কত বড় নির্বোধ হলে কিছু ধার্মিক বলে, ইহুদি নাসারা'রা কোরআন রিসার্চ করে মোবাইল, কম্পিউটার ইন্টারনেট ইত্যাদি আবিস্কার করেছে।
মানব সভ্যতার মূলে বিজ্ঞানের অবদান যে কত ব্যাপক তা প্রতিদিনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা থেকে লক্ষ করা যায়। বিজ্ঞানের সাধনা যে নিছক নয়, সে সম্পর্কে বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেছেন, ‘এক কেজি ভরবিশিষ্ট কোনো পদার্থকে এবং একটি এক পয়সার মুদ্রাকে একই উচ্চতা থেকে একসঙ্গে ছেড়ে দিলে এক কেজি ভরবিশিষ্ট পদার্থটি আগে মাটি স্পর্শ করবে—একজন বিজ্ঞানীর কর্তব্য তা যাচাই করে দেখা।’ এভাবে সত্যতা নির্ণয়ের নির্দেশনা দেয় বিজ্ঞান। যতই দিন যাচ্ছে মানুষের নিরন্তর প্রয়োজন মেটানোর জন্য বিজ্ঞান আরো সৃষ্টিমুখর হয়ে উঠেছে। আর ওই নির্বোধ ধার্মিকেরা বিজ্ঞানের আবিস্কার প্রতি মুহূর্ত ব্যবহার করবে, সুফল ভোগ করবে কিন্তু উঠতে বসতে তাদের গালাগালি করবে।
ধর্ম ছাড়া আমাদের চলে কিন্তু বিজ্ঞান ছাড়া একটি মুহূর্তও চলে না আমাদের। ধর্ম পালন করতে গেলে তো বিজ্ঞানকে দূরে ঠেলে দিতে হবে। আবার বিজ্ঞানকে আকড়ে ধরলে ধর্ম আলগা হয়ে যায়। আমার নিজের মধ্যেই নানান দ্বিধা সংশয় কাজ করা শুরু করলো। আমি খুজতে শুরু করলাম মুসলিমরা কি কি আবিস্কার করলো মানব জাতির কল্যাণের জন্য এবং তাদের আবিস্কার মানব কল্যাণে কি কি ভূমিকা রাখলো। মুসলিমদের আবিস্কার কিছুই খুঁজে পাচ্ছি না। আবিস্কার নাই তো। থাকলে ঠিকই খুঁজে পেতাম। বিজ্ঞানের হাত ধরে মানব সম্প্রদায় এগিয়ে যাচ্ছে।
# রাইট ভ্রাতৃদ্বয় উড়োজাহাজ আবিস্কার করলেন।
# ভেখ মলার মোটর সাইকেল আবিস্কার করলেন।
# ইগন মিগস্কি হেলিকপ্টার আবিস্কার করলেন।
# অণুবীক্ষণ যন্ত্র আবিস্কার করেন জেড ভ্যানসেন।
# এয়ার কন্ডিশনার আবিস্কার করেন ডব্লিউ এইচ ক্যারিয়ার।
# ক্যামেরা আবিস্কার করেন জর্জ ইস্টম্যান।
# টেলিফোন আবিস্কার করেন আলেকজান্ডার গ্রাহামবেল।
# ডিনামাইট আবিস্কার করেন আলফ্রেড নোবেল।
# পোলিও টিকা আবিস্কার করেন জোনাস ই স্যাক।
(কই মুসলিমদের আবিস্কার?)
প্রতিদিন প্রতিটি মানুষ সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠে রাতে বিছানায় যাওয়ার আগ পর্যন্ত অকাতরভাবে বিজ্ঞানের দান গ্রহণ করছে। হুমায়ূন আজাদ বলেছেন, পুরোনো কালের মানুষ যদি দৈবাৎ একটি টেলিভিশনের সামনে এসে পড়তো, তাহলে তাকে দেবতা মনে ক’রে পুজো করতো। আজো সেই পুজো চলতো।
বিয়ে উপলক্ষ্যে বিশাল আয়োজন। পাত্র ও পাত্রীপক্ষের সবাই উপস্থিত। কিন্তু বরকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে সময় চলে যাচ্ছে দ্রুত। হঠাৎ বরের এক বন্ধুর মনে হলো, তার বন্ধুটি যে পরিমাণে কাজ পাগল, হয়তো বিয়ের কথা দিব্যি ভুলে বসে আছে! নিশ্চয়ই লাইব্রেরিতে বসে কোনো বই ঘাঁটছে, নয়তো ল্যাবরেটরিতে কোনো গবেষণা নিয়ে পড়ে আছে।
বন্ধুর অনুমানই সত্যি হলো। পাত্রকে পাওয়া গেলো ল্যাবরেটরিতে। খুব রাগ হলো বন্ধুর। তিরস্কার করে বললেন, “আজ যে তোর বিয়ে সেটাও কি ভুলে বসে আছিস?” খুব শান্ত স্বরে পাত্র বললেন, “বিয়ের কথা আমি ভুলিনি। কিন্তু হাতের কাজটুকু শেষ না করে কীভাবে বিয়ের আসরে যাই!” এই মহান লোকটির নাম লুই পাস্তুর। এমন আবিস্কারক মুসলিম ইতিহাসে পাওয়া যাবে না। লুই পাস্তুর একজন রসায়নের অধ্যাপক হলেও আমৃত্যু কাজ করেছেন অণুজীব নিয়ে।
মানুষ যদি পরকালের শাস্তির কথা ভেবে নৈতিক হয়, সেই নৈতিকতার মধ্যে মহত্ব কোথায়? যদি বলি- ইসলাম একটি বিজ্ঞানসম্মত ধর্ম এবং এ ধর্মের মহাগ্রন্থ আল-কুরআনও বিজ্ঞানময়, মানবতার কল্যাণে অবতারিত মহাগ্রন্থ আল-কুরআন বিজ্ঞানের উৎস। তাহলে আর কোনো সমস্যাই নেই। কিন্তু বিবেক তো ভিন্ন কথা বলে। মানবীয় জ্ঞানের উৎস হচ্ছে তিনটি- অভিজ্ঞতা, বুদ্ধি ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য শক্তি। বিজ্ঞান শূন্যের মধ্যে আবির্ভূত হয়নি। রেষারেষি করেও বিজ্ঞান আবির্ভূত হয়নি। ধর্ম-বিজ্ঞানের সমন্বয় কিংবা সম্প্রীতির কথা বলা হলেও বিজ্ঞান এবং ধর্মের দ্বন্দ্বযুদ্ধের রক্তাক্ত ইতিহাস কারো অজানা নয়।
ধর্ম ও বিজ্ঞান সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি বিষয়। ধর্ম হলো মানুষের বিশ্বাস, যার পিছনে কোন যুক্তি নেই। পক্ষান্তরে বিজ্ঞান হলো সম্পূর্ণ যুক্তির উপরে চলে। অযৌক্তিক অন্ধ বিশ্বাসের স্থান বিজ্ঞানে নেই। বিজ্ঞানের যতই অগ্রগতি হতে থাকে, ততই মানুষ যুক্তি বাদী হতে থাকে, ধর্মের রাজত্ব কমতে থাকে। বিজ্ঞান কখনই কোন ধর্মীয় কিতাবের বিধি বিধান বা বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করে না, বরং বর্তমানে ধর্মকেই বিজ্ঞানের কাছে ধর্ণা দিতে হয় তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য।
এক জন কিভাবে যেন মাছের পেটে ডুকে গেছেন। কিছুতেই বের হতে পারছেন না। তখন তিনি এক সূরা পড়লেন, সাথে সাথে তিনি মাছের নাক দিয়ে বের হয়ে গেলেন। খুব পাওয়ার ফুল সূরা। আরেকজনের কথা বলি, হাত হাতে একটা জাদুর লাঠি আছে, এই লাঠি দিয়ে তিনি দুষ্টলোকদের মারেন। নিজ হাতে লাঠি দিয়ে মারেন না, অটোমেটিক লাঠি দুষ্টলোকদের পিঠে পড়তে থাকে। আরেকজন আছেন, যিনি বনের সমস্ত পশু পাখিদের কথা বুঝতে পারতেন। ধরেই নিলাম তিনি এক অলৌকিক ক্ষমতা বলে, পশু পাখিদের কথা বুঝতে পারেন। আচ্ছা, বনের পশু পাখিদের কথা বুঝার পর দেশ সমাজ বা মানূষের কি উপকারে আসলো? আরেকজন আছেন, তিনি চিৎকার করে সবাইকে বললেন, মহা প্লাবন আসছে। তাড়াতাড়ি আমার নৌকায় উঠো। যারা বিশ্বাস করে নৌকায় উঠলো তারা বেঁচে গেল। যারা উঠলো না তারা মরে গেল।
অনেক বছর আগে বিটিতে রাত আট টার বাংলা সংবাদের পর আলিফ লায়লা দেখাতো। অদ্ভুত সব কর্মকাণ্ড। তখন আমি অনেক ছোট। টিভিতে আলিফ লায়লা দেখে খুব বিনোদন পেতাম।
আধুনিক বিজ্ঞান-প্রযুক্তির মৌলিক তত্ত্ব বা সূত্রগুলোরও প্রবক্তা মুসলমানরাই। এক কথায় বিজ্ঞান-প্রযুক্তির জনক মুসলমান বিজ্ঞানীরাই। কিন্তু কুচক্রী ইহুদী-নাছারা, কাফির-মুশরিকদের ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দিয়ে আজকের মুসলমানরা দুনিয়ার মোহে ও লোভে আত্মভোলা হয়ে নিজের গৌরবময় ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনে বিমুখ হয়ে আছে। ইসলামের জন্মলাভের পর প্রায় ১০০০ বছর ধরে মুসলমানরা জ্ঞান-বিজ্ঞানে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। মুসলিম বিজ্ঞানীদের অনেক যুগান্তকারী আবিস্কারের পথ ধরেই এসেছে আজকের আধুনিক সভ্যতা।
ধার্মিকেরা নানান কুসংস্কার বিশ্বাস করে। মুসলিম দেশ হিসেবে ধর্মের প্রতি ধার্মিকদের দুর্বলতার পরিধি হিসাব করে বলা যাবে না। ধর্মের নামে গোঁড়ামি আমরা দেখতে পাই। সমাজ জীবনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে কুসংস্কার সংক্রামক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। অথচ এসব কুসংস্কারে বিশ্বাস ঈমানের জন্য মারাত্মক হুমকি। ধার্মিকেরা অন্ধ বিশ্বাসকে আশ্রয় করে আবর্তিত কোনো যৌক্তিক বিচার মানে না। এইসব ধার্মিকদের আমি বলতে চাই- তোমরা আধুনিক হও।
অনেক ধার্মিক বলেন, জ্ঞান-বিজ্ঞানের ইতিহাসে মুসলমানদের অবদান অপরিসীম। কিনতি সে অবদান গুলো খুঁজে পাই না। আসলে ধার্মিকরা এই রকম বলে এক ধরনের শান্তি পায়।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:২১