somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

[ফিরে দেখা] মুস্তফা মনোয়ার - দুই দেশের দুই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে তাঁর নির্ভিক কিন্তু দৃঢ় দু'টি প্রতিবাদ (১৯৭১ এবং ১৯৮৯)

২৯ শে জুলাই, ২০১১ ভোর ৫:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
পোস্ট উৎসর্গঃ ব্লগার শুকনা মরিচের পুত্র আরদি*



মুস্তফা মনোয়ারের সংক্ষিপ্ত জীবনী

প্রতিবাদ একঃ ১৯৭১ সালের ২৩শে মার্চ। পাকিস্তান দিবস । এই দিনে সারাদেশে পাকিস্তানের পতাকা উড়ানো হতো এবং প্রেসিডেন্ট বা গভর্নর সামরিক বাহিনীর কুচকাওয়াজ বা অভিবাদন গ্রহণ করতেন। গুরুত্বের দিক থেকে এই দিনটাকে আমাদের বিজয় দিবসের তুলনা করা যায়। তৎকালীন পিটিভি বাংলার অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপক মুস্তফা মনোয়ার পাকিস্তান সরকারের বৈষম্যমুলক আচরনের প্রতিবাদ হিসেবে এই দিন টেলিভিশনে পতাকা না দেখানোর সিদ্ধান্ত নেন।

প্রতিদিন রাত ১১:৫৫ মিনিটে সব অনুষ্ঠান শেষ করার পর জাতীয় সঙ্গীত সহযোগে পতাকা প্রদশর্নপূর্বক সেদিনের কার্যক্রম শেষ করা হত। মুস্তফা মনোয়ার সেদিন অন্য সব অনুষ্ঠান শেষ হবার পরও গান ইত্যাদি দিয়ে দীর্ঘ সময় অনুষ্ঠান চালিয়ে যেতে থাকেন শুধুমাত্র এই ২৩শে মার্চকে এড়ানোর জন্য। তৎকালীন পিটিভি কার্যালয় ডিআইটি বিল্ডিং এ পাহারারত সেনাবাহিনীর লোক বার বার এসে দেখে যাচ্ছে, বোঝার চেষ্টা করছে কেন আজ যথাসময়ে শেষ হচ্ছে না। অবশেষে ঘড়ির কাঁটা রাত বারটা পার হলো, ২৪শে মার্চ চলে আসল। রাত ১২:৪৫ এর দিকে যথানিয়মে পতাকা প্রদর্শন করে অনুষ্ঠান শেষ করা হয়।

প্রতিবাদ দুইঃ ১৯৮৯ সালের ২৫শে ডিসেম্বর। বাংলাদেশ টেলিভিশন মহা ধুমধামে তাদের রজত জয়ন্তী উৎসবের আয়োজন করে। রাস্ট্রপতি এরশাদ ২৫ তারিখ সন্ধ্যায় রামপুরাস্থ বিটিভি ভবনে এক জাঁকজমকপূর্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সাতদিন ব্যাপী এই উৎসবের উদ্বোধন করেন। উৎসব উপলক্ষে ভবনের মেইন গেটের পাশেই মুস্তফা মনোয়ারের সরাসরি তত্বাবধায়নে একটি স্থায়ী বড় আকারের ম্যুরাল নির্মান করা হয় বাংলার সংস্কৃতির উপর থিম নিয়ে।

বিশিষ্ট কবি (?!) এরশাদের লেখা দু'টি গান তার গোটা শাসনামল জুড়ে বোধহয় কয়েক হাজার বার বিটিভিতে প্রচারিত হয়েছে, দেশাত্মবোধক গান 'নতুন বাংলাদেশ গড়ব মোরা, নতুন করে আজ শপথ নিলাম' এবং ৮৮ এর বন্যার উপর লেখা 'তোমাদের কাছে এসে বিপদের সাথী হতে আজকের চেষ্টা আমার'। ম্যুরাল বানানোর খবর শুনেই এরশাদ প্রথম গানটির দুই লাইন এতে যুক্ত করার নির্দেশ দেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ম্যুরালটি রাস্ট্রপতির হাতে উন্মুক্ত করা হয়। তৎকালীন বাংলাদেশের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী এরশাদের বিষ্ময়ের সাথে লক্ষ্য করেন যে তার গান এতে সংযুক্ত হয়নি। ক্ষুদ্ধ এরশাদ মুস্তফা মনোয়ারকে তীব্রভাষায় তিরষ্কার করেন। এর কিছু সময় পরেই মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি ছাড়াও বিটিভির জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে মুস্তফা মনোয়ারের এখানে আলাদাভাবে লিখিত বানী পাঠ করার কথা ছিল। কিন্তু এরশাদের আচরনে অসন্তুষ্ট হয়ে তিনি মঞ্চে তার সামনে গিয়ে বক্তৃতা দিয়ে অস্বীকৃতি জানান। শেষ পর্যন্ত ঘোষনা আসে - 'অনিবার্য কারন বশত মুস্তফা মনোয়ার বক্তব্য রাখতে পারছেন না। আবদুল্লাহ আল মামুন তার ভাষনটি পাঠ করবেন'।

বিটিভি ভবনের পাশ দিয়ে গেলে সহজেই ম্যুরালটি চোখে পড়বে। আজও এটি মুস্তফা মনোয়ারের প্রতিকী কিন্তু দুঃসাহসী প্রতিবাদের সাক্ষ্য দেয় এবং ঘোষনা করে এরশাদের মত নির্লজ্জ স্বৈরাচার কিছুতেই বাংলার সংস্কৃতির অংশ হতে পারে না।

তথ্যসুত্রঃ প্রথম ঘটনাটি খুবই বিখ্যাত। ব্লগারদের অনেকেই জানেন, মুক্তিযুদ্ধের অনেক বই এবং লেখায়ও বিষয়টি এসেছে। আমি প্রথম পড়েছিলাম ১৯৮৬ সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের একাত্তরের দিনগুলি বইতে।

দ্বিতীয় ঘটনাটি এরশাদ সংবাদপত্রের উপর প্রভাব ব্যবহার করে প্রায় ধামাচাপা দিয়ে ফেলে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও তাঁর বক্তব্য না রাখার ব্যাপারটি আলোচিত হয়। আস্তে আস্তে মুখে মুখে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে। এরশাদের পতনের পর বিচিন্তা বা যায়যায়দিন পত্রিকায় এ বিষয়ে একটি রিপোর্ট এসেছিল।

=============================================
* কেন জানি না, বিড়ালের সাথে আমি পিচ্চিদের একটা মিল পাই। মোটামুটি ৩-৪ বছর বয়স পর্যন্ত বাচ্চাদের শরীরের বিড়ালের মতই তুলতুলে থাকে। এজন্যই হয়ত আমি মিল পাই। ব্লগার শুকনা মরিচের ব্লগ জুড়ে তার ছেলের গল্প। প্রথম বাচ্চাকে নিয়ে মায়েদের যে উচ্ছ্বাস থাকে, বাচ্চার আস্তে আস্তে বড় হওয়া আর প্রতিদিনই তার নতুন কিছু শেখা বা নতুন কোন ঘটনা - এসবই শুকনা মরিচের লেখায় ফুটে উঠে। পুতুল নিয়ে খেলতে সব মেয়েই খুব ভালবাসে আর প্রথম বাচ্চাই বোধহয় তাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ পুতুল। ঘটনাচক্রে আরদির কাহিনী আমি প্রথম যে পোস্টে পড়েছিলাম, সেটিও ছিল বিড়াল নিয়ে । যাই হোক। আরদি বাবা, পিচ্চি তোমাকে নিয়ে মায়ের যে উচ্ছ্বাস সেটা হয়ত আর থাকবে না যখন তুমি মোটামুটি বোঝার বয়স হবে। তখন তুমি তোমার মায়ের পোস্টগুলি পড়ে দেখবে অবশ্যই। তোমার বেড়ে ওঠা তার কাছে কত আনন্দের একটা ঘটনা, সেটা তুমি লেখাগুলি পড়লে বুঝতে পারবে। আর সেই লেখাগুলি আমরা যারা পড়েছি, কখনো না দেখেও তোমার জন্য যে ভালবাসা বোধ করেছি, সেই ভালবাসার সবটুকু দোয়া আর শুভকামনা হয়ে তোমার সাথে থাকবে সারাজীবন। ভাল থেকো।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১১ ভোর ৬:৪৮
৩৮টি মন্তব্য ৩৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×