর ফুলে ফুলে ...

লিখেছেন শায়মা, ২১ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৯:৫৮


ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল লাগলো যে দোল
স্থলে জলে বনতলে লাগল যে দোল দ্বার খোল, দ্বার খোল....
বসন্তের আগমনে প্রকৃতিতে লাগে দোল। সাথে সাথে দোলা লাগে বুঝি আমাদের অন্তরেও।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের চ্যাপ্টার ক্লোজড ! নতুন করে ওপেন করার সুযোগ নেই......

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১০:৪৫


..বলে মনে করেন জামায়াতের আমীর শফিকুর রহমান। বাংলাদেশের রাজনীতি আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। প্রধান উপদেষ্টা সাম্প্রতিক সময়ে একটি স্বনামধন্য থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রধানের সাথে বৈঠকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×