১। বাংলাদেশে কি কোনো সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান আছে? সব সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান'ই তো হয়ে গেছে বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। তারা টাকা ছাড়া কিছু বুঝে না। যেমন ধরুন হাসপাতাল। হাসপাতাল গুলোতে এত খরচ কেন? আমি আজ তিনটা হাসপাতালে গেলাম খোঁজ নিতে বাচ্চা ডেলিভারী করতে খরচ কত হয়। প্রথমে স্কয়ার হাসপাতালে গেলাম- তারা বলল, তিন দিনে নিম্মে নব্বই হাজার টাকার মতো লাগবে। আমি বললাম এত টাকা কেন? তারা উত্তর দিল- রুমে এসি আছে, টিভি আছে, ফ্রিজ আছে, সার্ভিস চার্জ আছে। আরেক হাসপাতালে গেলাম (সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ) তারা বলল- ৬০ হাজার টাকার মতো লাগবে। আমাদের সেন্ট্রাল এসি। ৫০% ওষুধ আমরা দিব। তারপর বারাকা হাসপাতালে গেলাম- তারা বলল, চল্লিশ ধরে রাখেন। (তখন এক পিয়ন এসে ফিসফিস করে বলল- যেহেতু চল্লিশ বলছে, আপনি এর সাথে আরও ২০/৩০ যোগ করে রাখবেন)।
আমার কথা হলো- নরমাল ডেলিভারী হবে না সিজার হবে এটা না জেনেই তারা কিভাবে টাকার অংক বলে দিল? সবচেয়ে বড় কথা এত টাকা কেন লাগবে? সবার তো অবৈধ টাকা নেই। সব মিলিয়ে ৮/১০ হাজার টাকা লাগতে পারে। এত টাকা কেন??? দরিদ্র একটা দেশে এত টাকা কেন লাগবে? স্বাস্থ্যমন্ত্রী আপনি কি এই ব্যাপারে কিছু জানেন না?
২। একজন মানুষ দুপুরে হোটেলে ভাত খেতে গেলে কম পক্ষে ৩০০ টাকা লাগে। রাস্তার পাশে ছাপড়া হোটেলে খেতে গেলেও প্রায় ২০০ টাকা লাগে। এত দামের কারনেই দুপুরবেলা রাস্তার পাশের চায়ের দোকান গুলোতে খুব ভীড় হয়। অসংখ্য মানুষ ৩০ টাকার মধ্যে দুপুরের খাবার সেরে নেয়। এক কাপ চা, দুইটা বিসকিট অথবা একটা রুটি আর কলা খেয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে নেয়। হোটেল গুলোতে খাবারের মান খুব খারাপ কিন্তু দাম অত্যাধিক বেশি। খুব বেশী। এই শহরে শুধু ডাল আর ভর্তা দিয়ে ভাত খেলেও ৮০ টাকা লাগে। যাই হোক, এত টাকা তো লাগার কথা না। নিজের চোখে প্রতিদিন দেখি- নোংরা পরিবেশে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই সব খাবার খাচ্ছে। আমাদের দেশে বেশির ভাগ লোকের বেতন ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে। তাদের ঘর সংসার আছে, বাচ্চা কাচ্চা আছে। ঘর ভাড়া দিয়েই তো তাদের অর্ধেক বেতনের টাকা শেষ হয়ে যায়। সাড়ে পাঁচ শ' টাকা দিয়ে এক কেজি গরুর মাংস কেনার ক্ষমতা থাকে না অনেকের'ই। কিন্তু আমি বাজারে গেলে দেখি অসংখ্য মানুষ লাইন ধরে দাঁড়িয়ে গরুর মাংস কিনছে। দামী দামী রেস্টুরেন্ট গুলোতে কী প্রচন্ড ভীড়। এই লোক গুলো কারা? বেশির ভাগ মানুষ যে হোটেলের খাবার গুলো খায়, সেই হোটেলে খাবারের মান যে প্রচন্ড খারাপ এবং দাম অত্যাধিক বেশি- তা কি সরকার জানে?
৩। আমাদের পাশের বাসায় এক পশু ডাক্তার আছে। সে অনেক টাকার মালিক। কিছুদিন আগে তার ছেলেকে একটা বাইক কিনে দিল- দেড় লাখ টাকা দিয়ে। এই ঈদে বাড়ির সবাইকে নিয়ে মালোশিয়া থেকে ঘুরে এলো। তার ছেলে এক জোড়া কবুতর কিনলো ৯ হাজার টাকা দিয়ে। আচ্ছা, একজন পশু ডাক্তারের বেতন কত? এই পশু ডাক্তার অফিসের গাড়ি দিয়ে তার পরিবার নিয়ে নানান জায়গায় ঘুরে বেড়ায়। রাত ১২ টা পর্যন্ত সরকারি অফিসের গাড়ি তার কাছে থাকে কি করে? এই ব্যাপারে সরকার কি কিছু জানে? সেদিন দেখি ডাক্তার সাহেব তার ছেলে বলছে- 'মেরে হাড্ডি ভেঙ্গে দিবি' তারপর আমি বুঝব। একজন বাবা তার সন্তানকে বলতে পারেন(?)- 'মেরে হাড্ডি ভেঙ্গে দিবি'। ঢাকা শহরে তার তিনটা বাড়ি। ইশ আমি যদি পশু ডাক্তার হতে পারতাম!
৪। রাতে ভাত খেতে বসে টিভির সংবাদ দেখা আমার দীর্ঘ দিনের অভ্যাস। যাই হোক, হঠাত দেখি এক মন্ত্রী বলছেন, দুর্নীতি করলে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। গরীবের সম্পদ নিয়ে- দুর্নীতি সহ্য করা হবে না। সে যত ক্ষমতাবান'ই হোক। কিন্তু এই মন্ত্রীকে আমি নিজের চোখে দেখেছি- বাংলাদেশের সেরা একটা কোম্পানীতে টাকা নেওয়ার জন্য বসে আছে। ব্যাপারটা এমন দাঁড়িয়েছে যে, চোর, চোরকে বলছে চুরি করা যাবে না। গুলিস্তান এলাকায় দেখেছি- এক পকেটমার পকেট মেরে দৌড়ে পালাচ্ছে আর চিৎকার করে সামনের দিকে এক হাত তুলে বলছে- পকেটমার পকেটমার। একটা প্রতিষ্ঠানে যে যার কাজ বা দায়িত্ব যদি সঠিকভাবে পালন করে তাহলে সেই প্রতিষ্ঠান খুব দ্রুত উন্নতি করে। ঠিক সেভাবে সরকারের প্রতিটা মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী আর সচিবগন যদি তাদের কাজ বা দায়িত্ব যথযথভাবে পালন করে তাহলে একটা দেশের খুব দুত উন্নতি করা সম্ভব।
৫। রাজনীতিবিদদের ছত্রছায়ায় থাকা কিছু লোক হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে। এত এত টাকা---যে পরিবারের সবাই মিলে দু'হাতে খরচ করেও শেষ করতে পারছে না। স্কুলে বাচ্চার বেতন দিচ্ছে- প্রতি মাসে ২৫ হাজার টাকা। কাজের বুয়াকে পর্যন্ত বিদেশ ভ্রমন করিয়ে আনছে। মানুষের কাছে ভালো সাজার জন্য মসজিদ মাদ্রাসা আর এতিমখানা দিচ্ছে। টিভি চ্যানেল খুলছে। এব্যাপারে কি সরকার কিছু জানে না? যদি জানে তাহলে ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন? এই ভন্ড লোক গুলোর টাকা কেড়ে নিয়ে দেশে অনেক শিল্প কারখানা স্থাপন করা যায় না? বেকারদের একটা গতি হয় না? সহজ হিসাব গুলো কেউ বুঝতে চায় না।
৬। এক লোক মুক্তিযোদ্ধা নয়। তবু তার মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট আছে। সরকার থেকে তেল, চাল, ডাল এবং নগদ টাকা সবই পাচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা তাকেই আবার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে- গ্রামে গিয়ে সঠিক মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরি করতে। সে ইচ্ছে মতো টাকা নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা বানাচ্ছে। আমি নিজের চোখে দেখলাম- গ্রাম থেকে ফিরে এসে ছেলেকে আই ফোন কিনে দিল। শপিং করার জন্য একটা বান্ডিল দিয়ে দিল। সেদিন সে আমাকে কথায়-কথায় বলল- অনেকে এসে আমার পায়ে ধরেছে- তবুও আমি মুক্তিযোদ্ধা বানাইনি। অনেকে অনেক উপর লেভেলের লোকজন দিয়ে ফোন করিয়েছে তবু মুক্তিযোদ্ধা বানাই নাই। এটা আমার রাষ্ট্রিয় দায়িত্ব। ইত্যাদি ইত্যাদি। তার মিথ্যা কথা শুনে আমার খুব রাগ হলো। আমি বলেই ফেললাম- টাকার বিনিময়ে আপনি নাকি মুক্তিযোদ্ধা বানাচ্ছেন? সে রেগে-মেগে আমাকে মারতে আসলো।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১২:৩২