১। প্রতিদিন অফিস থেকে ফিরে মার সাথে কিছুক্ষন গল্পগুজব করি। একদিন মার সাথে গল্পগুজব না করলে মা গাল ফুলিয়ে থাকে।
সেদিন মাকে বললাম, সুরভি খুব বিপদে পড়েছে। বুয়া ঠিক ভাবে আসে না। একদিন আসে তো, তিন দিন আসে না। বেচারি ঘরের কাজ করতে করতে শেষ। ঘরের কাজ তো কম না। অনেক কাজ।
মা বলল, হুম, ঠিক। এক কাজ কর- তুই আরেকটা বিয়ে করে ফেল। তাহলে দুইজন মিলে কাজ ভাগাভাগি করে করবে।
২। আমার নানী'র শেষ অবস্থা। যে কোনো সময় মৃত্যু হবে। কিন্তু মৃত্যু আর হয় না। এভাবে তিন মাস কেটে গেল। একদিন রাত তিনটা। মা জেগে বসে আছে নানীর কাছে। আব্বাও জেগে ছিল কিন্তু হঠাত ঘুমিয়ে পড়েছিল। ঠিক এই সময় নানী মারা গেলেন। মা দৌড়ে এসে আব্বাকে ডেকে বলছে, শোনো মা নেই। এই উঠো। মা নেই। আব্বা পাশ ফিরতে ফিরতে বলছেন, বুড়ো মানুষ কোথায় আর যাবে(?) দেখো বারান্দায় অথবা বাথরুমে গেছে।
৩। বাসায় তিনটা এসিতে ময়লা জমেছে। মিস্ত্রি এসেছে ঠিক করতে। তারা বলছে সাত হাজার টাকা দিতে হবে। সাত হাজার টাকার কথা শুনে বড় ভাই রেগে গেলেন। এরপর বড় ভাই নিজেই এসি পরিস্কার করার যন্ত্র কিনে নিজেই এসি গুলো পরিস্কার করে ফেললেন। শুধু এসি না, ঘরের যে কোনো জিনিস নষ্ট হলেই বড় ভাই এখন মিস্ত্রি ডাকে না। সব রকম যন্ত্রপাতি কিনে ফেলেছে। ডিল মেশিন'ই আছে দুইটা। করাত, সেলাই রেঞ্চ। সে নিজেই সব মেরামত করে। পানির মটর, বিদ্যুৎ সমস্যা, এমন কি কাঠ মিস্ত্রির কাজও তিনি নিজের হাতেই করেন। শুক্রবার, শনিবার তার ছুটি। এই দুই দিন সে ঘরের কোনো না কোনো কাজে ব্যস্ত থাকেন।
৪। একদিন এক চোর চুরী করতে এসে ধরা পড়ে গেল। বাসার সবাই বলছে মারো, চোরটাকে মারো। আব্বা বললেন, আমি ভদ্রলোকের ছেলে আমি কেন চোর মারবো? আর চোর বলেই তাকে মারতে হবে? পারলে তাকে একটা চাকরী দাও। তারপর সে আর চুরী করবে না। সেই চোরকে আব্বা মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে দিলেন। খুব সুন্দর করে বুঝালেন যেন আর চুরী না করে। এইখানেই শেষ না, চোরকে ভাত খাওয়ালেন। দুইটা শার্ট আর লুঙ্গি দিয়ে দিলেন। হাতে কিছু টাকাও দিয়ে দিলেন। এদিকে আশে পাশে অনেক লোকজন চোরকে মারার জন্য প্রস্তুত কিন্তু আব্বাকে চোরকে মারতে দিলেন না।
৫। সুরভির সাথে রাস্তায় বের হলেই পকেটে অনেক ভাংতি টাকা রাখতে হয়। কারণ রাস্তায় বয়স্ক ভিক্ষুক দেখলেই সুরভি বলবে এই বুড়োকে টাকা দাও। পাঁচ টাকা, দশ টাকা দিলে হবে না। কমপক্ষে পঞ্চাশ টাকা দিতে হবে। দশ টাকা দিলে বলবে, এক কেজি চালের দামও ৭০ টাকা। তুমি কোন আক্কেলে দশ টাকা দিলে? ভালো করে তাকিয়ে দেখো, বুড়োর হাসিটা কি সুন্দর! দেখো, দেখো ফোকলা দাঁতে বুড়িটা কি সুন্দর করে হাসছে! একবার এক বুড়িকে টাকা দিতে পারি নাই। সাথে ভাংতি টাকা ছিল না। বাসায় এসে দেখি সুরভি গাল ফুলিয়ে আছে। রাতে না খেয়েই ঘুমুতে গেল।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৯:০২