১। সামনে রোজার মাস আসছে। বাজারে জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বাড়বে। বাড়বেই। প্রতি বছর একই ঘটনা। যদিও বানিজ্যমন্ত্রী কঠিন হুশিয়ারী দিবেন। প্রতি বছরই দেন। ফলাফল শূন্য। মন্ত্রী বলবেন, রোজাকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভোগ্যপণ্য আমদানি হয়েছে। তাই রোজায় নিত্যপণ্যসহ সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম স্বাভাবিক থাকবে। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে পণ্যের দাম বৃদ্ধি করলে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করবেন বানিজ্যমন্ত্রী। মন্ত্রীদের কথায় আমার হাসি পায়। প্রতি বছর একই কথা বারবার শুনতে শুনতে এখন ঘৃণা লাগে।
সকল জিনিসের দাম বাড়ার পরও দশ রোজার পরে মন্ত্রী বলবেন, রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য ও সরবরাহ পরিস্থিতি যৌক্তিক ও স্বাভাবিক রয়েছে। অন্য মন্ত্রীরা গলা ফাটিয়ে বলবেন, সরকারের কঠোর নজরদারির কারণে রোজায় বাজার আর অস্থিতিশীল হচ্ছে না। খবরের কাগজের শিরোনাম হবে, ''আসন্ন রোজায় যেকোনো মূল্যে বাজার নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা দিয়েছে সরকার''। কোনো কোনো পত্রিকা লিখবে, ''সরকারি মনিটরিং অনেক বেশি হচ্ছে, ক্রেতারা খুশি।'' বছরের পর বছর একই ঘটনা। একই কাহিনি।
২। রোজার শেষে ঈদে মানুষের বাড়ি যেতে ভয়াবহ কষ্ট হবে। ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাবে না। অসংখ্য মানুষ শেষে বাধ্য হয়ে ট্রেনের ছাদে চেপে বাড়ি যাবেন। টিভি চ্যানেল গুলো সেই সব দৃশ লাইভ দেখাবে। রেলমন্ত্রী বলবেন, 'তারা নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরছে।' প্রতি বছর একই অবস্থা। একই কথা। কিন্তু কোনো পজেটিভ পরিবর্তন নেই। রেলমন্ত্রী চিৎকার করে বলবেন, ''ঈদে যাত্রীদের বাড়ি ফেরা ও পুনরায় বাড়ি থেকে ঢাকায় ফেরা নির্বিঘ্ন করতে সাত জোড়া স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে''। সংবাদ পত্রের শিরোনাম হবে, ''ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও আনন্দ উৎসাহের সঙ্গে ট্রেনের ছাদে করেই বাড়ি ফিরছেন ঘরমুখো মানুষ।'' সরকার হাসি মুখে বলবেন, আমরা ক্ষমতায় আছি বলেই, 'বাড়ি ফেরা মানুষদের ভোগান্তি কমানোর জন্য নেয়া হয়েছে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা।'
সাধারন যাত্রীরা আগের দিন রাত থেকে লাইনে দাড়িয়েও টিকিট পাবে না। তারপরও মন্ত্রী বলবেন, ট্রেনের টিকেটে কোনো ধরণের কালোবাজারি ও হয়রানি হবে না, হয়নি। খবরের কাগজের শিরোনাম হবে, ''ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি শূন্যের কোঠায়।'' টিভি চ্যানেল গুলোতে বলা হবে, টিকেট কালোবাজারি রোধে কমলাপুর রেলস্টেশনে সিটিটিভি স্থাপন, গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। ফলাফল শূন্য। প্রতি বছর একই ঘটনা।
৩। ঈদে যারা লঞ্চে করে বাড়ি ফিরবেন তাদের উদ্দ্যশে লঞ্চ মালিকরা বলবেন, কালোবাজারি রোধে ১০ রমজান থেকে যাত্রীদের মাঝে ঈদের অগ্রিম টিকেট সরাসরি বিক্রি শুরু করা হবে। টিকিট কালোবাজারি ঠেকাতে কঠোর নজরদারির কথা জানাবেন নৌমন্ত্রী। মন্ত্রী আরও বলবেন, সরকার ঈদে ঘরে ফেরা যাত্রীদের যাতায়াত নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে। যদি কোনো লঞ্চ মালিক বেশি মুনাফার লোভে অতিরিক্ত যাত্রীবহন করে তাকে শাস্তি পেতেই হবে। প্রতি বছর একই কথা শুনতে শুনতে আর ভালো লাগে না আমার। সরকার বলবে, লঞ্চ, ফেরিসহ বিভিন্ন যানবাহনে যাতে নৌ দুর্ঘটনা না ঘটে, সে ব্যাপারে কঠোর নজরদারি রাখা হবে।
নৌমন্ত্রী টিভি চ্যানেলের সামনে বলবেন, যাত্রীদের যাত্রা নিরাপদ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ঘাটের ইজারা প্রথা বাতিল করা হয়েছে। প্রত্যেকটি লঞ্চঘাটে আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে, মন্ত্রণালয়ের লোক থাকবে। লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী নিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
৪। ঈদে 'বাড়ি ফেরা' প্রতিবছর এক মানবিক বিপর্যয়ের জন্ম দেয়, অন্তহীন দুর্ভোগ। টিভিতে লাইভ দেখাবে, রাজধানীর লাখ লাখ মানুষ গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছে। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ, বাস-লঞ্চে বাড়তি ভাড়া আদায়, তীব্র যানজট- এসব ঝক্কি পেরিয়ে যারা যাত্রা শুরু করেছেন, তাদেরও পড়তে হচ্ছে নানা বিড়ম্বনায়। দেশের কয়েকটি মহাসড়কের অবস্থা নাজুক। বিশেষ করে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুর থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে থেমে ... প্রতি বছর একই ঘটনা। একই কথা। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সংশ্লিষ্ট লোকজনকে নির্দেশ দিবেন, মানুষের যেন ভোগান্তি না হয়। কিন্তু সাধারন মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। সীমাহীন কষ্ট।
ঈদের দিন সকালবেলাঃ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পবিত্র ঈদ উপলক্ষে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে সর্বস্তরের জনগণের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। দেশবাসী ও সারাবিশ্বের মুসলমানদের শুভেচ্ছা জানাবেন প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি। পৃথক পৃথক বাণীতে তাঁরা সবার শান্তি, সমৃদ্ধি ও মঙ্গল কামনা করবেন। আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আছে বলেই দেশবাসী নির্বিঘ্নে ঈদ পালন করতে পারছে। ওই বিএনপি জামাত ....
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:৪৭