সিলেটের লালাখালের কথা শুনেনি এমন মানুষ খুব কমই আছেন ব্লগে। অনেকে লালাখালের সৌন্দর্য উপভোগ করেও এসেছেন। আবার অনেকে ব্লগে বসেই লালাখালকে দেখে দিয়েছেন বহু নজর ! বহু নজর বলার কারণ হচ্ছে ব্লগে লালাখাল নিয়ে বেশ কয়েকটা পোষ্ট। এইসব পোষ্ট পড়ে যারা সরাসরি দেখেননি তারা ব্লগে বসেই চোখ জুড়িয়ে নিয়েছেন। হয়তো অনেকে ভেবেছেন সিলেট গেলে সময় করে একবার লালাখালটা ঘুরেও আসবেন।
ব্লগে লালাখাল নিয়ে এতো পোষ্টের ভিড়ে আমার পোষ্টটা একটু ব্যাতিক্রম! ব্যাতিক্রমের কারণ আস্তে আস্তে খুলাসা করে দিচ্ছি
আগে একটা ছবি দেখি চলুন.....
উপরের ছবিটা সারিঘাটে তোলা। যারা গেছেন তাদের জানার কথা। আর যারা জানেন না তাদের বলছি সারিঘাট হচ্ছে নৌকার ঘাট, যেখান থেকে আপনি নৌকা ভাড়া করে লালাখালের উদ্দেশ্য যাবেন।
এবার তাহলে মূল পোষ্ট শুরু করি !
একদিন হঠাৎ করেই আমরা প্ল্যান করলাম লালাখাল আর জৈন্তা রাজবাড়ি ঘুরতে যাবো। জৈন্তা রাজবাড়ির কাহিনী আরেকদিন।
সিলেটে থাকি অথচ লালাখাল আমাদের কারোই দেখা হয়ে ওঠেনি। তাই ঢিলাঢালা সিদ্ধান্ত নয় একেবারে পাকাপোক্ত লিখিত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আমরা মাঠে নামি! ( যুদ্ধ করতে যাইতেছি তো তাই )
দিনক্ষণ ঠিক করে সবাই একত্রে হলাম পাঠানটুলা এলাকায়। ঐখান থেকে আমাদের যাত্রা শুরু হবে....পকেটে কার কতো টাকা আছে কারো আইডিয়া নাই। যে যতো পারছে নিয়া আসছে।
সিলেট থেকে বাসে যাওয়ার প্ল্যান ছিল লালাখাল। এরপরও কৌতূহল বশত এক সিএনজি ড্রাইভাররে জিজ্ঞেস করেছিলাম রিজার্ভ যাবে নাকি?
কত দিতে হবে ? ভাড়া শুইনা মানিব্যাগ প্যান্টের পকেট থেকে খুইল্লা যায় যায় অবস্থা হইয়া গেছিলো। বিশ্বাস হয় না ??
এইদেখেন ছবি... টাকা নিয়া ঝামেলায় আছিলো আমাদের মনিপুরি দোস্তটা। কোন বুথেই টাকা পাওয়া যায় না। আমাদের অবস্থা তো আরো খারাপ আছিলো। শেষ পর্যন্ত ৪-৫ টা বুথ ঘুরে টাকা পাইছে। টাকা পাইলেও আমরা সিএনজি নেই নাই....৩৫ টাকা জনপ্রতি ভাড়া দিয়ে বাস চড়েই সারিঘাট গিয়া নামছি। সারিঘাট নেমেই কিছু ক্লিক ক্লিক নিলাম....
পানি এতো নীল হইলো কেমনে ?? এই নিয়া আমাদের মাঝে গভীর পর্যালোচনা যা পরবর্তীতে ইজি বাইক বৈঠকে গড়ায় !
সারিঘাটে কিছুক্ষণ চক্কর মেরে লালাখাল যাবার প্রস্তুতি নিলাম। এবার নৌকা ভাড়া করতে হবে। নৌকা ভাড়া করার জন্য ঘাটে নামলাম....জিজ্ঞেস করলাম লালাখাল যাওয়া আসা কতো টাকা ভাড়া ? ১২০০ টাকার নিচে যেতেই চায় না। পরে ভাবলাম কি আর করা যাওয়া তো লাগবেই।
যাওয়ার আগে একটা দোকানে ঢুকলাম কিছু চিপস কিনবো বলে। ওখানে গিয়ে পরিচিত একজনকে পেয়ে গেলাম। উনি কি একটা কাজে এসেছেন। আমরা যে বেড়াতে এসেছি তা উনাকে বললাম।
উনিই আমাদের ব্যতিক্রম এবং টাকা বাঁচানোর বুদ্ধিটা বলে দিলেন। ( এ জন্যই আমার এই পোষ্টটা ব্যতিক্রম )
আমার পাঁচ জনে ৭৫ টাকা খরচ করে খুব সহজেই নাকি লালাখাল যেতে পারি। টমটমে (ইজি বাইক) চড়ে লালাখালের এপার পর্যন্ত নামিয়ে দিয়ে আসবে। পরে জনপ্রতি দু'টাকা হারে নৌকা দিয়ে ওপারে গেলেই কথিত সেই লালাখাল ! আসলে লালাখালের বিশেষ আকর্ষণ হচ্ছে এর পানি।
ইজি বাইক চড়ে গেলে নদীর নীল পানি কিভাবে দেখবেন কিংবা নদীর পাড়ের সুন্দর দৃশ্য কিভাবে দেখবেন, এসব প্রশ্ন মনে আসতে পারে। কোন চিন্তা নাই.... ইজি বাইক প্রায় নদীর তীর ঘেঁষেই যায় তাই বাড়তি আরো সৌন্দর্য দেখতে পারবেন। ইজি বাইক থামিয়েও ছবি তুলতে পারেন।
নিচের ছবিটা ইজিবাইক থেকে তোলা--
নৌকার জার্নি বাতিল করে ইজি বাইক দিয়ে পৌঁছলাম আমরা লালাখাল।
তারপর জনপ্রতি ২ টাকা হারে নৌকা দিয়ে ওপারে গেলাম।
এবার কিছু ছবি দেখি---
চা বাগানটা লালাখালের ভিতরে...
রাস্তা হারিয়ে শেষ পর্যন্ত ডেঞ্জারাস এই খালটা পেরোতে হয়েছে। ডেঞ্জারাস এই কারণে বলছি কারণ জায়গাটা অনেক পিচ্ছিল ছিল। যেকোন মুহূর্তে পা পিছলে যেতে পারতো।
তিনজনের পেরোনো শেষ। জুতা হাতে নিয়ে সামনে আমি আর আমার আরেক বন্ধু
লালখাল চক্কর-টক্কর মেরে এবার আমাদের যাবার সময় হয়ে এলো। যাওয়ার সময় কম খরচে একটা নৌকা পেয়ে গেলাম.....সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাইলাম না।
পোষ্টটার সমাপ্তি টানতে চাই ফেরার পথে শেষ বিকেলের দুটো ছবি দিয়ে ---
**************************************************************
ভালো থাকুন সবাই
**************************************************************