সমগ্র বাংলাদেশের মধ্যে ঢাকা শহরের মানুষ গুলো বেশি নিষ্ঠুর। বেশি বদ। বেশি বেয়াদপ। একদিন এক পাগলকে আমি বলতে শুনেছি, ঢাকা শহরের মানুষ গুলো সব অমানুষের বাচ্চা। পাগলটি চিৎকার করে ফার্মগেট ব্রীজের নিচে দাঁড়িয়ে ঘুরে ফিরে এই এক কথাই বারবার বলছে। আমার মনে হয় পাগলটি খুব একটা ভুল বলেনি। আমি পাগলের সাথে সহমত। আমি আজ আপনাদের প্রমাণ দিয়ে দিব, যে ঢাকা শহরের মানূষ গুলো অমানুষ।
আপনি যদি দশ মিনিট ঢাকা শহরের কোনো রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকেন- পাগল হয়ে যাবেন। ঢাকা শহরের বাস, গাড়ির ড্রাইভার গুলো অকারণে হর্ন দেয়। তারা তাদের গাড়িতে বিকট হর্ন ব্যবহার করে। হর্নটা মাথার ভেতর এসে বাড়ি দেয়। হোন্ডাওয়ালারা হর্ন দেওয়ার ব্যাপারে তিন ধাপ এগিয়ে। তারা সবচেয়ে বেশি অকারণে হর্ন দেয়। বিকট হর্ন। সবচেয়ে দুঃখ লাগে তখনই যখন অপ্রয়োজনে হর্ন দেয়। যারা গাড়ির ভেতরে থাকে, গ্লাস থাকে লাগানো। তাদের কানে বিকট এই হর্নের শব্দ যায় না। তারা এসির বাতাসে বসে মোবাইল টিপে যায়। অথবা পত্রিকা পড়ে। আর একজন ট্রাফিক ঘন্টার পর ঘন্টা এই বিকট শব্দের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকে। চারদিক থেকে ক্রমাগত হর্ন বাজতেই থাকে। এর মধ্যে আছে ধূলো, কড়া রোদ এবং নিয়ম ভঙ্গকারী একদম অমানুষ।
যারা অপ্রয়োজনে হর্ন দেয় তারা ছাগল। এবং তারাই অমানুষের বাচ্চা। যারা আমার সাথে দ্বিমত পোষন করবেন তারা কোনো রাস্তার মোড়ে দশ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকুন। দেখবেন, আপনি পাগল হয়ে যাচ্ছেন। মাথা ঘুরাচ্ছে। তখন এই বিকট হর্ন যারা অপ্রয়োজনে দিচ্ছে তাদের আপনি নিজের অজান্তেই 'ছাগল' বলবেন। যখন আপনি ফুটপাত দিয়ে হাটবেন, আর পেছনে থেকে কোনো বাইকওয়ালা বিকট হর্ন দিবে তখন আপনার সেই বাইকওয়ালাকে আপনার অমানুষ বলেই মনে হবে। ওই বাইকওয়ালা ছাগল রাস্তা বাদ দিয়ে ফুটপাতে উঠে এসেছে। যে যদি মানুষ হতো তাহলে হোন্ডা ফুটপাতে উঠাতো না। এবং তার যদি সামান্যতম জ্ঞান থাকতো তাহলে কিছুতেই হর্ন দিত না। সে মনে মনে ভাবতো- দোষটা আমার, আমিই অন্যায় করেছি ফুটপাতে হোন্ডা উঠিয়ে। পথচারীদের সমস্যা করছি। আবার বিকট হর্ন দিয়ে জনসাধারনের সমস্যা করছি। কাজেই সে মানুষ না অমানুষ। অমানুষের বাচ্চা।
হিন্দিতে বলে, রাতো কি ভূত বাতোছে নেহি মানতি। ঠিক তেমনি ঢাকা শহরের কিছু অমানুষদের সঠিক পথে আনার জন্য কঠিন কিছু নিয়ম করতে হবে। ওই সমস্ত ছাগলের ঠিক করার জন্য কঠিন পদক্ষেপ নিতে হবে। যারা সঠিক লেন না মেনে উলটো পাশ দিয়ে যায়- তাদের জন্য রাস্তায় সাইনবোর্ড ঝুলাতে হবে, লিখতে হবে ''যারা রাস্তার উল্টো পাশ দিয়ে গাড়ি, হোন্ডা বা রিকশা দিয়ে যায় তারা 'অমানুষের বাচ্চা।' আবার ফুটপাতে বড় বড় করে লেখা থাকবে- যারা রাস্তা বাদ দিয়ে ফুটপাত দিয়ে হোন্ডা চালিয়ে যায়- তাদের বাপের ঠিক নেই। প্রতিটা রাস্তার মোড়ে মোড়ে লেখা থাকবে অপ্রয়োজনে যারা হর্ন দেয়- তাদের জন্মের ঠিক নেই। তাদের বাপ দুইটা। তাদের জন্ম হয়েছে অমানুষের দ্বারা। এই সমস্ত কঠিন আর নোংরা কথা বলেই তাদের শুধরাতে হবে। অন্য কোনো উপায় নেই। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে এইসব লিখেও তাদের শুধরানো যাবে না।
বাঙ্গালীর ভালো কথায় কাজ হবে না। ভালো কথার দাম তাদের কাছে নেই। এই সমস্ত কঠিন কথা ব্যবহার করলে তারা ঠিক হবে, হয়তো। এছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। ঢাকা শহরের প্রতিটা নাগরিক অসভ্য। এবং বিরাট। দিনে দুপুরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে চেন খুলে মুততে শুরু করে, কোনো লজ্জা নেই। একটা মেয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে কুৎসিতভাবে তাকিয়ে থাকাটাকে তারা তাদের দায়িত্ব মনে করে। মেয়ের সাথে মেয়ের বাপ থাক, মা থাক, ভাই থাক, স্বামী থাক। কুৎসিতভাবে তাকাবেই। এইভাবে যারা কুৎসিতভাবে তাকায় আমার ইচ্ছা করে জুতা দিয়ে তাদের পিঠাই। পিটাতে পিটাতে তাদের বাপ মায়ের কাছে নিয়ে গিয়ে বলি- এমন অমানূষ কেন পয়দা করেছেন? যারা কুৎসিত ভাবে তাকায়-তাকিয়েই থাকে, আমার মনে হয় তাদের জন্ম হয়েছে বেশ্যাপাড়ায়। ভালো মানুষের সন্তান হলে কিছুতেই কুৎসিতভাবে তাকাতো না। তাকানোর আগে নিজের মা বোন এবং স্ত্রীর কথা একবার হলেও ভাবতো।
যারা বিদেশ থাকেন, অথবা যারা এসি রুমে বসে সারাক্ষন অফিস করেন, যারা ঢাকা শহরে প্রাইভেট গাড়িতে চলাচল করেন- সাধারন পথচারীদের দুঃখ দুর্দশা তারা কখনও বুঝবেন না। একমাত্র ভুক্তভূগিরাই বুঝেবেন। এবং তারা অবশ্যই আমার সাথে একমত হবেন। দেশ উন্নয়নশীল হয়ে গেছে কিন্তু বাসে আপনাকে দৌড়ে দৌড়ে উঠতে হবে এবং চলতি বাস থেকে আপনাকে নামতে হবে। বাস কখনই থামাবে না।
বাসে যারা উঠে বেশির ভাগ লোকই বাসের দরজার কাছে ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকে। ভিতরে বাস খালি। অসংখ্য মানুষ বাসের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকে। তাদেরকে যদি অনুরোধও করা হয় ভাই প্লীজ একটু পেছনে যান। অফিসে যাব, দেরী হয়ে যাবে। কেউ আপনার কথা শুনবে না। যে লোকটা বাসের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে, সে অবশ্যই অমানূষের বাচ্চা। যদি সে মানুষের বাচ্চা হতো তাহলে চিন্তা করতো, আমি যদি একটু পেছনের দিকে চেপে দাড়াই তাহলে আরও দুইটা লোক বাসে উঠতে পারে। তারও তো অফিস আছে। কখনও কাউকে এই চিন্তা করতে দেখি না। কাজেই আপনি বিশ্বাস করুন- অমানুষে ঢাকা শহর ভরে গেছে।
ছোট ছোট বাচ্চাদের জন্য এই পৃথিবীতে অনেকদিন বেঁচে থাকতে ইচ্ছা করে। তাদের হাসিমুখ সারাদিনের ক্লান্তি নিমিষে ভুলিয়ে দেয়।
ছোট ছোট বাচ্চাদের জন্যই হানাহানি বন্ধ করতে হবে। প্রচুর গাছ লাগাতে হবে। শিশুরা যেন হাসিমুখে এক আকাশ আনন্দ নিয়ে বেড়ে ঊঠতে পারে, আমাদের সকলকে মিলে সে চেষ্টা করতে হবে।
এই দেশটা আমাদের।
ছোট ছোট শিশুদের কথা ভেবে- আসুন দেখি, একটূ ভদ্র হওয়া যায় কিনা। সবাই মিলে চেষ্টা করে দেখি, ভালো কিছু করা যায় কিনা।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:৫৬