১। আমি মুহাম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের 'কাঁচ সমুদ্র' বইটা প্রথম পড়ি। তারপর 'টুকুনজিল'। এরপর একে একে সব বই পড়ে ফেলি। তারপর তার ভক্ত হয়ে যায়। বই বের হয় কিন্তু পড়তে দেরী করি না।
একবার বইমেলাতে তাকে দেখি একটা গাছের নিচে আরাম করে বসে খুব সুন্দর করে অসংখ্য ছেলে মেয়েকে একজন একজন করে অটোগ্রাফ দিচ্ছেন। মুখটা হাসি হাসি। অবশ্য এমনিতেই তার মূখ সব সময় হাসি। তিনি মনে হয় রাগ করতে জানেন না!
যাই হোক, ছেলে মেয়েরা লাইন ধরে তার কাছ থেকে অটোগ্রাফ নিচ্ছেন। তখন অবশ্য মোবাইল ছিল না, তাই সেলফি তোলার বিষয়টি ছিল না। আমি ভিড় ঠেলে-ঠূলে স্যারের সামনে একটা বই মেলে ধরলাম- অটোগ্রাফের জন্য। স্যার চশমার ফাঁক দিয়ে আমার দিকে তাকালেন। আমি কসম খেয়ে বলতে পারি স্যারের মতো এত সুন্দর করে চশমার ফাঁক দিয়ে আর কেউ তাকাতে পারবে না।
স্যার বললেন, নাম কি?
আমি বললাম, রাজীব।
স্যার বললেন, ি (ই-কার) না ী (ঈ-কার)
আমি বললাম, একটা দিলেই হবে।
স্যার বললেন, তুমি কি দাও?
আমি বললাম, দু'টাই দেই।
স্যার হেসে ফেললেন! সহজ সরল সুন্দর হাসি।
অটোগ্রাফ দেওয়া শেষে বললাম, স্যার এটা কিন্তু আপনার লেখা বই না।
স্যার আবারও হেসে দিলেন। সহজ সরল সুন্দর প্রানবন্ত হাসি।
২। একবার আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে সিলেট গেলাম। জাফলং যাবো, মাধবকুন্ড যাবো, জৈন্তা যাবো আর যাবো হাসান রাজার বাড়ি। কি মনে করে সবার আগে চলে গেলাম জাফর ইকবাল স্যারের দেখা করতে। স্যার মাত্র ক্লাশ শেষ করে বিশ্রাম নিচ্ছেন। আমি বললাম, স্যার আপনাকে দেখতে আসছি আমরা। কেমন আছেন? তারপর নানান বিষয় নিয়ে নানান রকম গল্প হলো। কখনও সন্ধ্যা হয়ে গেছে আমরা টেরও পাইনি।
জাফর ইকবাল স্যার অন্যসব স্যারদের মতোন নয়। উনি সবার থেকে আলাদা। তার কথা বলার ভঙ্গি সুন্দর। ঘন্টার পর ঘন্টা তার কথা শুনলে একটূও বিরক্ত লাগে না। ইচ্ছে করে তার গল্প শুনতেই থাকি। স্যার কাউকে অবহেলা করেন না। সবার কথাই খুব মন দিয়ে শুনেন। কে আপন, কে পর অথবা কে পরিচিত আর কে অপরিচিত তা স্যারের কাছে কোনো ব্যাপার না। কেউ তার সাথে ছবি তুলতে চাইলে আগ্রহ নিয়ে ছবি তুলেন। স্যার দেশ নিয়ে অনেক ভাবেন।
৩। একবার আমি খুব হতাশায় নিমজ্জিত হলাম। ভয়াবহ অবস্থা আমার। এক আকাশ হতাশা ভর করেছে আমার উপর। হতাশা থেকে বের হবার কোনো উপায় পাচ্ছিলাম না। আমার সমস্যার কথা জানিয়ে স্যারকে একটা ম্যাসেজ দেই মোবাইলে। স্যার সাথে সাথে ম্যাসেজে আমার হতাশা কাটানোর জন্য কিছু উপায় বলে দেন। স্যারের পরামর্শতে কাজ হয়েছিল। আমি হতাশামুক্ত হতে পেরেছিলাম। স্যারকে যখনই ম্যাসেজ দিয়েছি, তিনি আমার ম্যাসেজ অবহেলা করেননি। দেরীতে হলেও উত্তর দিয়েছেন। আসলে স্যার সবার ম্যাসেজের'ই উত্তর দেন।
স্যারের সাথে অনেক অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছে। দূর থেকেই হাত উঁচু করে সালাম দিয়েছি। স্যারও হাত উঁচু করে আমার সালাম গ্রহন করেছেন। নানান অনুষ্ঠানে স্যারের অসংখ্য ছবি তুলেছি।
স্যার ভালো থাকুক। সুস্থ থাকুক। জয় বাংলা।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:২৫