বাংলাদেশে চাকরি পাওয়া যেমন কঠিন, চাকরি পাওয়ার পর চাকরি টিকিয়ে রাখা আরও বেশি কঠিন। তবে সরকারি চাকরি পাওয়ার পর আর কোনো ভয় নেই। একদম জমিদারি চাকরি। বিশ্বাস না হলে সরকারি অফিস গুলোতে গিয়ে নিজের চোখে দেখে আসুন। আমি ১০০% নিশ্চিত কোনো বেসরকারি চাকরিজীবি ভালো নেই। দশ মিনিট লেট করলে, উদ্ধতন কর্মকর্তা এমন ভাবে তাকায় যেন ভয়াবহ অপরাধ হয়ে গিয়েছে। অনেক অফিস দেরী করে আসার জন্য মাস শেষে বেতন থেকে টাকা কেটে নেয়। কিন্তু যারা সকালে বাসে করে অফিস যায় তারা বুঝে কত ধানে কত চাল। অফিসে চাকরি টিকিয়ে রাখার জন্য ইচ্ছার বিরুদ্ধে কত রকমের যে তেলামি করতে হয় তার ইয়ত্তা নেই।
সকাল থেকেই শাহেদ আছে ভয়াবহ টেনশনে। আজ লাঞ্চের পর তাদের মিটিং। এই মিটিং এ থাকবেন স্বয়ং চেয়ারম্যান সাহেব। চেয়ারম্যান সাহেব ভয়াবহ রাগী মানুষ। তিনি হুট করে ভয়ঙ্কর রেগে যান। তখন কেউ পার পায় না। কানাঘুষা শোনা গেছে আজ কয়েকজনের চাকরি যাবে। এই মিটিংটা গত মাসে হওয়ার কথা ছিল কিন্তু চেয়ারম্যান স্যার হঠাৎ এক জরুরী কাজে লন্ডন চলে যান। স্যারের পিএ আজ জানিয়ে দিয়েছে, লাঞ্চের পর চেয়ারম্যান সাহেব সবাইকে নিয়ে মিটিং এ বসবেন। অফিসের সব স্টাফ প্রচন্ড ভয়ে আছে। না জানি কি হয়! সুযোগ পেলে সব চান্দুই অফিসে ফাঁকি দেয়। কিন্তু শাহেদ কখনও ফাঁকি দেয় না। এই কারনে যারা অফিসে ফাঁকি দেয় তারা শাহেদের উপর খুব রাগ।
শাহেদ তার সব কাজের একটা সামারি করেছে। গত এক মাস সে কি কি কাজ করেছে। তার প্রাপ্তি, ব্যর্থতা এবং এই প্রতিষ্ঠান নিয়ে তার পরিকল্পনা সব সুন্দর করে গুছিয়ে লিখেছে। চেয়ারম্যান স্যার যদি দেখতে চায় তাহলে তার হাতে দিবে, না চাইলেও দিবে। কোনো কারনে যদি চাকরিটা চলেই যায় তাহলে শাহেদ ভয়াবহ বিপদে পড়বে। সামনের মাসে তার অনেক খরচ। মেয়েকে স্কুলে ভরতি করবে। মেয়েকে পড়ারনোর জন্য বাসায় টিচার রাখতে হবে। গ্রামে মাকে টাকা পাঠাতে হবে। মা অসুস্থ। ছোট শালার বিয়ে, বিয়েতে অবশ্যই ভালো কিছু দিতে হবে- নীলা এই কথা তিন মাস আগে থেকেই বলে রেখেছে। এদিকে বাড়িওয়ালা বাড়ি ভাড়া আবার বাড়িয়েছে। আসলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে পরিবারের সবার মুখে হাসি ফুটানো যায় না। দিন আনি, দিন খাই অবস্থা। সরকারি চাকরিতে ঘুষ খাওয়ার সুযোগ আছে।
মিটিং শুরু। যদিও মিটিং তিন টায় শুরু হবার কথা ছিল, সেই মিটিং শুরু হলো বিকেল সাড়ে পাঁচ টায়। চেয়াম্যান স্যার মিটিং এর মধ্যমনি। মধ্য বয়স্ক হাসি খুশি একজন মানুষ। প্রতিটা স্টাফ মুখটুখ ধুয়ে, চুল আচড়ে একদম পরিপাটি। কনফারেন্স রুমে এসি ছাড়া তবু শাহেদ ঘামছে। ঘটনা চক্রে তাকে বসতে হয়েছে চেয়ারম্যান স্যারের পাশে। চেয়ারম্যান হাসি মুখে বললেন, তোমাদের খবর কি? তোমরা সবাই ভালো তো? আসলে ঘনঘন মিটিং হওয়া দরকার। খুব দরকার। মিটিংয়ে অনেক সমস্যা উঠে আসে এবং সে গুলো একসাথে সবাই মিলে সমাধান করা যায়। আমি ব্যস্ততার কারনে তোমাদের সময় দিতে পারি না। তোমরা নিজেরা নিয়মিত বসবা। আলাপ আলোচনা করবা। হঠাৎ চেয়ারম্যান স্যার শাহেদের দিকে তাকিয়ে বললেন, শাহেদ প্যান্টের চেনটা লাগাও। এই কথা বলতেই সবাই শাহেদের দিকে তাকালো। শাহেদ এক আকাশ লজ্জায় মাটিতে মিশে গেল।
চেয়ারম্যান স্যার সবার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন- তোমরা সবাই ক্রিকেট খেলা দেখো। আচ্ছা, বলতো একজন ব্যাটসম্যান কয়টি কারণে আউট হয়? কেউই উত্তর দিতে পারলো না। তারপর চেয়ারম্যান স্যার বলতে শুরু করলেন, হিসাব করলে দেখা যাবে প্রায় প্রতিটা মানুষ তার নিজ নিজ অবস্থান নিয়ে অসন্তুষ্ট। তারা হতাশ হতে পছন্দ করে। হতাশা কাটিয়ে উঠতে পছন্দ করে না। তারা negative চিন্তা করতে পছন্দ করে, positive চিন্তা করতে পছন্দ করে না। তারা ভাগ্যকে বিলিভ করে, কিন্তু নিজের হাতে ভাগ্য পরিবর্তন করতে চায় না। তারা পরিস্থিতিকে দোষারোপ করতে পছন্দ করে, কিন্তু পরিস্থিতিকে নিজের অনুকূলে আনার চেষ্টাই করে না।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:২০