somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার বাবা কেমন?

১৫ ই মে, ২০১১ দুপুর ২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


একজন সন্তানের কাছে তার বাবা-মায়ের স্থান অনেক উঁচুতে, তথাপি সব সন্তান সমানভাবে বাবা-মায়ের মূল্যায়ন করতে পারে না। সে ব্যর্থতা উভয়ের। যদি বাবা-মা শৈশবে সঠিক শিা দিয়ে ছেলেমেয়েদের মানুষ করতে না পারে অথবা সন্তান যদি বাবা-মার দেয়া শিাকে পালন না করে তখনই ব্যত্যয় ঘটে। আমি আজ এমন এক বাবা-মায়ের কথা বলব যা হয়ত যারা জানেন তারা উপলব্ধি করতে পারবেন।

আমার বাবা বাংলাদেশ জামায়েতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী। যার নাম বললে শুধু এই বাংলাদেশেই নয় বরং আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃত হই ও গর্ববোধ করি (গর্ব এই অর্থে যে মানুষ সম্মান করে , তবে মূলত আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি সর্বদা)। আমরা ছয় ভাই বোন; দুই বোন, চার ভাই। আমি সবার বড়, তারপর আবার মেয়ে...। তাই বাবার হৃদয়ে আমার স্থান একটু বেশিই। আব্বু বলেন, “তোরা পাঁচ ভাই বোন এক পাল্লায়, আর তুই আর এক পাল্লায়...।” [যাই হোক আসলে সব সন্তান আদরের, যা আমি নিজে আমার সন্তানদের মা হিসেবে বুঝি] আর এই কারণেই হয়ত বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে কলম দিয়ে কিছু কথা জনসমুে পেশ করা জরুরি মনে করছি। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমরা একটি সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও ইসলামী পরিবেশে বড় হবার সুযোগ লাভ করেছি। আমার মা একজন স্বনামধন্য শিাবিদÑযিনি মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা অধ্য। আমাদের বাবা ও মা একই আদর্শের বিধায় আমাদেরও সেই আলোকে গড়তে চেষ্টা করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ তাদের সেই চেষ্টা বিফলে যায়নি। আমরা ছয় ভাইবোনই স্ব স্ব েেত্র তাদের দেখানো পথ ধরেই ইসলামী আন্দোলনের কাজ আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছি এবং ইনশাল্লাহ আমরণ এই পথেই থাকব। ছোটবেলা থেকেই আমাদের মন মগজে যে জিনিসটার বীজ বপন করা হয়েছে সেই ইসলামের সৌন্দর্য আমরা সার্বণিক অনুভব করি। শত চড়াই উতরাই এর মাঝেও খুঁজে ফিরি আল্লাহর সন্তোষ।

ক’দিন ধরে খুব কষ্ট পাচ্ছি সাম্প্রতিক কিছু বিষয় নিয়ে। জানি এগুলো মুমিনদের জন্য স্বাভাবিক পরীা, তবুও মানুষ তো কার না খারাপ লাগে নিজের বাপের নামে কটুক্তি শুনতে? তাও আবার যেমন তেমন বাবা নয়, আমাদের সাদাসিধে ও সদা বিনম্র উচ্চমার্গের একজন বাবাকে নিয়ে যখন বলে নিজেই অনেক সময় নিজেকে সান্ত্বনা দেই যে “পাগলে কিনা বলে”।

ওরা যখন সংবাদে, মিডিয়াতে হেডলাইন করে ’৭১ এ মানবতা বিরোধী অপরাধের আসামি তখন খট করে কলিজায় আঘাত লাগে যে, যেই মানুষটা বর্তমান সময়ের সবচেয়ে মানবতাবাদী ও মানবদরদি (নিচের বাবা দেখে বলছি যে শুধু তা নয়, একজন পর্যবেক হিসেবে বলছি), তার এলাকার মানুষ সাী, তার পরিবারের সদস্যরা সাী, তার বাসার একজন কাজের লোকও একথা অকপটে স্বীকার করবে যে তার মতো মানুষ হয় না। বাসার ছোট্ট ১টি ঘটনা বলতে চাই, আব্বু যখন খেতে বসেন, বাটির মধ্যে সবচেয়ে ছোট্ট টুকরার মাছ-গোস্ত নিজে নেন আর বার বার জিজ্ঞেস করেন যে বাসার কাজের লোকদের খাওয়া হয়েছে কি না, তাদের কি দেয়া হয়েছে? ইত্যাদি। আরও অনেক ঘটনা আছে যার সবটা আমি লিখে বুঝাতে পারব না এবং দরকারও মনে করি না। কারণ সবকিছু আল্লাহ্ দেখছেন এবং তিনিই এর সঠিক প্রতিদান দিবেন ইনশাআল্লাহ।

আমাদের আব্বুকে কখনোই আমরা গালাগালি বা আমাদের মারধর করতে দেখিনি। সবসময় ধীর স্থির চরিত্রের তিনি। দুনিয়ায় চলতে গেলে মানুষকে তো মাঝে মাঝে কঠোরও হতে হয় কিন্তু আব্বুর মধ্যে সেই কঠোরতা কমই দেখেছি। নিকটজনরা অনেক সময় ঠাট্টা করে বলে উনি তো দুনিয়ার জন্য তৈরি হয়নি।

গত ৫ মে ২০১১ সেফ হোমে জিজ্ঞাসাবাদের নামে আমার বাবাকে যে মানসিক টর্চার করা হয় তার মধ্যে ১টি প্রশ্ন ছিল “আপনার সন্তানরা আপনাকে ঘৃণা করে না?” আমি বলতে চাই যিনি এ প্রশ্নটি করেছেন সম্ভবত তার সন্তানেরা তাকে ঘৃণা করে আর তিনি সেই ঢ়বৎপবঢ়ঃরড়হ নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। আমরা আমাদের বাবাকে ফেরেস্তার চেয়েও ভাল জানি, কারণ ফেরেস্তাদের স্বাধীনতা নেই খারাপ কাজ করার কিন্তু মানুষের আছে। যদি মানুষ এই স্বাধীনতাকে আল্লাহর দেয়া বিধান অনুযায়ী পড়হঃৎড়ষ করে তাহলে সে ফেরেস্তার চেয়েও ভাল হতে পারে।

আমরা ’৭১ দেখিনি, মুক্তিযুদ্ধও দেখিনি তবে বর্তমানকে দেখছি, ইতিহাসও পড়েছি। কারও হধঃঁৎব বদলায় না। যারা বর্তমানে ভালোমানুষ হিসেবে পরিচিত, যাদের দ্বারা এই ৪০ বছরে একটিও কুকর্ম সাধন হয়নি তারা কি হঠাৎ বদলে গেছে? আর যারা বর্তমানে প্রতিনিয়ত অন্যায় করে বেড়াচ্ছে তারা কি তখন খুব ভালো ছিল? কখখনো না-কয়লা ধুলে ময়লা যায় না। ভালোরা সবসময়ই ভালো।

আমার বাবকে আজকে যারা গালি দিচ্ছেন তারাও এক সময় একই মঞ্চে রাজনীতি করেছেন। তারা ভালো করেই জানেন ব্যক্তি উনি কেমন। দ্বন্দ্ব শুধু আদর্শিক। কাজেই বিবেককে তালা মারবেন না তাহলে ১দিন বিবেকের দংশনেই শেষ হবেন।

পৃথিবীতে বহু ভালো মানুষের আগমন হয়েছে আরও হবে। ইতিহাস সাী যে প্রত্যেক সফল ব্যক্তিরাই কুচক্রিদের ঈর্ষার শিকার হয়েছে। আমার আব্বুও এর ব্যতিক্রম নয়। তার সাফল্য ও খ্যাতি দেখে যারা ঈর্ষান্বিত হয়ে জঘন্য চক্রান্ত ও মিথ্যাচার করছেন, তারা প্রকারান্তরে নিজেদেরই তি সাধন করছেন।

দুনিয়াটা ণিকের। কেউই আমরা চিরদিন এ পৃথিবীতে থাকবো না। থাকবে আমাদের কর্মকাণ্ড। তাই জোর আবেদন এই যে এমন কিছু করবেন না যা ইতিহাসে কলঙ্ক হয়ে থাকে। বর্তমান সরকার ও তার দোসরদের বলছি এমন কিছু করুন যা ইতিহাস ও বর্তমান প্রজন্মের শ্রদ্ধা জাগায়, স্মরণ করে স্বর্ণারে।



তথাকথিত প্রগতিশীলদের পিতা সন্তানের যে সম্পর্ক আমরা এ সমাজে দেখতে পাই আমাদের অবস্থা সে রকম নয়। আলহামদুলিল্লাহ, আজকে আমার এই বয়োবৃদ্ধ বাবা আমাদের নিয়ে সন্তুষ্ট। সেদিন জেলখানায় দেখা করার সময় তিনি আম্মুকে বলেছেন, “তুমি আমার ছয়টা সোনার টুকরা ছেলে-মেয়েদের দেখে রেখ।” আমাদের বাবার কাছে আমাদের কোন দুনিয়াবী চাওয়া পাওয়া নেই, তার ভালোবাসা ও দোয়ায় আমরা সিক্ত ও সন্তুষ্ট। আর আমাদের বাবাও আমাদের কাছে অনন্য ও পরম ভালোবাসার ও শ্রদ্ধার। এ মুহূর্তে আর কিছু না হোক এ দোয়াই সার্বণিক করি “রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি সগিরা।”

-“হে আল্লাহ, তুমি আমাদের পিতামাতার প্রতি সেরকম রহমত কর যেরকম তারা আমাদের শৈশবে আমাদেরকে করেছেন।” আমিন।

মহসিন ফাতেমা।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×