গতকাল সারাদিন অফিসের কাজে বাইরে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজেছি। কাজ শেষ করে বাসায় ফিরছি। ভাঙ্গা, খানা-খন্দে ভরা রাস্তায় পানি জমে গেছে। কোনো কোনো জায়গায় কোমর পর্যন্ত পানি। খুব বেগ পেতে হচ্ছে। আধা ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকেও বাস পাইনি। ইফতারির আগে বাসায় যেতে পারলেই আমি খুশি। এর মধ্যে আমার এক বন্ধু ফোন করে বলল- এমন বৃষ্টি মুখর দিনে নিশ্চয়ই খিচুরি খেয়ে ঘুমাচ্ছো? আমি মনে মনে বন্ধুকে বললাম- ছাগল। বাংলামটর থেকে হেটে হেটে বাসায় ফেরার পথে রাজারবাগ পুলিশ লাইনের সামনে ছবিটি তুলি। বিশেষ করে মগবাজার থেকে রাজারবাগ মোড় পর্যন্ত ভয়াবহ অবস্থা। অবশ্য দশ বা বিশ বছর আগেও এই রকম অবস্থা ছিল। এখন, কথা হচ্ছে, তাহলে এত গুলো বছরে সরকারের লোকজন কি কাজ করলো?
ঢাকা শহরের মানুষ চায়- ফুটপাত দখলমুক্ত, যানজট নিরসন এবং জলাবদ্ধতা নিরসন। কিন্তু স্বাধীনতার পরে কেউ'ই এই তিনটি সমস্যার সমাধান দিতে পারেনি। শুনুন দুই মেয়র সাহেব, এসি রুমে বসে নগরের কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারবেন না। আমাকে সারাদিন নানান কাজে সারা ঢাকা শহর ঘুরে বেড়াতে হয়। আমি জানি, সমস্যা গুলো কি কি এবং কোথায়। আমার মতো যারা সারাদিন ঢাকা শহরের বাইরে ঘুরে তাদের কাছ থেকে জেনে নিন সমস্যা ও সমাধান।
ফুটপাতে হাঁটার জায়গাজুড়ে নানান পণ্যসামগ্রীর পসরা। পথচারীরা ফুটপাতে জায়গা না পেয়ে রাস্তায় হাঁটবেন, সেখানেও একই অবস্থা। রাস্তা দখল করে গাড়ি পার্কিং আর হকারদের ব্যবসা। পুলিশ ও প্রশাসনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা হকারদের সাহায্য করে। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হকাদের কাছ থেকে নিয়মিত টাকা নেন। এ কারণেই উচ্ছেদের কয়েক ঘণ্টা পর, হকাররা আবার ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে তাদের ব্যবসা শুরু করে। মাননীয় মেয়র- ফুটপাত হকারমুক্ত করার ঘোষণা দেন। তিনি ১০০% ব্যর্থ হয়েছেন। গুলিস্তান এলাকার ফুটপাত লক্ষ লক্ষ টাকায় বিক্রি হয়। গুলিস্তান এবং আশেপাশের এলাকায় পাঁচ হাজার হকার আছে। এসব দোকান থেকে দৈনিক গড়ে ৩০০ টাকা নিলেও 'লাইনম্যান' প্রতিদিন ১৫ লাখ টাকা তোলেন। 'লাইনম্যানরা' কোনও দলের সেটা আসলে কোনও বিষয় নয়। কারণ, যখন বিএনপি ক্ষমতায় থাকবে তখন ওই দলের নেতারাও টোল তুলবেন।’ সহজ সরল সত্য কথা হলো- স্থানীয় ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় থেকে হকাররা তাদের ব্যবসা চালান।’
মেয়র সাহেব বলেছেন, এক ইঞ্চি রাস্তাও কাউকে দখল করতে দেওয়া হবে না। সেদিন গুলিস্তান গিয়ে আমি ফুটপাতে এক ইঞ্চি জায়গা পাইনি পা রাখার জন্য। আমি আমাদের দুইজন মেয়রকে বলতে চাই- আপনারা আপনাদের সব শক্তি দিয়ে, মেধা দিয়ে, ভালোত্ব দিয়ে শুধু ফুটপাত দখল মুক্ত করে দেখান। তাতে সমগ্র দেশের মানুষ আপনাদের সারা জীবন মনে রাখবে। আগামী ভোটেও হাসি মুখে নির্বাচিত হবেন। সদিচ্ছা থাকলে ফুটপাত দখলমুক্ত করা কোনো ব্যাপার না। কই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনের ফুটপাতে তো কোনো দোকান নেই। মন্ত্রীদের বাড়ির সামনের ফুটপাতে তো দখলমুক্ত। তাহলে সাধারন মানূষের চলাচলের রাস্তা কেন দখন মুক্ত হবে না?
গুলশান এলাকা খুব সুন্দর হয়েছে। ফুটপাত গুলোও খুব সুন্দর। সন্ধ্যার পর সব বাতি জ্বলে উঠে। দেখতে ভালোই লাগে। মনে হয় বিদেশ-বিদেশ । ঢাকার অন্যসব এলাকা কি গুলশানের মতো হবে? আমি আশাবাদী মানুষ। অপেক্ষায় আছি। অপেক্ষা করতে আমার ভালোই লাগে।
মন্ত্রী এমপিদের মতো শুধু টিভি ক্যামেরার সামনে কথার ফুলঝুড়ি আর শুনতে চাই না। আমরা কাজ দেখতে চাই। আমরা আমাদের দেশটাকে অনেক ভালোবাসি। শুধু চ্যাটাং চ্যাটাং কথা নয়- আসলেই কিছু ভালো কাজ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। গত বিশ বছর আগেও রাস্তায় জ্যাম ছিল, আজও আছে। সমস্ত ফুটপাত দখল ছিল- আজও দখলমুক্ত হয়নি। দিন-দিন তা বাড়ছে। বিশ বছর আগেও রাস্তায় পানি জমে থাকতো- আজও জমে। তাহলে এতদিন দায়িত্বরত ব্যাক্তিরা কি কি কাজ করলেন?
আর একটা বিষয় আমি বলতে চাই- একই রাস্তা সারা বছর ভাঙ্গা হয় কেন? একবার সিটি করপোরেশন ভাঙ্গে। একবার ওয়াসা ভাঙ্গে। একবার বিদ্যুৎওয়ালারা (ডেসা) ভাঙ্গে। এইভাবে দেখা যায় একটা রাস্তা প্রায় সারা বছরই ভাঙ্গা থাকে। এতে সাধারন মানুষের কষ্ট হয়। একটু বুদ্ধি খাটালে টাকার অপচয় বন্ধ হবে তেমনি সাধারন মানূষের কষ্টও কম হবে।
( বিঃ দ্রঃ এর পর পরিবহন সমস্যা ও সমাধান নিয়ে আলোচনা করবো। সাথেই থাকুন।)
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুন, ২০১৭ দুপুর ১২:০৪