somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

মহাখালি

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দীর্ঘদিন কেউ আমার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকায়নি।
আমি দাঁড়িয়ে আছি মহাখালী। চারিদিকে বিকট শব্দে হর্ন বাজছে। গাড়ি, বাস, সিএনজি ও বাইক এদের চলাচল দেখলে মনে হয়- তাদের খুব তাড়াহুড়া। ঢাকা শহরের একটা ব্যস্ত এলাকা মহাখালি। এখানে ট্রাফিক সিগনালের কেউ ধারধারে না। পুলিশ হাত দিয়ে গাড়ি থামায়। আবার হাতের ইশারায় গাড়ি চলাচল করতে বলে। আজ কড়া রোদ উঠেছে। আমি অনেকখানি ঘেমে গেছি। আমার কোথাও যাওয়ার নেই। মানুষের ব্যস্ততা দেখছি। একমেয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলো- এক কিশোর তার হাত থেকে মোবাইল নিয়ে দৌড় দিয়েছে। মেয়েটা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সেই কিশোর কে কেউ ধরার চেষ্টা করলো না। অবশ্য মুহুর্তের মধ্যে সেই কিশোর ভ্যানিশ হয়ে গেলো। সবাই ব্যস্ত কেউ কারো দিকে তাকানোর সময় নেই। চলন্ত বাসের জানালা দিয়ে একছেলে বমি করছে। ভালো করে খেয়াল করলে অনেক কিছু দেখা যায়। সিগনালে বাস থামলেই এক হুজুর বাসে উঠে মসজিদ নির্মানের জন্য টাকা চাইছেন। আরেক হুজুর চাইছেন মাদ্রাসায় এতিম ছেলে মেয়েদের জন্য। হকাররা বাসে উঠে আচার, আমড়া, পেয়ারা ইত্যাদি বিক্রি করছে।

আমি অনেক লেখকদের জীবনী পড়েছি।
বেশির ভাগ লেখক ছোটবেলা- ঝালমুড়িওলা, সনপাপড়ি বিক্রেতা, আচার বিক্রেতা, আইসক্রীম বিক্রেতা অথবা বেলুন বিক্রেতা হতে চেয়েছিলেন। কেউ কেউ হতে চেয়েছিলেন নাবিক। সাগরে করে সারা বিশ্ব ঘুরে বেড়াবেন। লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ইচ্ছা ছিলো তিনি হকার হবেন। বাসে বাসে কলম, পেন্সিল, সেপটিপিন বিক্রি করবেন। হুমায়ূন আহমেদের ইচ্ছা ছিলো- ঘোড়ায় চড়ে ঘুরে বেড়াবেন। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় চেয়েছিলেন প্রফেসর হবেন। বিখ্যাত লেখক টলস্টয় হতে চেয়েছিলেন ডাক্তার। যাইহোক, এই মুহুর্তে আমার হতে ইচ্ছা করছে ট্রাফিক পুলিশ। একটা দামী গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞেস করতে- দেখি লাইসেন্সটা? ইনসিওরেন্সের কাগজপত্র আছে? ফিটনেস সার্টিফিকেট? এক্সহোস্ট দিয়ে তো সমানে কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে। নামুন গাড়ি থেকে। আমার আর গাড়ি থামানো হলো না। একটা মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি বাজি ধরে বলতে পারি গত পাঁচ বছর এমন সুন্দর কেউ আমার দিকে তাকায়নি। মেয়েটা কেন আমার দিকে তাকিয়ে আছে? তার ঘটনা কি?

মেয়েটা বলল, তুমি রাস্তার মাঝখানে রোদের মধ্যে কি করছো?
তুমি তো গাড়ি চাপা পড়ে মরবে। আমি মেয়েটাকে চিনতে পারছি না। কিন্তু মেয়েটা আমার দিকে দারুন আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে ছিলো। তাকানোর মধ্যে একটা মায়া মায়া ভাব ছিলো। ভালোবাসা ছিলো। আন্তরিকতা ছিলো। আমি মুগ্ধ হয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছি। মেয়েটা সুন্দর। উগ্র সুন্দর নয়। সহজ সরল সুন্দর। চোখে মুখে এক ধরনের সহজ সরল স্বচ্ছতা আছে। একদম জীবনানন্দের কবিতার মতো সুন্দর মেয়েটা। এরকম মেয়ে দেখলে আমি নীলার কথা ভুলে যাই।
মেয়েটা বলল, আমাকে চিনতে পারোনি?
হ্যাঁ চিনেছি। আপনার নাম জুই।
আমার নাম জুই নয়। আমার নাম হেনা।
স্যরি চিনতে পারছি না।
থাক চিনতে হবে না। আমি বিদায় নিচ্ছি। যদি আমাকে চিনতে পারো, তাহলে আগামীকাল সন্ধ্যায় বাসায় এসো।
মেয়েটা চলে গেলো। না আমি মেয়েটাকে একেবারেই চিনতে পারিনি। মেয়েটা নিশ্চয়ই কিছুটা মন খারাপ করেছে। যদি মেয়েটাকে চিনতে পারতাম, তাহলে হয়তো এখন আমরা কোনো রেস্টুরেন্টে বসে কোক খেতে খেতে গল্প করতাম। আমার মাথা ঘুরছে। মাথা ঘুরাটা স্বাভাবিক। কারন সব কিছুই ঘুরছে। গ্রহ, নক্ষত্র, সূর্য, চাঁদ, মানুষ।

রাস্তার পাশের এক দোকান থেকে চা খেলাম।
অতি কুৎসিত সেই চা। তার উপর আবার কাপটা নোংরা। এমনকি কাপের এক কোনা ভাঙ্গা। ভাঙ্গা কাঁপে চা খেয়ে হায়াত কমে। একমাত্র নীলাদের বাসায় চা খেয়ে আরাম পাওয়া যায়। চমৎকার চা। চায়ের চেয়েও বেশি সুন্দর চায়ের কাপ। নীলা কি যত্ন করেই না চা বানায়। নীলা কোনো দিনই আমাকে শুধু চা দেয়নি। নিজের হাতে বানানো সমুচা, সিঙ্গারা দেয়। নীলার সিঙ্গাড়াতে আলু থাকে না। থাকে গরুর কলিজা। সমুচাতে থাকে সমুদ্রের কোনো মাছ অথবা চিকেন। নীলার মতো যত্ন আমাকে আর কেউ করে না। আমার মনে আছে, একদিন রাত সাড়ে এগারোটায় নীলাদের বাসায় গিয়েছিলাম। খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছিলো। সেই রাতে নীলা আমাকে না খাইয়ে ফিরতে দেয়নি। তাড়াহুড়া করে ডিম বাজি করে দিলো। ডাল ভর্তা আর ইলিশ মাছ ভেজে দিলো। ফ্রিজে ভাত ছিলো। তবু নতুন করে আবার ভাত রান্না করে গরম ভাত দিলো। অতি তুচ্ছ বিষয় থেকেও ভালোবাসা টের পাওয়া যায়। একবার আমার মা আব্বাকে ভাঙ্গা কাঁপে চা দিয়েছিলো। আব্বা ভীষন রেগে গিয়েছিলো। তারপর আব্বা রাগ করে দুইদিন বাসায় আসেনি।

আমাদের সাথে সুমনা নামে একটা মেয়ে পড়তো।
মেধাবী ছাত্রী। দরিদ্র ঘরের মেয়ে। পোশাকআষাকে ঝলমল ভাব ছিলো না। মেয়েটাকে কখনও সাজতে দেখিনি। কারো সাথে কথা বলতো না। ক্লাশ শেষ হলেই বাসায় চলে যেতো। মাঝে মাঝে শুধু লাইব্রেরীতে যেতো। তার মা অসুস্থ। বাসায় ছোট ভাই বোন আছে। তাই সে দ্রুত বাসায় যেতো। তাকে রান্না করতে হবে। ছোট ভাইদের লেখাপড়া করানো, নিজের লেখাপড়া। রান্না, সংসার সামলানো। সব একহাতে করতো। একদিন মেয়েটার বিয়ে হলো। শ্বশুর বাড়ির লোকজন ভালো ছিলো না। স্বামী, শ্বশুর- শাশুড়ি সবাই তাকে যন্ত্রনা দিতো। একসময় সে বাধ্য হয়ে তার স্বামীকে ডির্ভোস দেয়। এখন একটা হোস্টেলে থাকে। চাকরি করছে একটা বড় প্রতিষ্ঠানে। এই সুমনার সাথে কিভাবে যেন আমার ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়। সুমনার বাবা মায়ের সংসারে ভালো ছিলো না। স্বামীর সংসারে ভালো ছিলো না। এখন সে একা। চাকরি করছে। ভালো আছে। শুধু মাত্র এই মেয়েটা আমাকে দেখলে আমার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকায়। বলে, মালদ্বীপ থেকে ঘুরে আসি। সব খরচ আমার।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:৪২
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রক্ত দাগে মুখ বন্ধ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১১:৩২


খাও খাও মুখ বাও-
এত খাবার কোথায় পাও;
যদি না থাকে মুখ ভার-
গলার ভেতরে দাও ক্ষার!
শূন্য আকাশে না চাও
মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে খাও
এবার গন্ধ বাতাস দুর্গন্ধ
রক্ত দাগে মুখ বন্ধ;
রাক্ষসী বাস্তবতা যার
শুধরাবে না বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ডায়েরী- ১৫০

লিখেছেন রাজীব নুর, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৩৩



গতকাল ছিলো বাংলা নববর্ষ।
সকালে এক জরুরী কাজে আমি উত্তরা গিয়েছিলাম। আমার তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরার কথা। কিন্তু দেরী করে ফেললাম। আজ বাসার সবাই মাওয়া যাবে। সেখানেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই সময়ের কিঞ্চিৎ ভাবনা!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:১৭

বাক স্বাধীনতা কিংবা যা মনে আসছে তাই লিখে বা বলে ফেলছেন, খুব একটা ব্যাক স্পেস চাপতে হচ্ছে না এখন, তবে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে এবং যে কোন দল নির্বাচিত হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেন বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:০৮

কেন বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার.....

হোয়াটসঅ্যাপে আমাদের ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক এবং অরাজনৈতিক ১০ জনের একটা গ্রুপ আছে। আমরা বেশীরভাগ সময়ই সমসাময়ীক বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করি। গত তিনদিনের আলোচনার বিষয়বস্তু ছিলো বিএনপির... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের মডেল মসজিদ প্রকল্প: রাজনীতি, প্রতারণা ও সমাজের প্রতিচ্ছবি

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:২৪


২০১৪ সালের প্রহসনের নির্বাচনের পর শেখ হাসিনার সরকার একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেয়। ইসলামপন্থীদের সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে তারা ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগানোর পথ বেছে নেয়। ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের ঘটনা সরকারকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×