সেই মেয়েটির গল্প বলি। রাশনা। বাবা মা ডাকে রাশু বলে,আমরা কখনো রাশনা কখনো ওর নামটা একটু পরিবর্তন করে বাসনা। আমাদের কথা শুনেই ওর হাসির বেগ বেড়ে যায়। বন্ধুত্বের দাবী নিয়ে বন্ধুকে অনেক কিছুই বলতে পারি বলা যায়। অনেক সন্ধ্যাবেলা জানালা দিয়ে রাশনা আকাশ দেখতো। ক্যাডেট কলেজের চারদেয়ালের মধ্যে বন্দী হয়ে সীমাহীন মুক্ত আকাশ। কখনো সখনো ওর খুব কাছে চলে যেতাম। পেছন থেকে চোখ চেপে বলতাম,রাশনা একটু তুই হাসনা। রাশনাটা হাসতো। মুচকি হেসে ওর মনটা আবার খাবার হয়ে যেত। শুধু একটা অগভীর দীর্ঘশ্বাস শেষ বিকেলের আকাশের সাথে মিশে অচেনা এক আবহ তৈরি করতো। চেনা আকাশ অচেনা দুঃখী মেঘ গুলোকে বিদায় দিয়ে সন্ধ্যা নামাতো। রাশনার চোখেও নামতো সন্ধ্যা,সীমাহীন শুন্যতা নিয়ে। প্রথম প্রথম হয়তো কিছু বুঝতাম না। অত্যন্ত চাপা স্বভাবের এই মেয়েটা কিছু বলতেও চাইতোনা। পরীক্ষার কিছুদিন আগে জানলাম ওর অত্যন্ত কঠিন কিছু একটা হয়েছে। ওর মস্তিষ্কের টিশ্যু গুলো মানষিক বিষাদে বিপর্যস্ত। ডাক্তারী ভাষায় যার নাম BRAIN HAEMMORHAGE. রাশনার অসহায় চোখের গভীর মমত্ব আর শুকিয়ে যাওয়া ঠোঁটের বিষন্ন হাসি তখন অনেকটাই ম্লান। মাপা হাসি দিয়ে চাপা কষ্টটাকে লুকিয়ে বলল,কিছুনারে দোস্ত। ঠিক হয়ে যাবে।
এরপর থেকে রাশনাকে প্রায়ই আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখতাম। কখনো ঝুম বর্ষা নেমে এলে রাশনা করিডোরে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখতো আর গাইত,আমি চিরতরে দূরে চলে যাবো তবু আমারে দেবনা ভুলিতে. . . .
তখন জানতাম না রাশনাটা ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যখন জানলাম তখন রাশনা ঢাকা মেডিকেল কলেজের কোন এক আবদ্ধ কেবিনে বসে মৃত্যুর প্রহর গুনছে। যেখানে নেই অনন্ত আকাশ,জোছনা কিংবা ঝুম বৃষ্টি দেখার কোন সুযোগ। আর আমরা অসহায় হয়ে শুধুই তাকিয়ে দেখছি ওর চলে যাওয়ার দৃশ্য। অনন্ত অসীমের পথে।
রাশনা,তুই হয়তো জানিস ও তোকে বাঁচাতে মাত্র চল্লিশ লক্ষ টাকা লাগে। দেখলি কি সহজে মাত্র শব্দটা ব্যবহার করলাম। তোর জীবনের কাছে এই টাকাটা কি খুব বেশি? বাংলা নামের এই মাও আজ খুব বেশি অসহায়। যে মা ত্রিশ লক্ষ ছেলেকে বিসর্জন দিতে পারলো সে আজ চল্লিশ লক্ষ টাকার জন্য একটি জীবন বাঁচাতে পারছেনা। কত অক্ষমতা আমাদের। তোকে পাড়ি জমাতে হবে বিদেশে। তোর চিকিত্সার জন্য। রাশনা, আমরা আকাশ নই মানুষ। আমাদের সীমাবদ্ধতা অনেক তাই আমরা হাত পাতি। আমরা হাত পেতে সাহায্য চাই,বুক পেতে ভালোবাসা নেই। আমরা আমাদের সমস্ত ভালোবাসা দিয়ে তোকে ফিরিয়ে আনবো মৃত্যুর মুখ থেকে। আমরা প্রমান করবো ভালোবাসার কাছে টাকার মূল্য নিতান্তই সামান্য। তুই আবার আকাশ দেখবি।রাশনা, আমরা জানি আরো কিছুদিন তোর বাঁচার বড় ইচ্ছে। এই মুক্ত পৃথিবীর পথে তুই আবার ছুটে চলবি নিজস্ব গতিতে। তুই ভালো হবি,হতেই হবে. . .
ময়মনসিং গার্লস ক্যাডেট কলেজের মেধাবী ছাত্রী রাশনা। BRAIN HAEMMORHAGE এর কারনে ভর্তি হয়ে আছে ঢাকা মেডিকেল কলেজে। চল্লিশ লক্ষ টাকা দরকার ওর চিকিত্সায়। আমার সাবস্ক্রাইবার ও বন্ধু মিলিয়ে মোট পাঁচ হাজার। একশ টাকা করে দিলেও পাঁচ লক্ষ টাকা। যে টাকায় আবার সেড়ে উঠবে রাশনা। একদিন না হয় মুঠোফোনে নাইবা কথা বললাম। নাইবা খেলাম দামী কোন রেস্টুরেন্টে। তবুও যদি রাশনা ফিরে আসে। সবার কাছে সাহায্যের হাতে বাড়িয়ে দিলাম। রাশনাকে সাহায্য করার ঠিকানা,
shahida parvin
account number: 0042-0310002467
Trust bank,tongi branch
রাশনা ফিরে আসুক আমাদের মাঝে। আবার আকাশ দেখুক পুরোটা চোখ জুড়ে. . . .
মূল লেখকঃ রাব্বি আহমেদ
১. ১৮ ই নভেম্বর, ২০১২ সকাল ৯:২০ ০