বসনিয়া ইউরোপ মহাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে বলকান উপদ্বীপে অবস্থিত একটি রাষ্ট্র। অতীতে এটি যুগোস্লাভিয়া প্রজাতন্ত্রের একটি অংশ ছিল। ১৯৯২ সালের মার্চ মাসে এটি স্বাধীনতা লাভ করে। ১৪শ শতকে রাজপুত্র শাসিত বসনিয়া দক্ষিণের ডিউক শাসিত হার্জেগোভিনার সাথে মিলে একটি ক্ষণস্থায়ী মধ্যযুগীয় রাজ্য গঠন করেছিল। দেশটির উত্তরে ও পশ্চিমে ক্রোয়েশিয়া এবং দক্ষিণে ও পূর্বে সার্বিয়া ও মন্টেনিগ্রো প্রজাতন্ত্র। আড্রিয়াটিক সাগরে ক্রোয়েশিয়ার মাঝ দিয়ে বসনিয়ার প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ তটরেখা আছে।
প্রচন্ড যুদ্ধের কারনে বসনিয়া এবং হার্জেগোভিনা ছিল সাধারন মানুষের ভ্রমনের জন্য একটি অনিরাপদ এবং ঝুঁকিপূর্ণ স্থান। বর্তমানে ইউরোপে বেশ সুন্দর একটি ভ্রমনপ্রিয় স্থান হয়ে উঠেছে। ১৯৯২ সালের এপ্রিল মাসে বসনিয়া-হার্জেগোভিনার স্বাধীনতা ঘোষনা করা হয়। ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত সার্ব আর্মি প্রায় এক লক্ষ বসনিয়ান মুসলিমকে হত্যা করে বা শতকরা ৮০ ভাগ বসনিয়ান নিরীহ মুসলিমকে হত্যা করে। সার্ব আর্মি ১৯৯৩ সালের শেষ-অবধি বসনিয়ার তিন-চতুর্থাংশ দখল করে
নেয়। দেশটিতে শতকরা ৩৫ ভাগ মানুষ বেকার রয়েছেন।
স্বাধীনতার পর এটাই তাদের সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট। বিশ্বকাপে গ্রুপ এফ-এ বসনিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্তিনা, ইরান ও নাইজিরিয়া। গ্রুপ পর্বের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারলে আবির্ভাবেই নক আউট পর্যায়ে পৌঁছে যেতে সমস্যা হবে না বসনিয়ার। সার্ব যুদ্ধাপরাধীরা ১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত হাজার হাজার মুসলমানকে নির্মমভাবে হত্যা করে মাটি চাপা অথবা নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছিল। এ কারণে বসনিয়া যুদ্ধের ১৫ বছর পরও নিহতদের সবার মৃতদেহ খুজে পাওয়া যায়নি। বসনিয়ার যুদ্ধকে বলা হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীকালীন ইউরোপের সবচেয়ে নৃশংস যুদ্ধ হিসেবে।
সার্বদের তাণ্ডবলীলার সবচেয়ে বড় শিকার সেব্রেনিৎসা শহরের মানুষ। জাতিসংঘ ওই শহরটিকে নিরাপদ শহর ঘোষণা করার পরও ১৯৯৫ সালে সার্বরা সেখানে আগ্রাসন চালায় এবং জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক সেনাদলের সামনেই তারা আট হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করে। বিগত দশকে বসনিয়ার যুদ্ধে দেশটির ১ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়। সেব্রেনিত্সার গণহত্যার জন্য এখন আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে সাবেক সার্ব নেতা রাদোভান কারাদিচের বিচার চলছে। সার্বদের ছুটি কাটানোর সবচেয়ে প্রিয় জায়গা বসনিয়া, আর অনেক বসনীয় কোম্পানীর আন্তর্জাতিক বাজারজাতকরণের দায়িত্বে সার্ব কোম্পানী।
এঞ্জেলিনা জলি জাতিসংঘে বসিনিয়ার শুভেচ্ছা দূত। যুদ্ধের বিশ বছর পরও বসনিয়া জুড়ে এর ক্ষতচিহ্ণ এখনো স্পষ্ট। অনেক ক্ষতিগ্রস্থ অনেক ভবন সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু এই যুদ্ধের ভয়ানক স্মৃতি এখনো ভুলতে পারেন নি অনেক মানুষ। ৪৪ মাস ধরে সারায়েভো অবরোধের ঘটনা ও হত্যাযজ্ঞ চালানোর অন্যতম নায়ক সাবেক সার্ব সেনাপ্রধান জেনারেল রাতকো ম্লাদিচ। তিনি বর্তমানে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালতে বিচারাধীন। ১৯৯৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেখানে স্বাধীনতার পক্ষে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। ব্যাপক জনগোষ্ঠী স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দেয়! কিন্তু সার্ব ও ক্রোটরা মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করার লক্ষে নির্মম নির্যাতন ও গণহত্যা চালায়।