১। হুমায়ূন আহমেদের নাটকের একটি ডায়লগ ঠিক এই রকম, (এক লোক রাস্তার পাশে চায়ের দোকানে বসে চা আর কেক খাচ্ছে। তার কোনো চাকরি নেই, বেকার।) সে বলছে-
আচ্ছা ভাই, আমাকে দেখে কি মনে হয়- আমি ভালো লোক? না মন্দ লোক?
আমার চেহারা সুন্দর। আমার হাসিও সুন্দর। হা হা হা...হাসি সুন্দর না?
আমি কিন্তু মন্দ লোক। খুবই মন্দ লোক।
এই যে চা আর কেক খাইতেছি হাতে একটা পয়সাও নেই। ব্যবস্থা করতে হবে না? মন্দ মানুষ বলে তো আর না খেয়ে থাকতে পারি না। পৃথিবীর সব মন্দ মানুষ ভালো ভালো খাবার খায়। আমি খাইতেছি একটা পচা কেক।
নাটকটি কি আপনারা দেখেছেন? আমার ধারনা বাংলাদেশের সেরা নাট্যকার হুমায়ূন আহমেদ। এবং সাহিত্যিক। তার প্রতিটা নাটক, প্রতিটা বই আমার অসংখ্যবার করে পড়া। এক আকাশ মুগ্ধ হয়ে তার নাটক দেখি, মুগ্ধ হয়ে তার বই পড়ি। আমার মা'র ধারনা হুমায়ূন আহমেদ আমার মাথাটা নষ্ট করে দিয়েছেন। যখন আমি তার কোনো বই পড়ি বা নাটক দেখি মা বলেন, হুমায়ূন আহমেদ পাগল, তুইও পাগল। কিন্তু আমি যখন নাটক ছাড়ি মা'ও কিন্তু আমার সাথে খুব মন দিয়ে নাটক দেখে আর কুটকুট করে হাসে।
২। আমার কিছু কিছু মানুষকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতে ইচ্ছা করে খুব। সমস্যা হলো আমি খুব বেশি গালি জানি না। দুইটা গালি জানি, শুয়োরের বাচ্চা আর কুত্তার বাচ্চা। দুষ্টলোক গুলোকে ঘুরে ফিরে এই গালি দু'টাই বারবার দেই। ধরুন কেউ বাইক চালাচ্ছে ফুটপাত দিয়ে তখন মনে মনে এই গালিটা দেই। আবার ধরুন কেউ অপ্রয়োজনে হর্ন দিচ্ছে, তখন তাকে এই গালি দু'টা দেই মনে মনে। আমার অফিসে এক শুয়োরের বাচ্চা আছে। তাকে গালি দেই কুত্তার বাচ্চা বলে। আবার কেউ কেউ ব্যস্ত রাস্তায় চরম নির্বোধের মতো গাড়ি পারকিং করে রাখে। এমনিই চিপা রাস্তা। তার পারকিং করে রাখার কারনে লম্বা জ্যাম লেগে যায়। তখন কুত্তার বাচ্চা, শুয়োরের বাচ্চা বলে গালি দেই। এটা কি অন্যায়? দুষ্টলোকদের গালাগালি করে বিপুল আনন্দ পাই।
৩। সেদিন হঠা আয়নায় ভালো করে তাকিয়ে দেখি মাথায় বেশ কয়েকটা সাদা চুল দেখা যাচ্ছে। একটুও মন খারাপ হয়নি। বয়স হচ্ছে ভাবতে ভালো লাগছে। ঠিক করেছি আমি কখনও মাথায় কলপ দিব না। নিজেকে বয়স্ক ভাবতে আমার খুব ভালো লাগে। স্কুলের ছেলে মেয়েরাও রাস্তাঘাট বা বাসে আমাকে বলে আংকেল সাইড দিন প্লীজ। তার মানে আসলেই আমার বয়স বেড়েছে। যদিও আমাকে দেখলে মনে হয় আমার বয়স ২২ বছর। আসলে আমার বয়স ত্রিশের উপরে। এযুগের ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের বলি- এখন এক কেজি মাংসের দাম পাঁচ শ' টাকা। কিন্তু আমি ছোটবেলায় এক কেজি মাংস কিনেছি ষাট টাকা দিয়ে। এক কেজি পাইজাম চাল কিনেছি বারো টাকা দিয়ে। এখন এক কেজি চালের দাম ৬৫ টাকা। একটা দেশী মূরগী কিনেছি নব্বই টাকা দিয়ে। আর এখন একটা দেশী মূরগীর দাম ৬/৭ শ' টাকা। একটা তন্দুর রুটি কিনতাম এক টাকা দিয়ে। এখন দশ টাকা।
৪। এই যে সামু ব্লগে আমি এতদিন ধরে আছি। কত ঘটনার সুখ দুঃখের সাক্ষী। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো ব্লগারের সাথে কোথাও দেখা হলো না। আড্ডা হলো না। একসাথে বসে চা খেলাম না। ব্যাপারটা মানতে আমার খুব কষ্ট হয়। আমি মনে করি, ব্লগাররা সাধারন মানুষ থেকে আলাদা। আমার বিশ্বাস কোনো ব্লগার ফুটপাত দিয়ে বাইক চালায় না। কুৎসিতভাবে মেয়েদের দিকে তাকায় না। বাসের ভাড়া ৫/১০ টাকা কম বেশি নিয়ে হাউকাউ করে না। তারা দেশের কথা ভাবে। দেশের মঙ্গলের কথা চিন্তা করে। শ্রদ্ধাভাজন চাঁদগাজী সাহেব বলেন, 'ব্লগারদের চিন্তাভাবনা যেকোন লেখকদের তুলনায় অনেক বেশী উন্নত, ব্লগারেরা রিয়েল-টাইমে ঘটে যাওয়া সবকিছুর উপর ভাবছেন, এনালাইসিস করছেন, লিখছেন। আরেকটা বড় ব্যাপার, ব্লগারেরা অনেক কিছুর ব্যাপারে প্রেডিকশান করছেন, যা অন্য ধরণের লেখকদের লেখায় পাওয়া সহজ নয়।' আমি তার সাথে সম্পূর্ণ সহমত।
ব্লগাররা দীর্ঘজীবী হোক। শুভকামনা প্রত্যেক ব্লগারের জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১০:১৯