বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফেসবুক পেজ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে এবং ড. ইউনূস এতে সম্মতি জানিয়েছেন। এটি একটি ভালো খবর এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে আমরা ড. ইউনূসকে স্বাগত জানাই।
গত কদিন আমি হাসান কালবৈশাখী এবং আওয়ামী-পন্থী যেসব ব্লগার আছেন, যেমন সোনাগাজী, নূর আলম হিরণ, মোহাম্মদ গোফরান বা কামাল১৮, তাদের বক্তব্যকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেছি। আবার বিএনপি-পন্থী ব্লগারদের বক্তব্যগুলো গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি। এখন সময় হয়েছে বিষয়টিকে সম্পূর্ণ উল্টো করে নেওয়ার। অর্থাৎ এখন সময় হয়েছে আজকের পরাজিত শক্তি আওয়ামী-পন্থীদের কথাকে গুরুত্ব দেওয়ার এবং বিএনপি-পন্থী, বিশেষ করে যেগুলো ছাগলের মতো অকারণে নৃত্য করছে তাদের সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করার।
হাসান কালবৈশাখী তার একটি মন্তব্যে লিখেছেন, "প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, আলোচনায় ছিলেন জামায়াতের আমির, বিএনপির শীর্ষ নেতা, জাতীয় পার্টির নেতা, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মামুনুল হক, জোনায়েদ সাকি।"
আমারও প্রশ্ন হলো, নিষিদ্ধ ঘোষিত দল জামায়াতের আমির কিভাবে এই আলোচনার অংশ হতে পারে? আমরা বাংলাদেশকে তালেবানি বা শরিয়াভিত্তিক রাষ্ট্র বানাতে চাই না। আমাদের প্রয়োজন ন্যায়ভিত্তিক সমাজ এবং বৈষম্যবিহীন শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এমন একটি রাষ্ট্র যেখানে মানুষের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে, মানুষের চিন্তা-বুদ্ধি এবং বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত হবে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত জন প্রতিনিধিরা যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে মানুষের কল্যাণকর আইন প্রণয়ন করবে। আকাশ থেকে নেমে আসা প্রত্যাদেশ বা দৈববাণী নয়, যুক্তি-বুদ্ধি এবং তর্ক-বিতর্কের মাধ্যমে দেশের জনগণের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
তাই এই অপশক্তিগুলোকে প্রতিহত করার সময় এসেছে। শরিয়াতন্ত্রের ভিত্তিহীন ভাবনা থেকে রাষ্ট্রচিন্তাকে আলাদা করে রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। সেকারনে রাষ্ট্র ও জনকল্যাণের যেকোনো আলাপ-আলোচনা থেকে ইসলামিস্টদের বিরত রাখা প্রয়োজন। ধর্মপরায়ণ মানুষকে ধর্মপালনের সকল সুযোগ দিতে হবে এবং রাষ্ট্রে যাতে তারা নিরাপদ বোধ করে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু ধর্মান্ধদের পরামর্শে যদি রাষ্ট্র চলে তবে সে রাষ্ট্রের পরিনতি হবে শোচনীয়।
ফেসবুক খুলতেই দেখলাম বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে আগুন দিয়েছে দুষ্কৃতিকারীরা। আগুন দিয়েছে মাশরাফি বিন মর্তুজার নড়াইলের বাড়িতে। গণভবন থেকে লেপ-তোষক-জামা-কাপড়, হাস-মুরগি সবকিছু চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে মানুষ। একজন কে দেখলাম নারীর অন্তর্বাস হাতে নিয়ে পোস্ট দিয়েছে। তাই অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে তালেবানি শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার একটি সুযোগ পেয়েছে। এদেরকে প্রতিহত করাটা এখন সবচেয়ে জরুরী। সংখ্যালঘুদের বাড়ি ঘর দোকানপাটে ছাত্রলীগ আগুন দিচ্ছে, এটা বলে অন্ধ হয়ে থাকার সময় এটা নয়। ধর্মান্ধ জঙ্গিদের থেকে আমাদের খুবই সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে আমি সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলন হিসেবে দেখছি যা চালিয়ে যেতে হবে। আমি চাই না তারেক জিয়া দেশে ফিরে ক্ষমতা গ্রহণ করুক। সেটা ঘটলে দেশ সেই পুরাতন আবর্তে আবার ফিরে যাবে। নতুন বোতলে পুরানো মদ নয়, এখন বোতলটাকেই পাল্টাতে হবে। এটা খুবই কঠিন একটি কাজ আর এই কাজটা শুধু ছাত্রদের নয়, এই কাজ সিভিল সোসাইটি, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, আমলাসহ সকল পেশাজীবীদের।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০২৪ রাত ৯:৩৪