ছবিঃ একদিন রেজা ভাইয়ের সাথে দেখা পরীবাগের কাছে। তিনি শাহবাগ যাচ্ছিলেন। সাথে ক্যামেরা ছিল বলে অনুরোধ করে এই ছবিটা তুলে নিয়েছিলাম। ২০১৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী, শুক্রবার।
আমাদের রেজা ঘটক ভাইয়ের জন্মদিন আজ।
রেজা ভাই দশ বছরের বেশি সময় ধরে সামুতে আছেন। এই দশ বছরে ৮০০ টি পোষ্ট দিয়েছেন। তিনি আগাগোড়া একজন সংস্কৃতিমনা মানুষ। প্রিয় মানুষদের সাথে খুব আড্ডা দেন তিনি নিয়মিত। প্রচুর মুভি দেখেন, খুব গান শুনেন। লেখালেখিও করছেন অনেকদিন ধরে। তার ছোট গল্প গুলো আমার খুব পছন্দ। তিনি নিয়মিত বিভিন্ন পত্র পত্রিকা আর অনলাইন নিউজ পোর্টাল গুলোতে নিয়মিত লেখালেখি করেন। লেখালেখি আর ঘুরে বেড়ানো তার নেশা। রেজা ভাই প্রচন্ড প্রানবন্ত এবং হাসি খুশি একজন মানুষ। তার মুখে সব সময় হাসি লেগেই থাকে। তার গলাতে বেশির ভাগ সময় একটা গামছা থাকে। এই গামছা তিনি সব সময় কেন গলায় পেচিয়ে রাখেন কে জানে !
রেজা ঘটকের জন্ম ১৯৭০ সালে। গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরে। গ্রামের নাম বানিয়ারি। কৈশোর কেটেছে গ্রামে। তারপর থেকে ঢাকায় বসবাস। অর্থনীতিতে স্নাতক (সম্মান) সহ মাস্টার্স করেছেন। রাজধানী ঢাকায় মানুষের বাসায় বাসায় ডিসের লাইন লাগানোর কাজ দিয়ে চাকরি জীবনের শুরু। এরপর অসংখ্য প্রতিষ্ঠানে নানান রকম কাজ করেছেন। চাকরির উপর চরম বিরক্তি নিয়ে চাকরি ছেড়ে দেন এবং মনে সিদ্ধান্ত নেন আর চাকরি করবেন না। এখন তিনি স্বাধীন। ইচ্ছা হলে অথবা কেউ বিশেষ অনুরোধ করলে ফ্রি ল্যান্স কাজ করেন। গত এক যুগ ধরে তিনি চলচিত্র ও নাটক নির্মাণের সাথে যুক্ত আছেন। অসংখ্য নাটকের স্ক্রিপ্ট লিখেছেন। তার প্রকাশির বইয়ের সংখ্যা পনের টি।
এক সাক্ষাৎকারে একবার রেজা ভাইকে প্রশ্ন করা হয়েছিল- গল্প লেখার জন্য ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উৎস। একটি ঘটনা বা অভিজ্ঞতা কি করে আপনি গল্পে রূপান্তর করেন? গল্পগুলোতে আপনার ব্যক্তিগত ছাপ কিভাবে এসেছে?
উত্তরে রেজা ভাই বলেছেন, একবার লোকাল বাসে ঢাকা থেকে সিরাজগঞ্জ গিয়েছিলাম। গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে একদল মুরগিবিক্রেতা সেই বাসে উঠলেন। তাদের সঙ্গে মুরগি ছিল। কিছু মুরগির খাঁচা বাসের ছাদে তোলা হল। কিছু বাসের ভেতর ওঠানো হল। তাদের কয়েকজন ছাদে উঠলেন, কয়েকজন বাসের ভেতরে রড ধরে দাঁড়ালেন। মুহূর্তে গোটা বাস মুরগির গন্ধে ভরে গেল। এখন এই ঘটনার আমি প্রত্যক্ষ সাক্ষি না হলে চলন্ত বাসের ভেতরে মুরগির গন্ধ কেমন তা কিন্তু বুঝতাম না। এমনিতে আমি গ্রামের পোলা। নিজেও মুরগি পালতাম। কিন্তু দীর্ঘদিন শহরে থাকার কারণে মুরগির সেই গন্ধ কিন্তু হুট করেই আমার মনে পড়ার কথা না। অবশ্যই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা গল্প লেখার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ উৎস। সেই উৎস কে কতোটা দক্ষভাবে গল্পে প্রয়োগ করতে পারেন, সেটাই দেখার বিষয়।
রেজা ঘটকের প্রথম উপন্যাস 'মা'। এই উপন্যাসের প্রচ্ছদ তিনি নিজেই করেছেন। তার এই উপন্যাসে ভূগোল আছে। ইতিহাস আছে। অর্থনীতি আছে। বিজ্ঞান আছে। ধর্ম আছে। রাজনীতি আছে। পরিবেশ আছে। ন্যাচারাল ডিজেস্টার আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আছে। দুর্ভি আছে। ষড়ঋতু আছে। দেশ বিভাগ আছে। হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা আছে। ভাষা আন্দোলন আছে। সামরিক শাসন আছে। জাতীয় নির্বাচন আছে। মুক্তিযুদ্ধ আছে। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আছে। জাতীয় ও পারিবারিক শোক আছে। আর আছে কিছু নির্মোহ সত্যের অনুসন্ধান।
তার নির্মিত প্রথম সিনেমা 'হরিবল'। খুব শ্রীঘই সিনেমাটি মুক্তি পাবে বলে আশা করছি। এই সিনেমাটি তৈরি করতে গিয়ে তিনি প্রচুর পরিশ্রম করেছেন। সংখ্যালঘু প্রান্তিক পরিবারের সমাজ দ্বারা নীপিড়নের গল্পে নির্মিত হচ্ছে চলচ্চিত্র 'হরিবোল'। পাশাপাশি প্রান্তিক গ্রামের কৃষ্টি ও ঐতিহ্য 'হরিবোল' ছবিতে নানাভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এই মুভি সম্পর্কে রেজা ঘটক বলেন, 'ফারাক্কা বাঁধের পর পদ্মা নদীতে পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ায় বলেশ্বর নদ ও তার শাখা-প্রশাখাগুলো ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছে। বলেশ্বর নদের তীরবর্তী জনপদের সেই দুঃখ-দুর্দশা, হতাশা-প্রত্যাশা, ভালোবাসা ও প্রচলিত জীবনযাপন 'হরিবোল' ছবি'র প্রেক্ষাপট।'
রেজা ভাইয়ের যে ব্যাপারটা আমার সবচেয়ে ভালো লাগে তা হলো, কোনো শিল্পী, কবি বা সাহিত্যিক অসুস্থ হলে তিনি সবার আগে দৌড়ে যান। যে কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার। সবচেয়ে বড় কথা মানুষটা তার দেশকে অত্যাধিক ভালোবাসেন। এই যে হোঙ্গিংগা, সংখ্যালঘুদের উপর হামলা, কোটা আন্দোলন ইত্যাদি সব বিষয় নিয়ে দেশের মানুষের প্রতি তার সীমাহীন ভালোবাসা তার প্রতিটা লেখায় প্রকাশ পায়।
রেজা ভাই ভালো থাকুক, সুস্থ থাকুক। তার জন্য এক আকাশ শুভ কামনা।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ২:৩৮