আমার জীবনে আমি খুব বেশি পাগলামী করেছি। পাগলামী করে-করেই জীবনের মূল্যবান সময় গুলো নষ্ট করেছি। সেসব দিনের কথা ভাবলে এখন খুব আফসোস হয়! এরকম পাগলামী হয়তো অনেকেই করে। মুরুব্বীরা হয়তো বলবেন বয়সের দোষ। আসলে মানূষ যখন ভুল করে তখন সে বুঝতে পারে না। যদি বুঝতোই তাহলে তো সে আর ভুল করতো না। কেউ যদি চোখে আঙুল দিয়ে ভুল দেখিয়ে দেয়, তবু ভুল শুধরে নেবার চেষ্টা করতাম না। ভাবতাম আমারটাই ঠিক। কিন্তু অনেক বছর আগের সেই সব কথা ভাবলে মনে হয়, কি নির্বোধই ছিলাম।
১। একবার মা'র সাথে খুব ঝগড়া হলো। ঝগড়ায় আমি হেরে গেলাম। অথচ আমার হেরে যাবার কথা ছিল না। রাগে জিদ্দে বাসা থেকে বের হয়ে হাঁটা শুরু করলাম। হাঁটতে হাঁটতে এয়ারপোর্ট চলে গেলাম। আমার বাসা খিলগা। রাত তখন এগারোটা। এমন ক্ষুধা পেয়েছে। পকেটে নাই কোনো টাকা। রাগের মাথায় খালি পকেটে বের হয়ে গেছি বাসা থেকে।
২। একবার ভাবলাম আমি জীবনে চাকরি বাকরি করবো না। ব্যবসাও না। আমি হব লেখক। আমি গেলাম বুদ্ধির জন্য আমার খালাতো ভাইয়ের কাছে। খালাতো ভাই খুব বুদ্ধিমান একজন মানুষ। খুব জ্ঞানী একজন মানূষ। তিনি আমাকে নানান বিষয়ে বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। (বর্তমানে তিনি নোয়াখালি জেলা স্কুলের ইংরেজীর শিক্ষক) বললাম, ভাই আমি লেখক হতে চাই। এখন আমাকে কি করতে হবে? ভাই বললেন, তোর সব বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে। আমি মাঠে নেমে পড়লাম অভিজ্ঞতা অর্জন করার জন্য।
কিছুদিন একটা গ্যারেজে কাজ করলাম। গাড়ির নিচে শুয়ে গাড়ির নাট বল্টু খুলতাম। তারপর একটা ইলেট্রিকের দোকানে কাজ করলাম। একটা মুদি দোকানে কিছুদিন কাজ করলাম। জ্ঞান অর্জনের জন্য ঢাকার বাইরে নানান জায়গায় ঘুরে বেড়ালাম। খালাতো ভাই একদিন বললেন, কোনো অভিজ্ঞতাই হেলা ফেলা করা যাবে না। অতি তুচ্ছ একটা অভিজ্ঞতাও অনেক বড় কাজে লাগতে পারে। আগামীকাল আমরা ভিক্ষাও করতে বের হবো। একদিন ভিক্ষুক সেজে আমি আর আমার খালাতো ভাই ভিকারুন নেসা স্কুলের সামনে গেলাম। মানূষ বুঝে ফেলল আমরা আসল ভিক্ষুক নই। পুলিশ আমাদের ধরে নিয়ে গেল থানায়।
৩। একদিন মহাখালী তিতুমীর কলেজে গিয়েছি বন্ধুর সাথে দেখা করতে। বন্ধুর ক্লাশ চলছিল। আমি ক্লাশের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। স্যার ডেকে বললেন, তুমি বাইরে দাঁড়িয়ে আছো কেন? আমার ক্লাশ চলবে পয়তাল্লিশ মিনিট। এতক্ষন কি তুমি বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবে? ভিতরে এসে বসো। আমি আমার বন্ধুর পাশে গিয়ে বসলাম।
স্যার অর্থনীতির ক্লাশ নিচ্চিলেন। বোর্ডে চিত্র একে মানূষের চাহিদা বুঝাচ্ছিলেন। স্যার বললেন, এডাম স্মিথ চাহিদার খুব সুন্দর ব্যখ্যা করেছেন। সেই ব্যাখ্যাটা কেউ বলতে পারবে। আমি হাত তুললাম। স্যার বললেন, বলো। আমি বললাম, স্যার মানূষের চাহিদার শেষ নেই। স্যার বললেন উদাহরন দাও। আমি বললাম, স্যার আপনি তিতুমীর কলেজের শিক্ষক, তাতে আপনার মন ভরে না। কিন্তু আপনার ইচ্ছা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে। স্যার হঠাৎ রেগে গেলেন। আমাকে ক্লাশ থেকে বের করে দিলেন।
৪। একবার মনে হলো আমাকে রংবাজ হতে হবে। ভালো রংবাজ। রবিন হুড টাইপ। (তখন খুব হিন্দি সিনেমা দেখতাম) লাল শার্ট, জিন্স প্যান্ট আর কেডস পড়ে থাকতাম সব সময়। চুল গুলো পানিয়ে ভিজিয়ে উলটো করে আচড়াতাম। রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে খুব আড্ডা দিতাম। খুব ভাব নিয়ে, কায়দা করে সিগারেট টানতাম। গলি দিয়ে কে আসলো, কে গেল খুব নজর রাখতাম। কোচিং এর মেয়েদের দিকে নায়কদের মতো করে তাকাতাম। কোনও রিকশাওয়ালা না জেতে চাইলে, গিয়ে বলতাম 'বদ'। ফাজলামি করিস। যেখানে যেতে চায় হাসি মুখে নিয়ে যা। হোটেলের সামনে টুলের উপর বসে ইশারায় বলতাম চা দিয়ে যা। হোটেল বয় তাড়াহুড়া করে চা আর পানি দিয়ে যেত। চা শেষ করে খুব ভাব নিয়ে ম্যানেজারকে বলতাম লিখে রাখেন।
৫। মনে মনে ভাবতাম আমাকে বাংলা সিনেমার নায়ক হতে হবে। আমার চেহারা বাংলা সিনেমার নায়কদের মতোই! উদীচিতে কিছুদিন অভিনয় শিখলাম। বেলী রোডের মহিলা সমিতিতে মঞ্চ নাটক দেখা শুরু করলাম। আয়নার দিকে তাকিয়ে অভিনয় করি। নিজের অভিনয় দেখে আমি নিজেই মুগ্ধ! এফডিসিতে যাই। খুব মন দিয়ে শূটিং দেখি। শিখি। পূবাইলের শূটিং এর স্পষ্ট গুলোতে ঘুরাঘুরি করি। অভিনয় শিখি। একদিন বাসায় মা'র সাথে অভিনয় করলাম। মা মাত্র ঘুম থেকে উঠেছে। আমি দুই হাত দুই দিকে মেলে ধরে বললাম, না না মা। এ হয় না। আমি তোমার পছন্দে বিয়ে করতে পারব না। তাহলে আমি লাইলীকে কি জবাব দেব? মা আমাকে আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে দিও না। প্লীজ। তুমি বাবাকে বোঝাও। লাইলী বড় ভালো মেয়ে। সে তোমার খুব টেক কেয়ার করবে। পরের দিন মা আমাকে পাগলের ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল।
(যদি আপনাদের আমার পাগলামো ভালো লেগে থাকে। তাহলে এই রকম ঘটনা আরও চলবে..... চলবে?)
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৫